অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে ১৮ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন হিসেবে অবশেষে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন সুমনা সরকার।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (সহকারী সার্জন) বৃহস্পতিবার মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন তিনি।
শুক্রবার নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানান সুমনা সরকার।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ১৮ বছর পর আদালতের নির্দেশে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে গত বছরের অক্টোবরে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) আমাকে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন হিসেবে সুপারিশ করে। এরপর কিছু প্রশাসনিক কাজ শেষে গতকাল চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছি।’
সুমনা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ২৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক অমল কৃষ্ণ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে জটিলতার অভিযোগে সে সময় পিএসসি সুমনার মৌখিক পরীক্ষা নেয়নি।
নিজের অধিকারের জন্য প্রায় দেড় যুগ আদালতে আইনি লড়াই করেছেন সুমনা। ততদিনে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের বয়স পেরিয়ে গেছে। তবে যেহেতু আবেদন করার সময় তার বয়স ২৮ ছিল, তাই আদালতের রায়ে তিনি মৌখিক পরীক্ষা দিতে পেরেছেন।
২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সুমনা সরকারের মৌখিক পরীক্ষা নিতে সরকারি কর্ম কমিশনকে নির্দেশ দেয়। মৌখিক পরীক্ষায় পাস করলে তাকে নিয়োগ দিতেও বলেছিল আদালত।
সুমনার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল হলেও তিনি চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে চাকরি করতেন।
তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল কৃষ্ণ সরকারও চিকিৎসক ছিলেন। তিনি টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধার সনদ সংক্রান্ত জটিলতার কারণ দেখিয়ে সুমনাসহ অনেক পরীক্ষার্থীর মৌখিক পরীক্ষার সে সময় কার্ড ইস্যু করা হয়নি। পরে তারা মৌখিক পরীক্ষা দিতে পারেননি।
এ ঘটনায় বঞ্চিতদের মধ্যে ১২ জন ২০০৩ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট তাদের মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশ দেন। পরে ওই ১২ জন পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগও পান।
সুমনাও ২০০৯ সালে এসে হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১৫ সালে হাইকোর্ট তার মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করে পিএসসি।
চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের রায়টি ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর স্থগিত করে দেয়। এরপর দীর্ঘ দিন মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারের অপেক্ষায় ছিল।