বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কি খামো সেই চিন্তা করোছি, ঈদ কোটে পান?

  •    
  • ৩০ এপ্রিল, ২০২২ ২২:০১

ইউএনও ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, ‘বড়বালা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। থাকার জায়গা হারিয়েছে অনেক পরিবার। ঘরে খাবার নেই। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা ঈদের কেনাকাটা করতে পারছে না। আমরা যতটুকু পারি তাদের হেল্প করেছি।’

হামার ঈদ নাই। সউগ শ্যাষ হয়্যা গেইচে। কালবৈশাখী হামার ঈদ কাড়ি নেচে। কি খায়া বাঁচমো, সেই চিন্তা করোছি। ঈদ ফির কোটে পান।

কথাগুলো বলছিলেন মিঠাপুকুর উপজেলার তরফবাহাদী গ্রামের দিনমজুর লুৎফর রহমান। গত মঙ্গলবার আঘাত হানা এক কালবৈশাখী পুরো গ্রামটিকেই তছনছ করে গেছে।

সেই স্মৃতি মনে করে লুৎফর বলেন, ‘সেদিন হঠাৎ করি বাতাস শুরু হইল। সেই বাতাস! গাছটাছ সউগ উল্টে গেইছে। বাড়িঘর কিচ্ছু নাই। একটা ঘর আচিল সেটাও টিনের চাল উড়ি নিয়ে গেইছে।’

লুৎফর জানান, তার এক ছেলে আর এক মেয়ে থাকলেও এই ঈদে তাদের কিছু কিনে দিতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘মোর ঈদটেয় মাটি, ছাওয়া গুলের মুকের দিকে তাকা যায় না।’

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রংপুরের মিঠাপুকুরে মাত্র কয়েক মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের বারোঘরিয়া, তরফবাহাদী গ্রামের দক্ষিণপাড়া, মন্ডলপাড়া, নয়াপাড়া, কেশবপুর, তরফ গঙ্গারামপুরসহ ৪টি গ্রাম। ক্ষতি হয়েছে বাড়িঘর, গাছপালা, ধান, ভূট্টাসহ বিভিন্ন ফসলেরও।

শুক্রবার সরেজমিনে তরফবাহাদী নয়াপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে দেখা গেছে, কালবৈশাখীর ক্ষত এখনও মুছে যায়নি। ঝড়ে টিন বেড়া উড়ে যাওয়া কাঁচা-পাকা ঘরগুলো মেরামত করছেন মানুষজন। অনেকে এখনও অন্যের বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন। ভেঙ্গে যাওয়া ঘর মেরামত করে চেষ্টা করছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। সবমিলে দুর্দশায় দিন কাটছে তাদের।

রংপুরের মিঠাপুকুরে কালবৈশাখীতে তছনছ চারটি গ্রাম

এ অবস্থায় দুদিন পর ঈদ থাকলেও তার কোনো আমেজ নেই গ্রামগুলোতে।

তরফবাহাদী গ্রামের দিনমজুর লুৎফর রহমানের মেয়ে সুমি বলেন, ‘কয়দিন আগোত আব্বা কইসে নয়া জামা আনি দিবে। এলা কয়, ঘর আগোত ঠিক করি পরে দেমো।’

তরফবাহাদী দক্ষিণপাড়া গ্রামের আফরোজা বেগম জানান, হঠাৎ করে আঘাত হেনেছিল কালবৈশাখী। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার বাড়ির টিন উড়ে গিয়েছিল। সেই টিন তিনি আর কোথাও খুঁজে পাননি। নতুন টিন কেনারও পয়সা নেই।

নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক নুরনবী মিয়া বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার বাড়ি-ঘরের কাজ শেষ হয়েছে। এই ঝড়ে তিনটি নতুন ঘর তছতছ করে দিয়েছে। ঘরের চালা উড়ি নিয়ে গেইছে। গাছপালা সব ভেঙ্গে পড়েছে। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’

তরফবাহাদী গ্রামের নাজির হোসেন জানান, ১ বিঘা জমিতে তিনি ভূট্টা চাষ করেছিলেন। কিন্তু ঝড়ে গাছগুলো ভেঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। ধার দেনা করি আবাদ করছি, এলা ধার শোধ করমো কেমন করি। সউগে লস। বাতাসে কপাল নিয়ে গেইছে।’

শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

নিউজবাংলাকে ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, ‘বড়বালা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। থাকার জায়গা হারিয়েছে অনেক পরিবার। ঘরে খাবার নেই। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা ঈদের কেনাকাটা করতে পারছে না। আমরা যতটুকু পারি তাদের হেল্প করেছি। তালিকা করা হয়েছে আরও সহযোগিতা করা হবে।’

এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। সহযোগিতাও করা হয়েছে এবং আরও করা হবে। আমরা এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

এ ছাড়া রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘বেশ কিছু এলাকায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমরা তাদের তালিকা করছি। তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর