পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করবেন, আনন্দে কাটাবেন কয়েকটা দিন। এ চাওয়া থেকেই নানা ভোগান্তি সহ্য করে রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন মানুষ। কষ্টের বিপরীতে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষতে রাজি নন তারা।
ঈদ উপলক্ষে ট্রেনযাত্রার চতুর্থ দিন শনিবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সকালের দিকে মৃদু বাতাস বয়ে যাওয়ায় ভিড় থাকলেও আগের তিন দিনের মতো গরমে কষ্ট করতে হয়নি যাত্রীদের, তবে ভিড়ের কারণে নির্ধারিত আসন খুঁজে বসতে ভোগান্তি সহ্য করেছেন যাত্রীরা।
যারা টিকিট পাননি, তারা কষ্ট করে দাঁড়িয়ে গেছেন, তবে বাড়ি যাওয়ার আনন্দের কাছে বরাবরের মতোই এসব কষ্ট উপেক্ষিত ছিল।
রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ৩৫ মিনিট দেরিতে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে গেছে। ট্রেনটিতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
কথা হয় যাত্রী ফারুক হোসেনের সঙ্গে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এ চাকরিজীবী বলেন, ‘এখনও কষ্টের কিছুই শুরু হয়নি। এয়ারপোর্ট স্টেশনে গেলে বগিতে দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না। তখন কষ্ট বোঝা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘যত কষ্টই হোক, বাড়িতে ফিরতে হবে, এটা আমার এবং আর দশজন মানুষের ভাবনা।’
ফারুকের মতো ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির শুরু গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার। দিনে অফিস শেষে বাড়ি ফেরার তাগিদ ছিল অনেকের। ফলে বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালের দিকে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
দরজায় ঈদ কড়া নাড়ার সময় শনিবারও কমলাপুরে কমেনি ভিড়। এ নিয়ে কথা হয় ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী আইয়ুব আলী সুমনের সঙ্গে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদ কাছাকাছি চলে আসার কারণে মনে হয় আজকে ভিড় বেড়েছে, তবে এর চেয়েও বেশি ভিড় ও ভোগান্তি সহ্য করে টিকিট কেটেছি। অবশেষে স্বপ্নের ঈদযাত্রা হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারব। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্দুর প্রভাতী এক্সপ্রেসের যাত্রী সাদিয়া আফরিন। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছেন কিশোরগঞ্জে।
তিনি বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে ভিড়টা বেশি, তবে করোনার আগে এর চেয়ে বেশি ভিড় হতো বলে আমার মনে হয়।’
সাদিয়া আরও বলেন, ‘সকালের দিকে ভিড় হতে পারে এবং জ্যাম থাকতে পারে বলে আগেই চলে এসেছি। কিছুক্ষণ বসে থাকতে হচ্ছে, কিন্তু এতে শান্তি আছে।
‘অনেক দিন পর বাড়িতে যাচ্ছি। এমনিতেই একটা ভালো লাগা কাজ করছে। কেন জানি না, ক্লান্তি আসছে না।’
একই ট্রেনের আরেক যাত্রী জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আজকে ভিড় হবে। এটা আগে থেকেই মনে হচ্ছিল। তাই আমিও বুদ্ধি করে সেহেরি খেয়েই রওনা দিয়েছিলাম; ঘুমাইনি।
‘স্টেশনে বসে থাকতে হলেও বাড়ি যাওয়ার আনন্দে আমার কিছুই মনে হয়নি।’
ব্যাংক কর্মকর্তা ঊর্মি যাবেন চট্টগ্রামে। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ঈদ করতে ঢাকা থেকে গ্রামে যাচ্ছি। এর অনুভূতিটাই অন্য রকম। এর আগে তো বাড়িতেই থাকতাম।
‘তাই ঈদযাত্রা কী, এর জন্য ভোগান্তি ও চাপা একটা আনন্দ কাজ করে, সেটা জানতাম না। সব মিলিয়ে ভোগান্তি থাকলেও আমি উপভোগ করছি।’
কথা হয় সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাকিবের সঙ্গে। নাটোরগামী এ যাত্রী বলেন, ‘ভিড়টা বেশি মনে হচ্ছে, তবে এসব কষ্টের পরও স্বস্তির ব্যাপার এই যে, ঈদ করতে পারব মা-বাবার সঙ্গে।’
ঈদযাত্রার প্রথম দুই দিন বুধবার ও বৃহস্পতিবার ভিড় স্বাভাবিক মাত্রায় থাকলেও শুক্রবার সকালে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি ছিল। কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তিল ধারণের জায়গা ছিল না শুক্রবার সকালেও, কিন্তু বিকেলে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র। প্ল্যাটফর্মগুলো ফাঁকা পড়ে ছিল।
বিকেলের দিকে যাত্রীর চাপ কম থাকলেও ইফতারের পর বাড়তে থাকে। শেষ সময়ে স্ট্যান্ডিং টিকিটের কদর বাড়তে দেখা গেছে।
সন্ধ্যার পর স্টেশনের বাইরে টিকিট কাউন্টারের সামনে দেয়া হয় স্ট্যান্ডিং টিকিট। অবশ্য এর আগে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, এবার স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হবে না।
শনিবার সকালে দেখা যায়, বিনা টিকিটে যেন কেউ ভ্রমণ করতে না পারে, তার জন্য স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুহূর্তে চেক করছেন রেলওয়ের কর্মীরা। যাদের টিকিট নেই, তাদের ‘ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষকের বাড়তি ভাড়ার টিকিট’ দেয়া হচ্ছে।
স্টেশনের টিটি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘যাত্রীদের আটকানো সম্ভব নয়। তাই কেউ যেন বিনা টিকিটে ভ্রমণ না করে, তার জন্য এই টিকিট দেয়া হচ্ছে। কাউন্টার থেকে কোনো টিকিট বিক্রি হচ্ছে না।’
এবারের ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে যাত্রা করছেন। এর মধ্যে শুধু আন্তনগর ট্রেনে আসন ২৭ হাজারের বেশি।
ঈদযাত্রা শেষে ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ১ মে। এবারের ঈদযাত্রার সুবিধার্থে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
গত ২৩ এপ্রিল থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ওই দিন ২৭ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিলে ২৮ এপ্রিল, ২৫ এপ্রিলে ২৯ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়। এ ছাড়া ২৬ এপ্রিলে ৩০ এপ্রিল এবং ২৭ এপ্রিল দেয়া হয় ১ মের টিকিট।
কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেতে সে সময় টিকিটপ্রত্যাশীদের ব্যাপক ভোগান্তি দেখা গেছে। কেউ এক দিন, আবার কেউ দুই দিন পর টিকিট পেয়েছিলেন।