রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলায় যে ফাঁকা জায়গায়টিতে থানা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেটিতে মাঠ মানতে নারাজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, এটি একটি সরকারি খাস জমি ছিল। আর থানার নিজস্ব ভবন না থাকায় পুলিশের সমস্যা হচ্ছিল, তাই জেলা প্রশাসক সেটি বরাদ্দ দিয়েছেন।
এই জমিতে এখন থানা হবে নাকি মাঠ হিসেবে ব্যবহার হবে-সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে থানার জন্য বিকল্প জায়গা খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলার যে জায়গায় থানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেটিতে মাঠ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রীর কাছে যান কয়েকজন পরিবেশকর্মী। এরপর তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া দেন।
শিশু-কিশোরদের খেলার জায়গার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুনেছি, এটা লোকালয়ের পাশে খালি জায়গা। এখানে বাচ্চারা খেলত। আলাপচারিতার জন্য জায়গাটি ছিল। এখন অনেকেই এটি নিয়ে নানান কথা বলছে। আমাদের কথা স্পষ্ট, আমাদের জায়গা প্রয়োজন, কলাবাগানের একটি থানা ভবনও প্রয়োজন।’
থানা মানুষের নিরাপত্তার জন্যই করা হয়, এই বিষয়টিও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘পাবলিক সেন্টিমেন্টের কথা আমিও বলছি। আমাদের থানা দরকার, এটাও তো বুঝতে হবে। কারণ, যদি আমি সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে তখনও তো সেন্টিমেন্ট আমাদের ওপরই আসবে।’
সাংবাদিকদের কাছেও বিকল্প জানতে চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ‘আপনারাও একটু খোঁজাখুঁজি করুন যাতে এই সুযোগ থেকে ওই এলাকার মানুষ বঞ্চিত না হয়। আপনারা যদি একটা সুইটেবল জায়গা পান, থানা অবশ্যই জরুরি দরকার। থানাও দরকার এবং এই বাচ্চারা যারা কথা বলছে তাদেরও রিক্রিয়েশন দরকার।’
কলাবাগানের তেঁতুলতলা এলাকায় সরকারি খাস জমিতে বছরের পর বছর স্থানীয় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করত। এই জমিটিতে কলাবাগান থানা করতে সম্প্রতি বরাদ্দ দেয়া হয়। এর পর থেকে সেই জায়গাটি মাঠ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল স্থানীয়রা।
গত ২৪ এপ্রিল সেই এলাকায় ফেসবুক লাইভ করে থানার নির্মাণকাজের শুরু করলে পুলিশ সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আটক করে গারদে রাখে। দিনভর সমালোচনার পর গভীর রাতে দুজনকে মুক্তি দেয়া হয়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ।
পরদিন থেকে সেই খালি জায়গা ঘিরে নানা সংগঠনই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক চলার সময়ও পরিবেশ কর্মী, মানবাধিকার কর্মীরা মাঠের সামনে সমাবেশ করেন। তারা সেখানে বৃক্ষরোপণও করেন।
তবে আন্দোলনের মধ্যেও থানার নির্মাণকাজ বন্ধ করার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি। আর মাঠের চারপাশে নির্মাণ করা হচ্ছে সীমানাপ্রাচীর।
তেঁতুলতলার জায়গাটি মাঠ হিসেবে ব্যবহারের দাবি জানিয়ে স্থানীয়দের আন্দোলনের মূল কথা হলো, সেখানে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য ফাঁকা জায়গা নেই। কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের কাছে যে মাঠ রয়েছে, সেটি ক্লাবকে বরাদ্দ দেয়ার কারণে সেখানে সবার পক্ষে খেলা সম্ভব নয়।
এটি তো মাঠ নয়
মন্ত্রী বলেন, ‘তেঁতুলতলায় যে মাঠের কথা বললেন এটি কিন্তু মাঠ নয়। কোনো কালেই মাঠ ছিল না। এটা একটা খালি জায়গা ছিল, পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল। ঢাকা শহরে আমাদের নতুন যে থানাগুলো হচ্ছে এগুলো বেশির ভাগ ভাড়া বাড়িতে। ভাড়া বাড়িতে থাকায় আমাদের পুলিশ ফোর্স নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে।’
