বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাভার ও গাজীপুর মহাসড়কে এবারও ‘বাড়তি ভাড়া’

  •    
  • ৩০ এপ্রিল, ২০২২ ২০:২৭

সাভার রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ডে শমসের আলী বলেন, ‘রাস্তায় অতটা জ্যাম না থাকলেও ভাড়া অনেক বেশি চাইতাছে। রংপুরের ভাড়া চাইতাছে ১২০০-১০০০ টাকা। ট্রাক আর বাসের ছাদে আবার ভাড়া কম। ৩০০-৪০০ ট্যাকা হইলেই যাওন যায়।’

সকালে ভিড় কম থাকলেও গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিকেল থেকেই ঈদের ছুটিতে বাড়িমুখী মানুষ বাড়তে শুরু করে। কানায় কানায় ভরে ওঠে বাস কাউন্টারগুলো। যানবাহনের চাপে মহাসড়কের বেশ কিছু পয়েন্টে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে এই যানজটের আকার আরও বড় হতে শুরু করেছে।

এ অবস্থায় সরেজমিন কিছু বিশৃঙ্খলাও চোখে পড়ছে মহাসড়কে। বিশেষ করে কাউন্টারগুলোয় যাত্রীদের টানাহেঁচড়ার পাশাপাশি প্রায় সব রুটেই বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ এসব অনিয়ম প্রতিহত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষগুলোর কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

যাচাই করে দেখা গেছে, চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাটের গাড়িগুলোয় টিকিটপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকার বাস কাউন্টারগুলোয় নরসিংদী, ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে বাসের টিকিটপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে৷ ঈদের আগে ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জনপ্রতি ভাড়া ছিল ১৮০ থেকে ২৪০ টাকা। বর্তমানে ভাড়া বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী ইকোনো পরিবহনে আগের ভাড়া ছিল ২৪০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে নেয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

বাদশা পরিবহনে ১৫০ টাকার ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। কাজী পরিবহনে ৩০০ টাকার ভাড়া বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা।

একই চিত্র পিপিএল, তিতাস, উত্তরাসহ অন্যান্য পরিবহনেও। স্থানীয় ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনের নেতৃত্বে কাউন্টারগুলোয় বাড়তি ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছে একাধিক কাউন্টার কর্তৃপক্ষ।

তবে এ বিষয়ে ওই যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া ছাড়াও যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করারও অভিযোগ উঠেছে বাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আব্দুল গাফফার পরিবার নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেতে টঙ্গী স্টেশন রোডের বাস কাউন্টারে এসেছেন। রিকশা থেকে নেমে কাউন্টারের কাছে যেতেই চার-পাঁচ যুবক তাদের গতিরোধ করে জানতে চান, তারা কোথায় যাবেন। গন্তব্যের কথা জানালে ওই যুবকরা আব্দুল গাফফারের ব্যাগ ধরে টানাটানি শুরু করেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে গাফফার জানান, শুধু এবার নয়, প্রতি বছরই ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় পরিবার নিয়ে কাউন্টারে এলেই এ ধরনের বিপত্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। কাউন্টারের ছেলেগুলো কেউ হাত ধরে টানাটানি করে, কেউবা হাতে থাকা ব্যাগ ধরে টান দেয়।

নরসিংদীগামী সালমা আক্তার বলেন, ‘কাউন্টারের ছেলেগুলো ব্যাগ ধরে টানাটানি শুরু করে। সুযোগ বুঝে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাতেও স্পর্শ করার চেষ্টা করে। বাড়ি যাওয়ার তাড়া থাকে এ কারণে অভিযোগ জানানোর মতো সুযোগও থাকে না। বাসস্ট্যান্ডগুলোয় পুলিশের মনিটরিং টিম থাকলে যাত্রীরা সহজে অভিযোগ জানাতে পারতেন।’

এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বলেন, ‘যাত্রীদের ব্যাগ ও হাত ধরে টানাটানি করা অপরাধ। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউন্টারগুলো বাড়তি ভাড়া আদায় যেন না করে সে জন্য সতর্কও করা হয়েছে।’

এ ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে বোর্ডবাজার থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ময়মনসিংহমুখী সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সালনা বাজার থেকে ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত ঢাকামুখী লেনেও যানজট বাড়ছে। পরিবহনের দীর্ঘ সারি হচ্ছে বাইপাস-বাসন সড়ক ও টঙ্গী-কালিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের স্টেশন রোড এলাকায়।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, ‘বিকেল থেকে যাত্রীর চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। বাসস্ট্যান্ডগুলোয় যাত্রী ওঠানামার কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রাফিক সদস্যরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।’

সাভারে ঘরমুখো পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা

ঢাকার সাভারের দুটি মহাসড়কসহ শাখা সড়কগুলোয় ঘরমুখো পোশাক শ্রমিকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। দুপুরের পর থেকেই তারা যে যার মতো বাড়ির দিকে ছুটছেন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের জটলা ও যানবাহনের চাপ দেখা গেলেও এই রুটে যানজট তেমন চোখে পড়েনি।

তবে এই রুটেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কেই প্রধান ভোগান্তি হিসেবে দাবি করেছেন যাত্রীরা। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার দুপুরে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার অধিকাংশ কারখানা ছুটি হওয়ার পর পরই বিভিন্ন সড়কে ভিড় জমতে থাকে। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বাসস্টপেজগুলোয় পরিবহনের অপেক্ষায় শ্রমিকরা জটলা পাকাতে শুরু করেন।

যানজট তেমন না থাকলেও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ড ও নবীনগর এলাকায় যানবাহনের কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। এ ছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের সংযোগস্থল বাইপাইল ত্রিমোড়েও ছিল যানবাহন ও মানুষের চাপ।

শনিবার দুপুরে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার অধিকাংশ কারখানা ছুটি হওয়ার পর পরই বিভিন্ন সড়কে ভিড় জমতে থাকে

সাভার রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষারত পোশাক শ্রমিক শমসের আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইজ দুপুরে ডিউটি কইরা হেরপর ছুটি অইছে। ব্যাগট্যাগ রাইতেই গুছায় রাখছিলাম। দুপুরে খালি ডিউটি কইরা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিছি। কিন্তু রাস্তায় অতটা জ্যাম না থাকলেও ভাড়া অনেক বেশি চাইতাছে। রংপুরের ভাড়া চাইতাছে ১২০০-১০০০ টাকা। ট্রাক আর বাসের ছাদে আবার ভাড়া কম। ৩০০-৪০০ ট্যাকা হইলেই যাওন যায়।’

আঁখি আক্তার নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘আমার বোইন (বোন) থাকে বাইপাইলে। আমি গেন্ডা থাইকা ওহানে যামু। তারপর অগো সাথে গাইবান্ধা বাড়িতে যামু। কিন্তু গেন্ডা থাইকা লোকাল বাসে বাইপাইলের ভাড়া চাইতাছে ৬০-৭০ ট্যাকা। অথচ এইখানকার ভাড়া হলো ২০ ট্যাকা।’

সাভার ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক ধাপে সাভার শিল্পাঞ্চলে কারখানাগুলো ছুটি হয়েছে। গত দুই দিনে অনেক কারখানার শ্রমিক বাড়ি পৌঁছেছেন। আজ প্রায় অর্ধেক কারখানা ছুটি হয়েছে। এতে সড়কে যানবাহন ও ঘুরমুখো মানুষের চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে কোথাও কোনো যানজট নেই। মানুষ নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রা করতে পারছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর