বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তেঁতুলতলা নিয়ে আন্দোলন বড় হচ্ছে

  •    
  • ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৭:০৪

গত ২৪ এপ্রিল সেই এলাকায় ফেসবুক লাইভ শুরু করলে পুলিশ সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আটক করে গারদে রাখে। দিনভর সমালোচনার পর গভীর রাতে দুজনকে মুক্তি দেয়া হয়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ। পরদিন থেকে সেই খালি জায়গা ঘিরে নানা সংগঠনই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

কলাবাগানের তেঁতুলতলায় সরকারি খাস জমিতে থানা না করে সেটি খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়ার আন্দোলন বড় হচ্ছে।

গত ২৪ এপ্রিল মা-ছেলেকে আটক করে কয়েক ঘণ্টা বন্দি রাখার পর থেকে সেই মাঠ ঘিরে প্রতিদিনই নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

টানা কর্মসূচির মধ্যে বুধবার মাঠের পাশে সমাবেশের পাশাপাশি সেখানে বৃক্ষ রোপণ করা হয়। এ সময় তেঁতুলতলাকে মাঠ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়।

কলাবাগানের তেঁতুলতলা এলাকায় সরকারি খাস জমিতে বছরের পর বছর স্থানীয় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করত। এ জমিটিতে কলাবাগান থানা করতে সম্প্রতি বরাদ্দ দেয়া হয়। এর পর থেকে সেই জায়গাটি মাঠ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা।

তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদের পাপেট শো। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা

গত ২৪ এপ্রিল সেই এলাকায় ফেসবুক লাইভ শুরু করলে পুলিশ সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আটক করে গারদে রাখে। দিনভর সমালোচনার পর গভীর রাতে দুজনকে মুক্তি দেয়া হয়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ।

পরদিন থেকে সেই খালি জায়গা ঘিরে নানা সংগঠনই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

দুপুরে তেঁতুলতলায় মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশকর্মী, সাংকৃতিককর্মী ও স্থানীয়রা মিলে বৃক্ষ রোপণ করেন। এ সময় সেখানে ছোটখাটো একটি সমাবেশের মতো জনসমাগম তৈরি হয়। বক্তব্য শেষে মাঠের সীমানা ঘেঁষে ১৪টি দেশীয় গাছ রোপণ করা হয়।

স্থানীয় শিশু-কিশোররা মাঠে উপস্থিত হয়ে ‘মাঠ চাই-মাঠ চাই, দাবি মোদের একটাই’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে।

এ সময় সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, ‘তেতুঁলতলা মাঠ, আমাদের মাঠে আমরাই খেলব। ড্যাপের প্রস্তাবিত ম্যাপের একটি চিত্র রয়েছে। যাতে কলাবাগান এলাকার একটি মানচিত্র রয়েছে, যাতে এই তেঁতুলতলা মাঠটি মাঠ হিসেবেই চিহ্নিত রয়েছে।’

সাইনবোর্ডটি প্রচারে- শিশু কিশোর ও নাগরিকবৃন্দ লেখা ছিল।

খেলার মাঠ রক্ষায় সেখানে গাছের চারা রোপণ করছে শিশুরা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা

মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি

সমাবেশে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন বলেন, ‘তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা না করা হলে, থানা ভবন নির্মাণ বন্ধ না হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঘেরাও করা হবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘যারা এখানে খেলে, যারা এ মাঠের প্রকৃত মালিক তারা এখানে আছে। তারা প্রতিবাদ করছে আমাদের মাঠ কেন দখল করা হচ্ছে? আমরা সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছি, সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথাবার্তা বলেছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, তিনি এখানকার স্থানীয় কয়েকজনকে কথা বলার জন্য ডেকেছেন, তারা ওখানে গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা যেখানে-সেখানে যখন খুশি মাঠ নিয়ে নেবেন, পুলিশ যদি এটা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে, তাহলে আর মাঠ থাকবে না।

কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠে থানা স্থাপনের প্রতিবাদে শিশু-কিশোররা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা

‘দ্বিতীয়ত বলা হচ্ছে, এখানে যারা খেলত, তারা তো কলাবাগান মাঠে গিয়ে খেলতে পারবে। কিন্তু কলাবাগান মাঠে তো সব সময় সবাইকে ঢুকতে দেয়া হয় না। তাহলে এ এলাকার নতুন প্রজন্ম কোথায় যাবে?’

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘স্থানীয় বাসীন্দারা যখন আন্দোলন শুরু করেছে, নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে, আটক হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আমরা বেশ কয়েকটি সংগঠন কর্মসূচি পালন করছি।‘আজকে এত কিছুর পরও আমরা লক্ষ করছি, এখানে দেয়াল তৈরি হচ্ছে, এর মাধ্যমে তারা এক ধরনের অপকৌশল নিচ্ছে। দেয়াল নির্মাণের মধ্য দিয়ে মাঠ ব্যবহার সীমিত হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘অনতিবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসুক, এটিকে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার মাঠ হিসেবেই বিবেচনা হোক। কোনো গোষ্ঠীকে যেন না দেয়া হয়, কোনো থানা বা কোনো স্থাপনা যেন তৈরি না হয়। এখানকার শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ, সামাজিক কর্মকাণ্ড, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্যই যেন উন্মুক্ত থাকে।’

তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলন করে বন্দি হওয়া সৈয়দা রত্না বলেন, ‘আমি এই মাঠ উন্মুক্ত দেখতে চাই। এই মাঠে এলাকার ছেলেমেয়েরা খেলা করবে। মাঠটি শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করাই আমার একমাত্র চাওয়া। মাঠে শিশু-কিশোররা খেলতে পারলে আমার আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।

তেঁতুলতলা মাঠে গাছের চারা রোপণ করেছেন স্থানীয়রা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে থানা চান জাফরুল্লাহ

কর্মসূচিতে যোগ দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীও। তিনি মাঠের দাবিতে আন্দোলন বন্ধ না করার পরামর্শ দিয়ে প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের বাড়িতে থানা করার প্রস্তাব দেন।

তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় আন্দোলনে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা

জাফরুল্লাহ বলেন, ‘কোথাও জায়গা না পেলে মাননীয় মন্ত্রী আপনার বাড়ির একটু জায়গা দেন। তাতে আপনার সুনাম হবে। আর কোথাও জায়গা না পেলে পাশের বহুতল ভবনের চারতলা-পাঁচতলা নিয়ে নেন, সেখানে থানা করেন।’

আন্দোলনকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি যাওয়া চলবে না, আমরা সম্মিলিতভাবে মাঠকে রক্ষা করব। মাঠের পাশে দেয়াল, ইট-বালি ছুড়ে ফেলার আন্দোলনে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব। নিজের জীবনের জন্য এ মাঠ আমাদের রক্ষা করতে হবে।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘তেঁতুলতলা মাঠ শিশুদের ফুসফুস, বয়স্কদের ফুসফুস, এ ফুসফুস নষ্ট করতে দেয়া যাবে না। এখানে থানা নির্মাণের অন্যায় অনুমতি পেলেই আমরা মেনে নেব না। এখান থেকে ইট-পাথর সরাতে হবে, না হলে আমরা এখানে আস্তানা গাড়ব।’

এ বিভাগের আরো খবর