শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনের জামিন আবেদন নাকচ করেছেন ঢাকার একজন মহানগর হাকিম।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম শান্তা আক্তার শুনানি শেষে তার জামিনের আবেদন ফিরিয়ে দেন।
নিউ মার্কেট থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক সাফায়েত হোসেন এসব তথ্য জানান।
বুধবার তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউ মার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক হালদার অর্পিত ঠাকুর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন।
পরে ঢাকার মহানগর হাকিম ইশরাত জাহান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার জামিন শুনানির দিন ঠিক করেন।
গত শনিবার মকবুলকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন নিউ মার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক হালদার অর্পিত ঠাকুর। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান।
গত ২২ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে রাতে তাকে নিউ মার্কেট থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
গত ১৮ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও ১৯ এপ্রিল সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হন। দুজন মারা গেছেন হাসপাতালে।
সংঘর্ষের সূত্রপাত নিউ মার্কেটের ভেতরে থাকা ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামের দুই দোকান কর্মচারীর দ্বন্দ্ব থেকে। সেই দোকান দুটি সিটি করপোরেশন থেকে মকবুলের নামে বরাদ্দ।
তবে কোনো দোকানই নিজে চালাতেন না মকবুল। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুজনকে ভাড়া দিয়েছিলেন দোকান দুটি।
সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ দুটি মামলা করে। একটি মামলা বিস্ফোরক আইনে ও অন্যটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে করা হয়। দুই মামলায় নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১২০০ জনকে আসামি করা হয়।
এছাড়া সংঘর্ষে নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন ও মুরসালিনের ভাই নুর মোহাম্মদ হয়ে নিউ মার্কেট থানায় আরও দুটি মামলা করেন। এই চার মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০ জনকে।
তিনটি মামলার মধ্যে শুধু পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি নেতা মকবুলসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এই মামলাটি করেছেন নিউ মার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক ইয়ামিন কবীর। তবে মকবুল এই মামলাটিকে হয়রানিমূলক বলেছেন। বলেছেন, ঘটনাস্থলে না থাকলেও কেবল রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে।
বিএনপিও এই মামলার প্রতিবাদ করেছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কেউ এখন কলেরায় মারা গেলেও হয়ত বিএনপিকে দায় দেবে।
বিএনপির নেতাদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, দলটির এমন নেতা-কর্মীদেরকে আসামি করা হয়েছে, যারা এখন এমনকি বেঁচে নেই।