বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বালু ‘লুট করে’ বিতর্কে আ.লীগ নেতা

  •    
  • ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:১৭

কান্তনগর মোড়ের বাসিন্দা জাহিদ হাসান বলেন, ‘ব্রিজের কথা চিন্তা করে দুই বছর আগে এই ঘাটটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত এই ঘাটটি ইজারা দেয়া হয়নি। তবে তিন দিন আগে হঠাৎ করে কপিলেশ্বর বসাক বালু তোলা শুরু করেন। প্রথম দিনে তিন থেকে চারটি ড্রাম ট্রাকে বালু তোলা হলেও পরদিন থেকে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক বালু নিয়ে যাচ্ছে।

দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কান্তনগর মোড়ে অনুমতি ছাড়াই বালু মহাল থেকে বালু তোলার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্রিজের মাত্র ৩০০ মিটার দূর থেকে বালু তোলার ফলে কান্তনগর ব্রিজ হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া অবৈধভাবে তোলা বালু বিভিন্ন স্থানে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ড্রাম ট্রাক ও স্ক্যাভেটর মেশিন আটক করে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত সোমবার রাত ৮টার দিকে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কান্তনগর মোড়ে বালুর ঘাটে এসব ট্রাক ও স্ক্যাভেটর আটক করা হয়। এ সময় বিষয়টি তারা প্রশাসনকে অবহিত করলেও রাতে প্রশাসনের লোকজন আসেনি। পরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে ঘটনা দেখে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি।

কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, ওই এলাকা থেকে বালু তুলছেন কপিলেশ্বর বসাক নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি দিনাজপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় সেই আওয়ামী লীগ নেতার। তিনি জানান, স্থানীয় একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য এসব বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ওই দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নাম করে অন্যত্র বালু বিক্রি করা হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই এলাকার কান্তনগর ব্রিজ থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার দক্ষিণে বেশ কিছুদিন ধরেই স্ক্যাভেটর দিয়ে বালু তুলে সেসব বালু ড্রাম ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই বালু তোলায় বর্ষার সময় ব্রিজটি হুমকির মধ্যে পড়তে পারে, এজন্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার এলাকাবাসী বালু তুলতে নিষেধ করলেও তিনি শোনেননি। ফলে এলাকাবাসী সোমবার রাতে আটটি ড্রাম ট্রাক ও দুটি স্ক্যাভেটর মেশিন আটক করেন।

মঙ্গলবার সকালে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি। ফলে ওই স্থান থেকে এখনও বালু তোলা অব্যাহত রয়েছে।

কান্তনগর মোড়ের বাসিন্দা জাহিদ হাসান বলেন, ‘ব্রিজের কথা চিন্তা করে দুই বছর আগে এই ঘাটটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত এই ঘাটটি ইজারা দেয়া হয়নি। তবে তিন দিন আগে হঠাৎ করে কপিলেশ্বর বসাক বালু উত্তোলন শুরু করেন। প্রথম দিনে তিন থেকে চারটি ড্রাম ট্রাকে বালু উত্তোলন করা হলেও পরদিন থেকে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক বালু নিয়ে যাচ্ছে।

‘শুনেছি এই ঘাট থেকে উত্তোলিত বালু স্থানীয় দীপ্ত জীবন ফাউন্ডেশনের হাসপাতালের নেয়ার কথা। সেই হাসপাতালে বালু নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বালুর ট্রাকগুলো দিনাজপুর ও সৈয়দপুরের দিকে যাচ্ছে। ২৪ এপ্রিল রাতে কাহারোল উপজেলার দশমাইলে আমরা দুটি ড্রাম ট্রাক আটক করি। পরে ট্রাকগুলো পুনরায় বালুর ঘাটে বালুগুলো নামানোর পর ট্রাকগুলোকে ছেড়ে দেই।’

স্থানীয় সেলিম রহমান বলেন, ‘আমার জানা মতে ব্রিজের কাছে ভেকু (স্ক্যাভেটর) বসানো নিষেধ। আবার এই বালুর ঘাটটি দুই বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমানে এই বালু ঘাটের দীপ্ত জীবন ফাউন্ডেশনের হাসপাতালের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অবশ্যই এইটা ভালো বিষয়। কিন্তু এতগুলো ট্রাক দীপ্ত জীবন ফাউন্ডেশনে না নিয়ে যাচ্ছে বাইরে। আর বেশিরভাগ বালু তোলা হচ্ছে রাতের বেলায়।’

মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে ছিলাম। আমি যদি হিসাব করি, আমার পাঠানো র‌্যামিটেন্স দিয়ে এই ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। দেশে এসে দেখি এখানে ব্রিজের পাশে বালু তোলা হচ্ছে। এটা তো আমার টাকা নষ্ট।

‘হাসপাতালের জন্য বালু নিয়ে যাচ্ছে নিয়ে যাক। তবে বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন? এই বালুর মহলের ইজারা নাই। ডাক হয়নি। তবে এটা কীভাবে মেনে নেয়া সম্ভব। এভাবে বালু তোলা হলে তো ব্রিজের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।’

ড্রাম ট্রাকের সহযোগী সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে এখানে বালু ঘাটে আসছি। এই ঘাট যিনি দেখাশুনা করেন তিনি আমাদের এখানে এনেছেন। কিন্তু তিনি কে তা আমি বলতে পারব না, কারণ আমি মহাজনের অধীনে কাজ করি।

‘আমাকে মহাজন এখানে আসতে বলছে, তাই আমি এখানে আসছি। প্রতিবার বালু নিয়ে গেলে আমাকে ৫০ টাকা করে দেয়া হয়।’

স্ক্যাভেটর চালক চান মিয়া বলেন, ‘এর আগ যখন ঘাটের ডাক ছিল তখন একবার এই ঘাটে আসছিলাম। আমি স্ক্যাভেটর চালাই। ২৪ ঘণ্টা পরপর আমাদের ডিউটি পরিবর্তন করে। এখন আমি কপিলেশ্বর বসাকের নির্দেশে এখানে আসছি। তিনি আমাকে বলছে কাজ করার জন্য।

‘এক ট্রিপের জন্য আমি ৩০০ টাকা পাই। আজকে আর বালু মারতে পারিনি। এর আগে আট ট্রিপ বালু আমি দীপ্ত জীবন ফাউন্ডেশনে দিছি। আর কে কত টাকা পায় তার হিসাব আমি জানি না। আমার মহাজন (কপিল বসাক) জানেন।’

ঘাটে আটটি ড্রাম ট্রাক ও দুটি স্ক্যাভেটর মেশিন আটকের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ নেতা কপিলেম্বর বসাক। তিনি বলেন, ‘আমি এখান থেকে দীপ্ত জীবন ফাউন্ডেশনের হাসপাতালের জন্য বালু দেই। এলাকার স্থানীয়রা বিভিন্ন কথা বলে আমার গাড়ি আটকে দিয়েছে। আমি দীপ্ত জীবন ফাউন্ডেশনের বাইরে স্থানীয় একটি মন্দিরে দুই গাড়ি বালু দিয়েছি। এর বাইরে কোনো বালু দেয়া হয়নি। আমার নেতৃত্বে বালু বাইরে বিক্রি হয় না।’

ঘাট ইজারা না নিয়েও বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। যেখানে বালু দেয়া হচ্ছে তাদের হিসাব অনুযায়ী, এক হাজার গাড়ি বালু প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত আড়াইশ গাড়ি বালু গেছে।

‘আমি এখানে ডিম করে বালু তুলছি না। এখানে চরের বালু উত্তোলন করছি। আমার বালু উত্তোলনের ফলে ব্রিজের ক্ষতি হবে না।’

এ বিষয়ে কাহারোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরুল হাসান বলেন, ‘যেহেতু নদী খনন হচ্ছে। তাই এখন বালুর ঘাট ইজারা বন্ধ আছে। আর উপজেলা থেকে কোনো প্রকার ঘাট ইজারা দিতে পারি না। কোনো ঘাট ইজারা হলে সেটা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে দেয়া হয়।

‘এখন যিনি বালু উত্তোলন করছেন তিনি বেআইনিভাবে বালু উত্তোলন করছেন। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি আমার কাছে একটি অভিযোগ এনেছিল। আমি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর