সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটকবাহী নৌকায় করা হয়েছে নতুন রং। পরিষ্কার করা হয়েছে সিলেটের হোটেলগুলো। জাফলংয়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পর্যটকদের জন্য সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানাচ্ছে পর্যটন পুলিশ।
এ প্রস্তুতি এবারের ঈদে সিলেটে পর্যটক বরণের। ঈদের ছুটিতে সিলেটে পর্যটক ঢল নামার আশা সংশ্লিষ্টদের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের ঈদগুলোয় করোনার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তার অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে এবার। ইতোমধ্যে সিলেটের বেশির ভাগ হোটেলের রুমও বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
তবে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বলছে, এবার সিলেটে প্রচুরসংখ্যক পর্যটক এলেও তাদের বেশির ভাগই সিলেটে থাকবেন না। তাদের মতে, এবার দীর্ঘদিন পর ভারতের পর্যটক ভিসা চালু হয়েছে। তবে অনেক পর্যটকই সিলেটে এসে ভারতের শিলংয়ে চলে যাবেন।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। গত ঈদেও টাঙ্গুয়ায় ঢল নেমেছিল পর্যটকদের। এবারও টাঙ্গুয়ায় বিপুলসংখ্যক পর্যটক ভিড় করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বৃহস্পতিবার টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকবাহী ‘রাজার তরী’ নৌকায় রং করছেন শ্রমিকরা।
রঙের কাজ করা শ্রমিক সুলেমান মিয়া বলেন, ঈদের সময় পর্যটক আইবো। এর লাগি নাও রং করা চলের (চলছে)।’
পর্যটকবাহী নৌকা আছে নুর মিয়ার। তিনি বলেন, ‘ইবার (এবার) বউত (অনেক) পর্যটক আইবা। এর লাগি নাও ঠিক কররাম (করলাম)।’
যেকোনো ছুটিতেই পর্যটকদের ভিড় থাকে সিলেটে। ঈদের ছুটিতে পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে। সিলেটের রাতারগুল, জাফলং, বিছনাকান্দি, লালাখাল, পাংথুমাই, চা বাগানসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় থাকে পর্যটকদের। এবার ঈদের ছুটি ছয় দিনের। তাই এই ছুটিতে পর্যটক সমাগম আরও বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে হোটেলগুলোর বেশির ভাগ রুমও বুকিং হয়ে গেছে।
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার গোল্ডেন সিটি হোটেলের ব্যবস্থাপন মলয় দত্ত মিষ্ঠু বলেন, ‘৪ থেকে ৮ মে পর্যন্ত আমাদের হোটেলের সবগুলো কক্ষই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এখনও অনেকে যোগাযোগ করছেন। আমরা রুম দিতে পারছি না।’
সিলেটের বড় হোটেলগুলোর বেশির ভাগেরই সবগুলো কক্ষ এরই মধ্যে বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এবারের ঈদের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় পর্যটক সমাগম বেশি হবে বলে মনে করছেন তারা।
নগরের মিরবক্সটুলা এলাকার সিলেট ইন হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকির হোসেন চৌধুরী তার হোটেলের বেশির ভাগ কক্ষই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে জানিয়ে বলেন, ‘এবার করোনার প্রকোপ নেই। ছুটি দীর্ঘ। এ ছাড়া সিলেটের আবহাওয়াও এখন বেড়ানোর জন্য উপযোগী। এখানে গরম কম। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে এবার সিলেটে প্রচুর পর্যটক আসবেন।’
এবারের ঈদে গত দুই বছরের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে জানিয়ে সিলেট হোটেল-মোটেল রেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমাত নুরী জুয়েল বলেন, ‘সিলেটে সব ছুটিতেই পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের সময়ে তা বাড়ে। তবে গত দুই বছর করোনার কারণে পর্যটক ছিল না। ফলে আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ি। আশা করছি এবার সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের বরণে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলেছি।’
টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটকবাহী নৌকায় করা হয়েছে নতুন রং। ছবি: নিউজবাংলা
তবে ভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন সিলেট চেম্বারের সভাপতি ও নগরের হোটেল নির্ভানা ইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহমিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এবার সিলেটে প্রচুর পর্যটক আসবেন বটে। তবে তারা সিলেটে থাকবেন না। ভারতীয় ভিসা চালু হওয়ায় সিলেট হয়ে বেশির ভাগই শিলং চলে যাবেন। তাই পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আশানুরূপ ব্যবসা হবে না।
‘পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকা, নিরাপত্তাহীনতা, নাজুক যোগাযোগব্যবস্থার কারণে দেশে পর্যটক ধরে রাখা যাচ্ছে না। সচ্ছল লোকজনই ছুটি পেলেই ভারতে চলে যাচ্ছেন।’
পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে সিলেট ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রহিম শেখ বলেন, ‘সব পর্যটন কেন্দ্রে আমাদের নিয়মিত টহল থাকবে। এ ছাড়া জাফলং ও বিছানাকান্দিও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় যাতে পর্যটক না যান এ জন্য সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।
‘সবগুলো নৌকায় লাইফ জ্যাকেট রাখার কথা বলা হয়েছে। সাঁতার না জানলে কাউকে পানিতে নামতেও আমরা নিরুৎসাহিত করব।’