বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটে।
শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে অন্তত ছয় শতাধিক পণ্য ও যাত্রীবাহী যান। ফেরিঘাট টার্মিনাল পূর্ণ হয়ে খায়েরপট্টি পর্যন্ত দীর্ঘ আড়াই কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজট লেগেছে। যানজটে দীর্ঘ সময় আটকে থেকে যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি ট্রাকগুলোয় থাকা কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এই ঘাটে মাত্র সাতটি ফেরিতে যানবাহন পারাপার করায় এবং ঈদের বাড়তি চাপে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাস, কাঁচা পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন পারাপার করছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সঙ্গে বরিশাল, খুলনা, বেনাপোলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যানবাহন শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুট ব্যবহার করে মেঘনা পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে। এই রুটে মোট সাতটি ফেরি থাকলেও গত সোমবার দুটি ফেরি বিকল হয়ে গিয়েছিল। এতে নরসিংহপুর ফেরিঘাটে অপেক্ষমাণ যানবাহনের চাপ আরও বেড়ে যায়।
এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও দৌলদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকায় এই ঘাটে দ্বিগুণেরও বেশি যানবাহন পারাপারের জন্য আসছে।
তবে বিকল হয়ে যাওয়া ফেরি দুটি মেরামত করে গত বৃহস্পতিবার সকালে বহরে যুক্ত করায় যানবাহন পারাপারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ধীরে ধীরে জট কেটে যাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। নতুন করে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ না বাড়লে ঈদের আগেই ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
শুক্রবার সকালে নরসিংহপুর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নরসিংহপুর ঘাটে থাকা দুটি পন্টুন ব্যবহার করে ফেরি লোড ও আনলোড করা হচ্ছে। আর ফেরিঘাট থেকে খায়েরপট্টি পর্যন্ত সড়কের প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। এর বাইরেও ফেরিঘাটের টার্মিনালে আটকে আছে আরও আড়াই শ পণ্যবাহী যান।
ফেরিঘাটের টার্মিনালে আটকে আছে আরও আড়াই শ পণ্যবাহী যান
নরসিংহপুর-খায়েরপট্টি সড়কে তিন সারিতে যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে। মাত্র একটি লেন ব্যবহার করে ফেরিঘাট থেকে আসা যানবাহনকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন কাঁচা ও পচনশীল পণ্য বহনকারী যানবাহনের চালক ও ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ সময় তীব্র রোদে আটকা থাকায় অনেক ট্রাকের তরমুজ, পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় ট্রাকচালকরা সড়কের পাশে থাকা গাছপালার নিচে কিছুটা ছায়ায় এসব যানবাহন দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। অনেকে আবার মাছের ট্রাক ছায়ায় রেখে মাছের ড্রামের পানি বদলের চেষ্টা করছেন।
বরিশাল থেকে ট্রাকবোঝাই তরমুজ নিয়ে চট্টগাম যাওয়ার পথে বুধবার রাতে নরসিংহপুর ঘাটে এসে আটকা পড়েন ট্রাকচালক মালেক সরদার। শুক্রবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ফেরিতে উঠতে পারেনি তার ট্রাক।
ক্ষুব্ধ মালেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সারা দিন রোদে আটকা থাকায় তীব্র তাপে তরমুজ থেকে পানি বের হতে শুরু করেছে। অনেক তরমুজই নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি যা আছে তাও মনে হয় নষ্ট হয়ে যাবে। ২ দিন পার হয়ে গেলেও এখনও ফেরিতে ওঠার সিরিয়ালের বিষয়ে কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। আজকের মধ্যে ফেরিতে উঠতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানে পরতে হবে।’
পটুয়াখালী থেকে আসা বাসের যাত্রী সুমাইয়া আকতার জানান, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঘাটে এসেছি। সড়কজুড়ে এলামেলা যানবাহন পার্কিং করে রাখায় শেষ দুই কিলোমিটার পার হতে দুই ঘন্টারও বেশি সময় লেগেছে। প্রায় ৭ ঘণ্টা ঘাটে আটকে থেকে মাত্র ফেরিতে ওঠার সিরিয়াল পেয়েছি। সকালে নোয়াখালী থাকার কথা থাকলেও আজ সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছাতে পারব কিনা নিশ্চিত নই।’
ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজ নিয়ে চট্রগ্রাম যাচ্ছিলেন মোজাম্মেল হোসেন। দীর্ঘ সময় ঘাটে আটকা থাকায় তার পেঁয়াজে পচন ধরেছে। রোদের উত্তাপ থেকে বাঁচতে সড়কের পাশে একটি গাছের তলায় ট্রাকটি পার্ক করে সিরিয়ালের অপেক্ষা করছেন।
মোজাম্মেল বলেন, ‘পেঁয়াজ সব নষ্ট হইয়া যাইতাছে। অন্য ঘাটে ট্রাক পারাপার বন্ধ কইরা দিছে। কোনো উপায় না পাইয়া এইহান দিয়া আইছি। আমার মত আরও অনেক ট্রাক একলগে আহায় যানজট তৈরি হইছে। তাড়াতাড়ি পার হইতে না পারলে সব যাবে।’
নরসিংহপুর ফেরিঘাটে বিআইডব্লিউটিসির ঘাট ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি নৌপথে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ রয়েছে। তাই এই ঘাটে চাপ বেড়ে গেছে। বিকল দুটি ফেরি বহরে যোগ দেয়ায় যানবাহন পারাপারে গতি এসেছ। আশা করি, ২/১ দিনের মধ্যে ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’