বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের চেয়েও অনেক সাংবাদিক জ্ঞানী বলে মনে করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আর ক্ষমতার দিক দিয়ে অনেক সাংবাদিক মন্ত্রণালয়ের সচিবের চেয়েও পাওয়ারফুল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খুলনা প্রেস ক্লাবে শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের অসচ্ছল সাংবাদিকদের চিকিৎসা সহায়তা ও করোনা প্রণোদনার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামের মানুষ। সাড়ে ১৫ বছর বয়স থেকে আমি কলেজ ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলাম। তখন আমি প্রেস রিলিজ লিখে বাস, রিকশা অথবা সাইকেলে করে চট্টগ্রামের পত্রিকার অফিসগুলোয় দিয়ে আসতাম।’
‘তখন থেকে সাংবাদিকের সঙ্গে আমার ওঠাবসা। আমি দেখেছি অনেক মেধাবী সাংবাদিক আছেন। কিন্তু দেখা যায় সেই সাংবাদিকের নিয়মিত কোনো ইনকাম নেই। লেখার জায়গায় লেখেন, চাকরিও একসময়ে করতেন, এখন আর করেন না। তারা কিন্তু অসচ্ছল। এ কথা মুখ ফুটে বলতেও পারেন না। এই ধরনের সাংবাদিদের আমরা সহায়তা দিয়েছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন, এটা সবার জন্য আমানত। এখানে কে কোন দলের তা আমরা দেখব না। ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে যে সাংবাদিক কালকেই সরকারকে নামিয়ে ফেলে, সেই সাংবাদিকও কিন্তু এই ট্রাস্টের টাকা নিয়েছে।
‘সংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করার দাবি সংবাদিকদের তেমন ছিল না। প্রধামন্ত্রীর ইচ্ছাই এই ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। আজকে এই ট্রাস্ট সাংবাদিকের ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ট্রাস্ট ২০১৪ সালে গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত ২২ কোটি টাকার বেশি সাংবাদিকদের সহায়তা দেয়া হয়েছে। যারা অসহায় কিংবা দুস্থ বা নানাভাবে অসচ্ছল, তাদের এই ২২ কোটি টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে।’
‘এর বাইরে ২০২০ সালে করোনাকালে আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনেক চেষ্টা করেছিলাম, সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দ নিতে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো টাকা দিতে রাজি হয়নি। শেষমেশ তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন খাতে যে অব্যয়িত অর্থ ছিল, আমি সেই টাকা সংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে সাংবাদিকদের দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সেই অর্থ ও সংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কিছু টাকা মিলেয়ে ৪ কোটি টাকা বেশি তখন সাংবাদিকদের দেয়া হয়েছে। আশপাশের ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ কোনো দেশ এভাবে করোনাকালীন সহায়তা দেয়নি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গত বছর আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। তখন তিনি সংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে ১০ কোটি টাকা দিলেন। তখন সেই সহায়তা আমরা দিয়েছি, এখনও চলমান আছে। এই টাকা চাইলেই বিতরণ করা যায় না। কতগুলো প্রক্রিয়া মেইনটেইন করতে হয়।
‘আমি অনেক জায়গায় দেখেছি, সাংবাদিকের চাকরি আছে, বিটিভির সাংবাদিক, সেও এই সহায়তা চায়। যাদের ভালো বেতন আছে, তাদের সহায়তা নেয়ার দরকার নেই। যারা দীর্ঘদিন ধরে চাকরিচ্যুত, দীর্ঘদিন ধরে চাকরি থাকলেও বেতন পাচ্ছেন না বা অসচ্ছল শুধু তারাই এই টাকা নিতে পারবেন।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দ্বীপ আজাদ, খুলনা জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জমান তালুকদার, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহমেদ এবং অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামন রিয়াজ।