বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফেরার চেষ্টায় জাহাঙ্গীর, ফের প্রতিরোধের ঘোষণা

  •    
  • ২৯ এপ্রিল, ২০২২ ১১:৫৯

গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ওঠে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। নভেম্বরের শেষ দিকে মেয়র পদ হারান তিনি। এর আগে আওয়ামী লীগ তার সব দলীয় পদ কেড়ে নেয়। তখন থেকে তিনি ছিলেন অনেকটাই গুটিয়ে। প্রকাশ্যে সেভাবে দেখা যায়নি। তবে রোজার শুরু থেকে জাহাঙ্গীর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেন ইফতার মাহফিল দিয়ে। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নিজের সমর্থকদের জড়ো করার পাশাপাশি তাদের উদ্দীপ্ত করতে এবং নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখতে থাকেন।

ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তির অডিও ও ভিডিও রেকর্ড ফাঁসের পর মেয়র পদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দলীয় পদ হারানো জাহাঙ্গীর আলমের বিপত্তি শেষ হচ্ছে না।

বেশ কয়েক মাস পর প্রকাশ্যে এসে ‘আমার মেয়র পদ যায়নি’ বলে বক্তব্য দেয়ার পর আবার আওয়ামী লীগের গাজীপুরের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ তাকে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।

এর মধ্যে সিঙ্গাপুর পাড়ি দিয়েছেন জাহাঙ্গীর। সঙ্গে ছিলেন ঘনিষ্ঠ একজন। কবে ফিরবেন, সেটিও কেউ বলতে পারছেন না।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ওঠে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। এতে ফুঁসে ওঠেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আর টলে যায় জাহাঙ্গীরের ‘গাজীপুর সাম্রাজ্য’।

নভেম্বরের শেষ দিকে মেয়র পদ হারান জাহাঙ্গীর। এর আগে আওয়ামী লীগ তার সব দলীয় পদ কেড়ে নেয়। এরপর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তও শুরু হয়। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই। কয়েক মাস ধরে জাহাঙ্গীর নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে রাখেন। প্রকাশ্যে সেভাবে দেখা যায়নি।

তবে রোজার শুরু থেকে জাহাঙ্গীর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেন ইফতার মাহফিল দিয়ে। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নিজের সমর্থকদের জড়ো করার পাশাপাশি তাদের উদ্দীপ্ত করতে এবং নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখতে থাকেন।

গত ২৩ এপ্রিল জাহাঙ্গীর যান নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম কানাইয়ায়। সেখানে একটি মতবিনিময় সভায় তার দেয়া বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

২৩ এপ্রিল নিজ গ্রামে মতবিনিময় সভায় জাহাঙ্গীর

এতে তাকে বলতে দেখা যায়, ‘আমার মেয়র পদ আছে। আমার মেয়রের সব দায়িত্বও আছে। আমাকে তদন্তের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। তদন্ত করতে হয় ৩০ দিনে। সেটা আজকে ছয় মাস হইছে। ছয় মাসের মধ্যে তারা আমার একটা লাউ-বেগুনও পায় নাই। আমি আমার ঘরে ঘুমাই।’

জাহাঙ্গীর স্পষ্টতই তার সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এ করতে গিয়ে তার বিরোধী শিবিরে আবার ছড়িয়েছে উত্তেজনা।

ভিডিওটি ফেসবুকে আসার পর ২৪ এপ্রিল রাতে রাজধানীর উত্তরায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বাসভবনে কাউন্সিলরদের একটি অংশের জরুরি সভা হয়। সেখানে জাহাঙ্গীরের দেয়া বক্তব্য নিয়ে আলোচনা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে সভায় সিদ্ধান্ত হয় নগরীর ‘যেখানেই জাহাঙ্গীর আলম, সেখানেই প্রতিরোধ’ গড়ে তোলা হবে।

সভায় অংশ নেয়া একাধিক কাউন্সিলর নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সভায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ ছাড়াও প্যানেল মেয়র-২ ও ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল আলিম মোল্লা, প্যানেল মেয়র-৩ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আয়েশা আক্তার, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকার, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু বকর সিদ্দিক, ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূইয়া ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজাহান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৩ এপ্রিলের সেই সভার ভিডিও ভাইরাল হলেও এর আগে বেশ কয়েক দিন নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড, জানাজা ও ইফতার মাহ্ফিলে অংশ নেন জাহাঙ্গীর।

১৯ এপ্রিল ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ডিজিটাল সার্ভিলেন্স (সিসি ক্যামেরা) উদ্বোধন করেন বরখাস্ত মেয়র। ২২ এপ্রিল শ্রমজীবী শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ ও বিভিন্ন গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনসহ ৪৫টি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে নিজ বাড়িতে মতবিনিময় সভা ও ইফতারে অংশ নেন।

২৩ এপ্রিল কানাইয়ায় সেই মতবিনিময় সভা শেষে সন্ধ্যায় গাজীপুর প্রেস ক্লাব আয়োজিত ইফতারে যোগ দেন জাহাঙ্গীর। সেখানে জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান, পুলিশ সুপার এম সফিউল্লাহ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রউফ নয়ন উপস্থিত ছিলেন।

