এবারের ঈদের ছুটি বেশি থাকায় ও ভিড় এড়াতে আগে থেকেই রাজধানী ছেড়েছেন অনেকেই। তবে জীবিকার কারণে যারা আগে যেতে পারেননি শেষ মুহূর্তে তারা যাচ্ছেন।
গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সারা দিন যাত্রী চাপ কম থাকলেও সন্ধ্যার পর চাপ কিছুটা বেড়েছে।
তবে বাসের টিকিট নিয়ে ভোগান্তি চোখে পড়েনি। অনেকেই কাউন্টারে এসেই পাচ্ছেন টিকিট।
দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা যারা আরিচা ঘাট হয়ে যাচ্ছেন তাদের অনেকেই যানজট এড়াতে ভেঙে ভেঙে ঘাটে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন দূরপাল্লার যাত্রীরা ঝামেলা ছাড়াই কাউন্টার থেকে এসি ও ননএসি বাসের টিকিট কেটে নিজেদের গন্তব্যে যাত্রা শুরু করতে পারছেন।
শনিবার বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গাবতলী টার্মিনাল এলাকায় এমন চিত্রের দেখা মিলেছে।
গাবতলী থেকে কুড়িগ্রাম পর্জন্ত বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৮১০ টাকা। কুড়িগ্রামের আগে যেকোনো জায়গায় নামলেও গুনতে হচ্ছে একই ভাড়া।
গাবতলী বিআরটিসির কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, মাইকে যাত্রীদের ডাকা হচ্ছে। বাস ফাঁকা।
বেলা তিনটায় সেখানের টিকিট বিক্রেতা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, ‘যাত্রীর চাপ নাই। সকাল থেকে কুড়িগ্রাম ডাবল ডেকার বাস ছেড়ে গেছে মাত্র দুটা। এখন কিছুটা যাত্রী দেখা যাচ্ছে। ঈদে যানজটের ভয়ে মানুষ আগেই বাড়ি চলে গেছে। তাই এই অবস্থা।’
ঢাকা-কুষ্টিয়ার সৌহার্দ্য পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা পলাশ মিয়া গাবতলি টার্মিনালে দাঁড়িয়ে মানুষকে ডেকে ডেকে টিকিট বিক্রি করছিলেন।
ঈদের সময় টার্মিনালে দাঁড়িয়ে মানুষকে ডেকে এনে টিকিট বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাত্রী নাই। কুষ্টিয়া এলাকার যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে বাড়ি যাচ্ছে। তারা গাবতলি থেকে লোকাল বাসে ঘাটে যাচ্ছে। ঘাট পার হয়ে আবার লোকার বাসে বাড়ি যাচ্ছে। এ কারণে আমরা যাত্রী পাচ্ছি না।’
গাবতলী কাউন্টারের শ্যামলী পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা আমিনুর রহমান, ‘এবার ছুটি বেশি থাকায় চাপ কম। মানুষ ধীরে বাড়ি যাচ্ছে। অন্য সময় অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে যেত। এবার সব সময় টিকিট দিতে পারছি। এখন এসে টিকিট চাইলেও দিতে পারছি।’
দিনাজপুর যাওয়ার জন্য গাবতলী এসেছেন সিরাজ মিয়া। টিকিটও কেটেছেন শ্যামলী পরিবহন থেকে আজকেই।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আজকে এসেই টিকিট কাটলাম। ভেবেছিলাম লোকাল বাসে যাওয়া লাগে কি না। এখন দেখছি যাত্রীর চাপ কম। শুনলাম রাস্তায়ও এবার যানজট নাই বললেই চলে।’
গাবতলী থেকে নড়াইলের যাচ্ছেন রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘শুনলাম ঘাটে কিছুটা চাপ আছে। তবে গাবতলী দেখে এ রকম মনে হচ্ছে না। দুই বছর আগে ঈদের ছুটিতে যখন বাড়ি গেছিলাম, তখন যে চাপ দেখেছিলাম, তার কিছুই নেই এবার।’
গাবতলী টার্মিনালে র্যাব, পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এ তিনটি বুথ থেকেই আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে গাবতলীর।
পুলিশের বুথে দায়িত্বরত কর্মকর্তা দারুসসালাম থানার এএসআই আব্দুল আলিম বলেন, ‘সকাল থেকে যাত্রীর তেমন চাপ নাই। যাত্রী কম। এই প্রথম দেখলাম কোনো চাপ ছাড়া গাবতলী।
‘কোনো চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনাও নাই এবার। সবাই শান্তিমতো বাড়ি যেতে পারছে। সারা দিন পরে বিকেল থেকে কিছুটা যাত্রী দেখা যাচ্ছে।’
গাবতলী ব্রিজের আগে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট মো. ফয়সাল বলেন, ‘গাড়ির ইনকামিং-আউটগোইং দুটোই ভালো আছে। কোনো যানজট নাই। যাত্রী সারা দিন তেমন একটা দেখা যায় নাই। এখন কিছুটা দেখা যাচ্ছে। তবে যানচলাচল স্বভাবিক।’
গাবতলী থেকে কল্যাণপুর এসে দেখা যায়, যাত্রীর চাপ খুবই কম। কাউন্টারের কর্মীরা জানান, সারা দিন প্রায় ফাঁকাই ছিল, এখন কিছুটা বেড়েছে যাত্রী।
কল্যাণপুর থেকে বগুড়ার যাত্রী ইরফান উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম যাত্রীর চাপ থাকবে, তাই আগে থেকে টিকিট কেটে রেখেছিলাম। এখন এসে দেখি চাপ নেই। কয়েকজনকে দেখলাম আজকে এসে টিকিট নিয়ে আমাদের সঙ্গেই যাচ্ছেন। অন্যান্যবার যানজটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, এখানে এবার স্ত্রী ও সন্তানকে এক সপ্তাহ আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।’
ঢাকা-বগুড়া রোডের মানিক এক্সপ্রেসের কল্যাণপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. রিয়াজ বলেন, ‘আজকে যেরকম যাত্রীর চাপ হবে ভেবেছিলাম সেরকম নেই। সিরাজগঞ্জের আগে নলকা ব্রিজ খুলে গেছে। তাই রাস্তায়ও জ্যাম নাই। জ্যামের ভয়ে অনেকে পরিবারকে আগে পাঠিয়ে দিছে তাই এখন চাপ কম।’
এস আর ট্রাভেলসের কল্যাণপুর কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম পরান বলেন, ‘আহামরি চাপ নেই। অগ্রিম টিকিট যারা নিয়েছিলেন তারাই আসতেছেন। এমনে যাত্রী খুব কম। সারা দিনের পর এখন কিছুটা বেড়েছে যাত্রী।’