নওগাঁ ও মেহেরপুরে কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়েছে আমসহ বিভিন্ন ধরনে উঠতি ফসলের মাঠ। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের।
নওগাঁ
কালবৈশাখী ঝড়ে নওগাঁয় আম, ভুট্টা, গম, ধানসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘর-বাড়ি। উড়ে গেছে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা।
শনিবার মধ্য রাতে নওগাঁর বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে দমকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৮০ কিলোমিটার।
আমচাষিরা জানিয়েছেন, ঝড়ে আম বাগানের প্রায় ১০-১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, তারা এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে পারেনি।
জেলার বিভিন্ন আম বাগানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাগানে-বাগানে মাটিতে পড়ে আছে ঝরে পড়া আম। ফেটে নষ্ট হয়েছে অনেক ফল। অনেক বাগানে আম গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে।
ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার ছিল বলে জানিয়েছে নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া কার্যালয়।
নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এ বছর ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। ৫হাজার ২০০ আম চাষির প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বাগান রয়েছে। এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৫ মেট্রিক টন।
এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ আম উৎপাদন হয় পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলায়।
পোরশা উপজেলার সারাইগাছী গ্রামের আমচাষি শফিকুর রহমান বলেন, ‘৩০ বিঘা জমির ওপর আমার দুটি বাগান রয়েছে। ঝড়ে বাগানের দুই হাজার গাছের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আম পড়ে গেছে। বেশ কিছু গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে।
‘আম এখনও পরিপক্ক না হওয়ায় ঝরে পড়া আম ৩-৪ টাকা কেজির বেশি বিক্রি হবে না। আর যেসব আম ফেটে গেছে, সেসব কেউ কিনবে না।’
সাপাহার উপজেলার পাতারী গ্রামের আমচাষি বেলাল হোসেন বলেন, ‘২০বিঘা জমিতে আম চাষ করেছিলাম। প্রায় অর্ধেকের মত আম ঝড়ে গেছে। এতে ব্যাপকভাবে লোকশানের আশংকা করছি।’
পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, ‘পোরশায় এবার ১০ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এবার বাগানে আম ভালো ধরেছিল। তবে রাতে ও চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের ঝড়-বৃষ্টিতে আমের বেশ ক্ষতি হয়ে গেল।
‘গত রাতের ঝড়ে আমের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা যায়নি, তবে কিছু বাগান পরিদর্শন করে ধারণা হচ্ছে, বড় আম গাছের প্রায় ৬ থেকে ৭ শতাংশ আম পড়ে গেছে। আর ছোট গাছের প্রায় ২ থেকে ৩ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে।’
ঝড়ে আম ছাড়াও বোরো ধানের খেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধানগাছ হেলে পড়ায় এবং জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ধান চিটা হয়ে যাওয়া এবং পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এতে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
রাণীনগর উপজেলার তিলাবদুর গ্রামের কৃষক নরেন চন্দ্র বলেন, ‘মধ্য রাতের ঝড়ে ধানের শিষ মাটিকে নুইয়ে পড়েছে। এতে করে ফলন কম হবে। হঠাৎ ঝড়ে ক্ষতি হয়ে গেল।’
একই উপজেলার শলিয়া গ্রামের কৃষক তাহেল হোসেন বলেন, ‘১০ বিঘা জমির ধান মাটিতে পড়ে গেছে। এতে করে ফলন কম হবে। আর ধান কর্তনে শ্রমিক খরচও বেশি পড়বে। খুব চিন্তায় আছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘গত রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে নওগাঁয় আম ও ধানের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। নওগাঁর ৭০ ভাগই বাগানই আম্রপালি জাতের আম চাষ হয়েছে। আম্রপালি গাছ আকারে ছোট হওয়ায় ঝড়ে এসব গাছের আম কম পড়েছে। তবে খিরসাপাতি, ফজলি ও গোপালভোগ আমের গাছ বড় হওয়ায় ওই সব গাছের আম বেশি পড়েছে।
‘ছোট-বড় গাছ মিলে গড়ে ৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। এছাড়া ঝড়ে ধানের গাছ হেলে পড়ায় এবং জমিতে পানি জমে থাকায় ধানের উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হবে। আগামী এক-দুই সপ্তাহ আবহাওয়া এ রকমই বৈরী থাকবে। খেতের ৮০ শতাংম ধান পেকে গেলেই আমরা কৃষকদের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি।’
মেহেরপুর
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় বারের মত কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়েছে মেহেরপুরে বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেত। ভুট্টা কলা, লিচু,আম সহ ধানের বেশি ক্ষতির আশংকা করছেন চাষিরা।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ঘণ্টা ধরে চলা বৃষ্টি থামলেও রাতব্যাপী চলে দমকা বাতাস।
এর ফলে কাঁচা ও আধাপাকা ধান ক্ষেতে নুয়ে পড়েছে মাটিতে। যে ধানে এখনো দানা হয়নি সেগুলোতে ফলন কমে যাবে অর্ধেক। বিভিন্ন এলাকায় গাছের ডাল পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে বিদ্যুত সরবরাহ।
ফলের বাগান ব্যাবসায়ী রমিক হাসান নিউজবাংলাকে জানান, তার এ বছর প্রায় ৫৭ বিঘা আমের বাগান নেয়া আছে। সন্ধ্যার পর কালবৈশাখী ঝড়ে অনেক আম ঝরছে। এতে তার প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার মত ক্ষতি হবে।
ধানচাষি আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমার ক্ষেতে থাকা কাচা ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এ ধানগুলো অর্ধেক চিটি হয়ে যাবে। এতে ফসলের ফলন অর্ধেক হয়ে যাবে।’
মেহেরপুর কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক শষ্য কামরুজ্জামান জানান, ঝড়ে বোরো ধান, সহ কলা বাগানের ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না।