শুধু বলব, শত শত কোটি টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে দান করে তিনি দানবীর সেজেছেন। এ ধরনের অনেক দুর্নীতির শ্বেতপত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে। শুধু লাউ-বেগুন না, কাঁঠালও বেরিয়ে আসবে সামনের দিনগুলোতে। আমরা আগামীতে উনি কী কী দুর্নীতি করেছেন তা জনসম্মুখে গাজীপুরবাসীর কাছে তুলে ধরব।

দুই দিন পর ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি আফতাব উদ্দিনের জানাজায় অংশ নেন জাহাঙ্গীর। পরে বিকেলে নগরীর সালনা ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে আকন বাড়ি জামে মসজিদ কমিটির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে যোগ দেন।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনজুর হোসেন, ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তানভীর আহমেদ।

৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সদস্য নুরুল ইসলাম নুরু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। মেয়র পদ থেকেও তিনি বরখাস্ত হয়েছেন। ধীরে ধীরে তার দুর্নীতির আমলনামা তদন্তে বেরিয়ে আসছে। অথচ তিনি (জাহাঙ্গীর) হঠাৎ করে প্রকাশ্যে এসে বিতর্কিত মন্তব্য করে বেড়াচ্ছেন। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।

‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত আছেন। জামায়াত-বিএনপির কয়েকজন কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কতিপয় মোশতাককে সঙ্গে নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন। আমরা তার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেব না। বঙ্গবন্ধুর কটূক্তিকারী জাহাঙ্গীর আলমকে নগরীর যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে।’

নগরীর ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেন তার কোনো দুর্নীতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমরা ওনার বিরুদ্ধে অনেক তথ্য পেয়েছি। আমরা সময়ের অপেক্ষায় আছি। যেহেতু একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত চলছে এ জন্য আমরা এগুলো নিয়ে কথা বলছি না। শুধু বলব, শত শত কোটি টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে দান করে তিনি দানবীর সেজেছেন। এ ধরনের অনেক দুর্নীতির শ্বেতপত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে। শুধু লাউ-বেগুন না, কাঁঠালও বেরিয়ে আসবে সামনের দিনগুলোতে। আমরা আগামীতে উনি কী কী দুর্নীতি করেছেন তা জনসম্মুখে গাজীপুরবাসীর কাছে তুলে ধরব।’

লুকিয়ে লুকিয়ে নগরীর বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম। টাকার কাছে বিক্রি হয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এখনও তার পাশে আছেন।

৪৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব আহসান উল্লাহ বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় বঙ্গবন্ধুর কটূক্তিকারী আসা মানেই গভীর ষড়যন্ত্র করছে এবং চলছে। তাদের আশ্রয় ও সুযোগ করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের স্বার্থবাদী কয়েকজন নেতাকর্মী। তবে আমরা মুজিব আদর্শের সৈনিকরা ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না। প্রত্যেক ওয়ার্ডে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে প্রতিরোধ করা হবে।’

২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘লুকিয়ে লুকিয়ে নগরীর বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম। টাকার কাছে বিক্রি হয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এখনও তার পাশে আছেন। তবে তাকে আর প্রকাশ্যে মিথ্যাচার করতে দেয়া হবে না। নগরীর কোথাও যদি জাহাঙ্গীর আলম সভা, সেমিনার করে মিথ্যাচার করে তবে জনগণ তা প্রতিহত করবে।’

গত ২৫ এপ্রিল বিকেলে টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের ইফতার মাহ্ফিলে অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীরের সমালোচনা করেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণও। তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়ান তদন্ত করে নাকি তার একটা লাউ-বেগুনও পাওয়া যায়নি। অথচ তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের কোনাবাড়ি শাখায় সিটি করপোরেশনের নামে একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। সেখানে ৫টি কোম্পানি থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স ও প্ল্যান পাস বাবদ দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা তিনি নিজে এবং তার ব্যক্তিগত কর্মচারী শহিদুল ও প্লটু চাকমার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। এগুলোর রেকর্ড আছে।

‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকের অনুষ্ঠান না করে দুই কোটি ১১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বৈশ্বিক মহামারির কারণে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পাঁচ কোটি ৭০ লাখ টাকার সরঞ্জাম ক্রয় করেছেন।’

কিরণ বলেন, ‘একটা হরফ যদি মিথ্যা হয় সমস্ত দায়ভার আমার। শুধুমাত্র কাউলতিয়া অঞ্চলে একটি টেন্ডারে ৪০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত মূল্য। সেখানে কাজ না করে নির্ধারিত ঠিকাদার ৩৮ কোটি টাকা বিল নিয়েছেন। কাজের প্রগ্রেস দেখানো হয়েছে ৮০ শতাংশ, বাস্তবে তা শূন্য শতাংশ।’

এসব বিষয়ে কথা বলতে সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এ বিভাগের আরো খবর