বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাতে ঈদের কেনাকাটা

  •    
  • ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:৩১

ঈদের বাকি আর সপ্তাহখানেক। ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মার্কেট মুখর হয়ে উঠছে। দিনে অসহনীয় গরম আর যানজট। তাই গরম আর ভিড় এড়িয়ে স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটার জন্য অনেকে বেছে নিয়েছেন রাতের বেলা।

আসিফ হোসেন ব্যাংকে চাকরি করেন। বিকেলে অফিস শেষে সন্ধ্যায় এসেছেন কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে। গুণগত পণ্যের খোঁজে এক শপিং মল থেকে যাচ্ছেন আরেক শপিং মলে।

সদ্য বিবাহিত আসিফের শপিংয়ে সঙ্গী তার স্ত্রী। আসিফ বললেন, এবারের ঈদটা তার জন্য স্পেশাল। কারণ বিয়ের পর এটাই তার প্রথম ঈদ। তাই কেনাকাটা করতে হচ্ছে যাচাই বাছাই করে। রাত ১২টায় এ প্রতিবেদককে জানান, কেনাকাটা শেষ করতে লাগবে আর ঘণ্টাখানেক।

ঈদের বাকি আর সপ্তাহখানেক। ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মার্কেট মুখর হয়ে উঠছে। দাবদাহে পুড়ছে সারা দেশ। দিনে প্রচণ্ড খরতাপে অতিষ্ট জনজীবন। তাই গরম আর ভিড় এড়িয়ে স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটার জন্য অনেকে বেছে নিয়েছেন রাতের বেলা।

নানান পোশাকের নিত্যনতুন কালেকশনের পসরা সাজিয়েছে কুমিল্লা নগরীর বিপণিবিতানগুলো। ফুটপাতেও বিকিকিনি চলছে বেশ।

নগরীর চকবাজার থেকে নিজের ও শাশুড়ির জন্য দুটি শাড়ি কিনেছেন কলেজ শিক্ষিক হাসিনা জান্নাত। তিনি বলেন, ‘রোজা রেখে দিনের বেলা কেনাকাটা করা সম্ভব না। রাতের বেলা এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরে কাপড়ের গুণগত মান দেখে কেনা যায়। তাই রাতেই আসা।’

নগরীর রেইসকোর্স ইষ্টার্ণ ইয়াকুব প্লাজার গ্যালারি ২১ এর স্বত্বাধিকারী বাপন জানান, তার দোকানে তরুণীদের সব রকমের পোশাক তুলেছেন। দিনভর বিক্রি হয়। তবে ইফতারের পর থেকে বিকিকিনি অনেক বেড়ে যায়। চার জন বিক্রয়কর্মী নিয়ে বিকিকিনি সামলাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

গ্যালারি ২১ এ ভারতীয় থ্রী পিস কিনতে আসা মাহবুবা কামাল রুজি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদে নতুন কালেকশনগুলো অনলাইনে দেখে এসেছি। রঙ ও কাজ মিলিয়ে দেখে কিনতে একটু সময় লাগে। তাই ইফতারের পর এসেছি। দিনে রোজা রেখে রোদের মধ্য একটা শপিং মল থেকে আরেকটাতে যেতে অনেক কষ্ট হয়। এছাড়াও যানজটের বাড়তি যন্ত্রণা থাকে।’

নগরীর কান্দিরপাড় সাত্তারখান শপিং কমপ্লেক্সের জুতো দোকানী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আর দুই একদিন পরে রাতজুড়েই বিকিকিনি চলবে। এখন দোকান বন্ধ করতে করতে ২টা বেজে যায়।’

ইস্টার্ণ ইয়াকুব প্লাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘শপিং মলের ভেতরে যেন ক্রেতারা নিজেদের পছন্দ মতো কেনাকাটা করতে পারেন, সে জন্য সকল রকম ব্যবস্থা করা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি গুরত্ব দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি।’

এদিকে কুমিল্লার মনোহরপুর দর্জি পাড়ায় চলছে কাঁচি দিয়ে কাপড় কাটা, মাপ নেয়ার কাজ। পালা করে কাজ করেন কারিগররা। রাতভর সজাগ থেকে ভোরে ঘুমাতে যান তারা। এ সময় আরেক দল শুরু করেন খদ্দরের অর্ডার করা পোশাকের সেলাইয়ের কাজ।

তানিয়া টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত দুই বছর করোনার কারণে মানুষ তাদের পছন্দের পোশাক কিনতেও পারেনি, বানাতেও পারেনি। এ বছর যেহেতু করোনার সংক্রমণ নেই, তাই তৈরি পোষাকের চাহিদা বেড়েছে।’

কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুরো জেলায় দোকানিরা নির্বিঘ্নে বেচাকেনা করছেন। বিশেষ করে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর শপিং মল ও ফুটপাতে মানুষ কেনাকাটায় ব্যস্ত। আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সবকিছু মনিটরিং করছি।’

