বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তেঁতুলতলায় ফিরেছে প্রাণ

  •    
  • ২৯ এপ্রিল, ২০২২ ২০:৪৪

আট বছর বয়সী রিয়াসাত খেলছিল ফুটবল। তার ভাষ্য, ‘পুলিশ থাকতেও আমরা মাঠে আসছি। তখন একটু ভয় ভয় লাগতো। আজকে কেউ নেই। আমরা আমরা খেলছি।’

প্রথমে কাঁটাতারের বেড়া, এরপর কংক্রিটের দেয়াল। তেঁতুলতলা মাঠে শিশু কিশোরদের খেলা চালিয়ে যেতে কোনো বাধাই বাধ হয়ে থাকেনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর কলাবাগান থানার জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়েছে। প্রায় চারমাস পর মাঠ থেকে তুলে নেয়া হয়েছে পুলিশি পাহারা।

নির্ভয়ে তেঁতুলতলার মাঠে ফিরেছে শিশু-কিশোররা। কেউ খেলছে ফুটবল, কেউ ক্রিকেট, আবার কেউ কেউ করছে ছুটাছুটি। যেন প্রাণ ফিরেছে তেঁতুলতলায়।

শুক্রবার দুপুরে কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে একে মাঠ সংলগ্ন মসজিদ থেকে বের হচ্ছেন। মাঠের পাশ ঘেঁষে রাস্তা ধরে বাসায় ফিরছেন তারা। সীমানা দেয়ালের যে অংশটুকু খোলা রয়েছে তা দিয়ে উঁকি দিচ্ছেন কেউ কেউ, ভেতরের পরিস্থিতি দেখার জন্য।

মাঠের ভেতরে পুলিশ নেই। শিশুরা খেলায় মেতেছে। আট বছর বয়সী রিয়াসাত খেলছিল ফুটবল। তার ভাষ্য, ‘পুলিশ থাকতেও আমরা মাঠে আসছি। তখন একটু ভয় ভয় লাগতো। আজকে কেউ নেই। আমরা আমরা খেলছি।’

মাঠটি ফিরে পেয়ে উচ্ছসিত স্থানীয়রা। মহিউদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘মাঠ আর মাঠ থাকবে না, থানা হবে, এই খবরের পর যখন পুলিশ আসছে, বাচ্চারা ভয়ে ভেতরে যেতো না। রাস্তার উপর খেলতো। গতকাল থেকে মাঠেই খেলতে পারছে দেখে ভালো লাগছে।’

এই তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সৈয়দা রত্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা মাঠে খেলতে পারছে, এমন একটা দৃশ্য দেখার জন্যই আমাদের এতো আন্দোলন। মাঠ যেন দখল না হয়, পরের প্রজন্মের জন্য এই মাঠটি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন।’

কলাবাগানের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তেঁতুলতলা মাঠের এক বিঘা জমি একজন বিহারির মালিকানায় ছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি আর দেশে ফেরেননি। এর পর থেকেই জায়গাটি খেলার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে।

তবে ৩১ জানুয়ারি মাঠে প্রবেশ ঠেকিয়ে দখল নিতে কাঁটাতারের বেড়া দেয় পুলিশ। কারণ হিসেবে বাহিনীটি জানায়, এই জমিতে কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন হবে। বর্তমানে থানাটি একটি ভাড়া ভবনে আছে। জায়গাটি থানার নামে সরকারের কাছে থেকে কেনা।

এরপর স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ করেন। সভা-সমাবেশ করেন। কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে থাকা সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আটক করে পুলিশ।

২৪ এপ্রিল সকালে তেঁতুলতলা মাঠ থেকে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সকালে সৈয়দা রত্না ফেসবুকে মাঠে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে লাইভ করছিলেন। লাইভ দেয়ার সময় তাকে আটক করা হয়। প্রায় ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান মা ও ছেলে।

রত্মা ও তার ছেলেকে আটক করার পর মাঠ রক্ষার আন্দোলন আরও জোরদার হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি অধিকার কর্মীরা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত হন।

দফায় দফায় সভা সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েকদফা বসেনও তারা।

২৭ মার্চ সচিবালয়ে অধিকারকর্মীদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না দিলেও বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

পরদিন ২৮ মার্চ দুপুরে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী সেখানে আপাতত থানা করতে নিষেধ করেছেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জায়গাটির জন্য অ্যাপ্লাই করেছি ২০১৭ সালে। সেটির খোঁজ নিয়ে দেখলাম, সেই এলাকায় খেলার জায়গাই নেই। প্রধানমন্ত্রীও পরামর্শ দিয়েছেন, যেহেতু খালি জায়গা নেই, বিনোদনের কিছু নেই, সে জন্য তিনি বলেছেন পুলিশের জমি সেভাবে থাকুক। কোনো কনস্ট্রাকশন যেন না হয়। যেভাবে চলছে চলতে থাকুক।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা আসার পর আনন্দে মেতে উঠেন শিশু, কিশোর, স্থানীয় বাসিন্দা ও অধিকার কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশের বাড়তি পাহারা তেঁতুলতলা মাঠ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। শুক্রবার দিনভর পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

এ বিভাগের আরো খবর