ভাড়া বাসায় থানা থাকার অসুবিধা তেঁতুলতলায় সরকারি খাস জমি থাকার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডিসির কাছে নিয়মানুযায়ী বলেছিলাম, জমি অধিগ্রহণ করে কলাবাগানে কোনো জায়গা দেয়া যায় কি না। ডিসি এটা দেখে এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে এই জায়গাটি আমাদের বরাদ্দ দেন।
‘আমরা এটির মূল্য হিসেবে যে টাকা হয় সেটিও মেট্রোপলিটন পুলিশ জমা দিয়েছে। পরে ডিসি আমাদের এটা হস্তান্তর করে। এটিই হলো মূল কথা।’
এই জমিটি খেলাধুলার আয়োজন করার মতো না বলেও মনে করে মন্ত্রী। বলেন, ‘এটা ২০ কাঠা জমি সম্ভবত। খুব বড় যে জমি তা না। ফুটবল খেলা বা টেনিস খেলার মাঠ এ রকম কিছু না। জায়গাটাও লম্বালম্বি।
‘তারা (পরিবেশ কর্মীরা) যেহেতু আবেদন করে গিয়েছে, আমরা দেখব। আমাদের টাকা যেটা দিয়েছি, সেটার কী হবে সেটাও দেখব।’
বিকল্প জায়গা দিন
মন্ত্রী জানান, পরিবেশ কর্মীদের কাছে তিনি তেঁতুলতলার বিকল্প জায়গার সন্ধান চেয়েছেন। সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, ‘সেটার দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বলছি, এর চেয়ে ভালো কোনো জায়গা যদি মেয়র সাহেব বা অন্য কেউ ব্যবস্থা করতে পারলে আমরা অন্য ব্যবস্থা করব। কিন্তু থানার জন্য এটিই নির্দিষ্ট জায়গা, সরকার এটিই ব্যবস্থা করেছে।’
তাহলে কি এখন আর মাঠ থাকল না?- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপাতত তাইই। আপাতত যেহেতু এটা পুলিশকে দেয়া হয়েছে, এটা পুলিশেরই।
‘কিছুক্ষণ আগে যারা এসেছিলেন, আপনারা দেখেছেন। তারা একটি আবেদন করেছেন, বিকল্প কিছু করা যায় কি না, সে পর্যন্ত এটা স্থগিত রাখা যায় কি না।‘
থানা নির্মাণ বন্ধ হবে কি
মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রাচীর নির্মাণ স্থগিত রাখার কথা তিনি ডিএমপি কমিশনারকে বলবেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করব।
‘আমি বলব, এখন এটা পুলিশের প্রোপার্টি। যেহেতু একটি আবেদন আসছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চিন্তাভাবনা করব কী করা যায়।’
তবে আপাতত যে থানা ভবন হচ্ছে না, সেটিও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘আমি বলেছি, এখনই কনস্ট্রাকশনে যাচ্ছি না। এর চেয়ে বড় কোনো অফার যদি আমাদের দিতে পারেন তাহলে আমরা ভেবে দেখব।’
যা বলছেন অধিকার কর্মীরা
মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেসরকারি সংস্থা ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক অধিকার কর্মী খুশি কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওখানে যেন থানা না হয়। কারণ, ওটা থানার জন্য উপযুক্ত নয়।
‘মন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। তার সঙ্গে কথা বলে উনি এটার ফয়সালা করবেন। আর আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, আপনি কথা বলবেন, বিকল্প জায়গা খুঁজবেন, সবই হবে কিন্তু এর মধ্যে কনস্ট্রাকশনের কাজটি বন্ধ করতে হবে।
‘উনি এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার সাহেবের সাথে কথা বলবেন। আমরা স্ট্রংলি বলে আসছি, এটা ইমিডিয়েটলি বন্ধ করার জন্য।’
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা আইনজীবীদের সংগঠন বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘খেলার মাঠটির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ফিল করছেন। কিন্তু ওনারা ২৭ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছেন। তখন আমরা বলেছি, সেটা তো সরকারি ট্রেজারিতেই আছে। ওই এলাকায় আরও পরিত্যক্ত জায়গা আছে। একটা জায়গার কথা ইকবাল ভাই (স্থপতি ইকবাল হাবিব) স্পষ্ট করে বলেছেন।’