এদিকে ভোক্তারা যেন কোনও পণ্য কিনে প্রতারিত না হন, সে জন্য নিয়মিত তদারকি অভিযান পরিচালনা করছেন কুমিল্লা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগে আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করছি। আমরা ক্রেতার লিখিত ও মৌখিক কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের নিয়মিত তদারকি চলছে। ঈদ পর্যন্ত বিশেষ তদারকি চলবে।’

ঈদে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মধ্যরাত কেন, দিনরাত সমান তালে নগরীতে টহল দিচ্ছে পুলিশ। রয়েছে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। অন্যান্য থানাগুলোতেও নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করা আছে।’

এদিকে ঝালকাঠিতেও দিনের চাইতে রাতে মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে বেশি। বিশেষ করে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। ক্রেতারা বলছেন, দিনের বেলায় কর্মক্ষেত্রে থাকা, ভ্যাপসা গরম এবং রমজানে ভিড় এড়াতে রাতে কেনাকাটা করতেই স্বাচ্ছন্দ্য তাদের।

বিপণিবিতানগুলোর ভেতরে পোশাকের সমাহার আর বাইরে ঝলমলে রঙিন বাতি; যা নজর কাড়ছে ক্রেতা সাধারণের। নানান পোশাকের নিত্য নতুন কালেকশন নিয়ে পসরা সাজিয়েছে ফ্যাশন হাউজগুলো। ফুটপাতেও বিকিকিনি চলছে বেশ। মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকার বিপণিবিতান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

জামা কিনতে আসা মো. তৌহিদুল বলেন, ‘পরিবার নিয়ে রাতে বের হয়েছি। গত ৪ দিনের খড়তাপে ঘরে থাকাই কষ্টকর। রোজা রেখে দিনে কষ্ট হয়ে যায়।’

আরেক ক্রেতা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘দিনে এতোটাই গরম থাকে স্ত্রী ও ছোট বাচ্চা নিয়ে বের হওয়া সম্ভব না। তাই পোনাবালিয়া গ্রাম থেকে রাতে কেনাকাটা করতে আসছি।’

পৌর শহরের কাঠপট্টি এলাকা থেকে আসা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দিনে গরম বেশি, তাই সবাই এখন রাতে আসে বিপণিবিতানে। তাতে রাতে মার্কেটে যে গ্যাদারিং হয়, এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েও আমরা চিন্তিত।’

জারা কসমেটিকসের মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কসমেটিকস কেনাবেচা এখনো বাড়েনি, সবাই জামা-কাপড় ও জুতা কেনাকাটা শেষ করে কসমেটিকস কিনবে। তার ওপর প্রচণ্ড গরম। গরমে আশানুরূপ বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি।’

সুহা কসমেটিকস এবং লাবনী ষ্টোরের মালিক সিরাজ ও রুবেল জানালেন একই কথা। তাদের আশানুরূপ বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি। তাপদাহ থাকায় কেনাকাটা করতে মানুষ দিনে কম বের হয়, আর রাতে কাষ্টমার থাকে ৪ ঘণ্টা।

পাদুকা দোকানি লিটন বলেন, ‘বৃষ্টি হলে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকত। এতে দিনে মানুষ বাড়ত, বেচাকেনাও কিছুটা ভালো হত।’

ঈদ বাজারে জেলার মার্কেটগুলোতে আস্তে আস্তে ভিড় বাড়ছে। বিক্রেতারা কেউ কেউ বলছেন, আশানুরূপ বেচাকেনা হচ্ছে না; আবার কেউ কেউ সাড়া পাচ্ছেন ভালোই।

কুমারপট্টি এলাকার হাজী জয়নাল কমপ্লেক্সের শরীফ বস্ত্র বিতানের প্রোপাইটর মো. শামিম শরীফ বলেন, ‘সাধারণ কাষ্টমারের ক্রয় ক্ষমতার দিক বিবেচনা করে দোকানে মালামাল তুলেছি, ৫০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে ছেলে-মেয়েদের পোশাক তুলেছি। বেচাকেনায় বেশ ভালোই সাড়া পাচ্ছি।’

কুমার পট্টির পোশাকের দোকান ‘রঙ’ এর মালিক মো. রাকিব হোসেন বলেন, ‘গত দুই দিন বিক্রি বেড়েছে। তবে কাষ্টমারদের একটা অংশ অনলাইনে শপিং করছেন। আমাদের দোকানে এসেও অনলাইনের মতো পণ্য চাচ্ছেন।’

কসমেটিকস ব্যাবসায়ীরা জানান, ক্রেতারা আগে পোষাক ও পদুকা কিনবে তারপর কসমেটিকস। তাই পোশাক ও পাদুকার দোকানে কিছুটা ভিড় থাকলেও তাদের দোকানগুলোতে তুলনামূলক বিক্রি কম।

জারা কসমেটিক্স এর মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সবাই এখন জামা-কাপড় ও জুতা কিনছে। এগুলো শেষ করে কসমেটিকস কিনবে। আমাদের আশানুরূপ বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর