দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতের এ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছে ১০টি পাড়া।
ঝড়ে পার্বতীপুরে দেয়ালচাপায় এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ঝড়ে বিভিন্নভাবে আহত চার জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, সুকুরডাঙ্গা, কুষ্টিপাড়া, কোটালপাড়া, শহরকাটি এবং নবাবগঞ্জের ষষ্ঠিপাড়া, সাদিগঞ্জ, কুশদহ, আদিবাসীপাড়াসহ মোট ১০টি পাড়ায় ঝড়ে ভেঙে পড়েছে বহু কাঁচা-পাকা ঘর। উড়ে গেছে ঘরের চালা, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসল, উপড়ে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি।
ঝড়ের সময় দেয়াল চাপায় হরিরামপুর গ্রামের শওকত আলীর মেয়ে ১৩ বছরের উম্মে কুলসুমের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে সুকুরডাঙ্গায় দেয়ালে চাপা পড়ে আব্দুস সালামের ১টি গরু ও ১টি ছাগল মারা গেছে। মুন্সিপাড়ার কসির উদ্দীনের একটি গরু গুরুতর আহত হয়েছে।
মুন্সিপাড়ার আকলিমা খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন কালবৈশাখি ঝড় আমি কোনোদিন দেখি নাই। মাত্র ৫ মিনিটের ঝড়টি যেদিক দিয়ে গেছে, সেদিকে তার দাগ করে দিয়ে গেছে। আমার ঘরের চালা উড়ে পাশের গ্রামে চলে গেছে।
‘বাচ্চাদের জন্য ঈদের কাপড় কিনতাম। কিন্তু এখন তো আর ঈদও হবে না, বাড়িতে ভালোভাবে থাকাও হবে না।’
আকলিমার মতো ঝড়ে উড়ে গেছে সুকুরডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ সাইবেনী বেগমের ঘরের চালাও। তিনি বলেন, ‘আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে একটি বাড়ি ছিল। কিন্তু ঝড়ে সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেলো। এখন বাচ্চা দুইটা নিয়ে অসহায়ের মতো খোলা আকাশের নিচে আছি।’
ষষ্ঠিপাড়ার আব্দুল হামিদ বলেন, ‘জন্মের পর এমন ঝড় দেখিনাই। রাতে তারাবি নামাজের শেষের দিকে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঝড় আসে। এ ঝড়ে ফসল, বাগানের বিভিন্ন ফলের গাছসহ বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে বিদ্যুতের খুঁটিও।’
দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ডিজিএম মো. বনিয়ার রহমান বলেন, ‘দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে পার্বতীপুর উপজেলায় ৪৭টি এবং নবাবগঞ্জে ৭টি বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি ভেঙ্গে পড়েছে। ঝড়ের খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।’
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ সোম বলেন, ‘সংবাদ পেয়েই ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়া হবে।’
পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘ঝড়ের পর রাতেই এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
এদিকে কালবৈশাখি ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর অঞ্চল সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকাও। পাহাড়ি ঢলে একের পর এক বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে কালবৈশাখি ঝড় যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে।
জেলার সদর উপজেলা, শান্তিগঞ্জ, দিরাই, জামালগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, জগন্নাথপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় বুধবার ঘুরে দেখা যায়, মঙ্গলবার মধ্যরাতের এ ঝড়ে ঘরবাড়ির চালা, দোকানপাট উড়ে গেছে। প্রবল বাতাসে গাছপালাসহ উপড়ে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। এছাড়া ঘটেছে প্রাণহানিও।
ইনাতনগর গ্রামের দিনমুজর আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমি অসহায় মানুষ। রাতে আমার শেষ সম্বল ঘরটুকু তোফানে ফালাই দিছে। রাতে ঘরের নিচে ছিলাম। তোফান এসে হঠাৎ ঘর উড়িয়ে নিয়ে যায়। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব।’
ইকবাল নামে আরেক জন বলেন, ‘ঝড়ে আমার ভাইয়ের ঘর ও আমার ফার্মেসির দোকান উড়ে গেছে। আমাদের এলাকার ২৫ থেকে ৩০টি ঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।’
ঝড়ে আতঙ্কিত হয়ে দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একজন হলেন দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ৬০ বছরের আব্দুল ওয়াহাব এবং অপরজন জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়ন সন্তোষপুর গ্রামের হুশিয়ার আলীর স্ত্রী আজিজুন নেছা।
আব্দুল ওয়াহাবের মৃত্যুর বিষয়ে দিরাই থানার ওসি সাইফুল আলম বলেন, ‘ঝড়ে বা বজ্রপাতে উনার মৃত্যু হয়নি। মাঝ রাতে ঝড়ে ওয়াহাব মিয়ার ঘরে চাল উড়ে যায়, সেটি দেখে তিনি আতঙ্কিত হয়ে মারা যান বলে জানা গেছে।’
আজিজুন নেছার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় সমাজকর্মী শামছুল আলম।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক কর্মর্কতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।’