শরীয়তপুরের মাঝিরঘাট ফেরিঘাটে চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় শহীদ চেংগাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জাজিরার মাঝিরঘাট ফেরিঘাট এলাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে পদ্মা থানা পুলিশ।
রাতেই থানার এসআই ফরিদ হোসেন ফেরিঘাটে চাঁদাবাজির অভিযোগে শহীদ চেংগাসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে জাজিরা থানায় মামলা করেন।
বুধবার সকালে নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন পদ্মা থানার ওসি মিন্টু মণ্ডল।
ওসি মিন্টু মণ্ডল জানান, মাঝিরঘাট ফেরিঘাটে যানবাহনের চালকদের থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের বিষয়ে নিউজবাংলাসহ একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
বিষয়টি নজরে এলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান তদন্ত করে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশনার পর মঙ্গলবার বিকেলে মাঝিরঘাট এলাকায় অভিযানে যায় পদ্মা থানা পুলিশ।
এ সময় ট্রাকচালকদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা অবস্থায় চাঁদাবাজচক্রের মূল হোতা শহীদ চেংগাকে আটক করে পুলিশ। তার কাছ থেকে ট্রাকচালকদের থেকে আদায় করা চাঁদার ৭ হাজার ৩০০ টাকা জব্দ করা হয়।
পরে আটককৃত শহীদ চেংগার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মাঝিরঘাট এলাকার জলিল ও মাহাবুবের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের অভিযোগে জাজিরা থানায় মামলা করে পুলিশ।
ওসি মিন্টু মণ্ডল বলেন, ‘মামলার অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
জাজিরা থানার ওসি ফারুক আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাঁদাবাজচক্রের মূল হোতা শহীদ চেংগাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হবে।’
এর আগে গত ২২ এপ্রিল ‘মাঝিরঘাটে চাঁদাবাজ আতঙ্কে ট্রাক চালকরা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে নিউজবাংলা। সেখানে মাঝিরঘাট ফেরিঘাটে চাঁদা আদায়ের চিত্র তুলে ধরা হয়।
ট্রাকচালকদের একজন মো. রফিকের সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘ট্রাক নিয়ে বিকেল থেকে সিরিয়ালে দাঁড়ায়া ছিলাম। মাঝরাতে সিরিয়াল অনুযায়ী ফেরিতে ওঠার জন্য ট্রাক চালু করার সঙ্গে সঙ্গে ছয়-সাতজনের একটা দল আইসা ১২০০ টাকা চাঁদা দাবি করে।
‘টাকা দিতে না চাইলে তারা আমার গায়ে হাত তোলে। ট্রাকের দরজা খুলে বাইরে এনে মারপিটের চেষ্টা করে। পরে ১ হাজার টাকা দিয়ে ওখান থেকে বাইর হইয়া আসি। আমার মতো আরও বেশ কয়েকজন ড্রাইভারের সঙ্গে ওরা একই আচরণ করছে।’
রফিকের মতো অভিজ্ঞতা আছে অনেক চালকের। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় শহীদ চেংগার নেতৃত্বে ঘাটে এমন চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। প্রতিবাদ করলেই নির্যাতন সইতে হয় চালকদের।
দিনের বেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও রাত ১০টার পর ঘাটের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় স্থানীয় শহীদ চেংগা ও তার অনুসারীদের দখলে। সম্প্রতি এক ট্রাকচালককে করা নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে।
১৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, এক ট্রাকচালককে মাটিতে ফেলে লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটাচ্ছে আট থেকে ১০ জনের দল। ওই ভিডিওর পরিপ্রেক্ষিতে ঘাট পরিস্থিতি জানতে গত রোববার রাতে মাঝিরঘাটে যায় নিউজবাংলা টিম।
সেখানে গিয়ে নিউজবাংলা জানতে পারে, রাত ১০টার পর থেকে ফেরির জন্য অপেক্ষায় থাকা পণ্যবাহী ট্রাক সিরিয়াল পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ করে টাকার চুক্তি করেন শহীদ চেংগা ও তার সমর্থকরা। চুক্তি অনুযায়ী টাকা ঘাটে থাকা আরিফের ফলের দোকানে জমা দিতে হয়। টাকা তোলার পর চক্রের সদস্যরা নির্ধারিত ট্রাকগুলোকে রং সাইড দিয়ে ঘাটের দিকে নিয়ে আসেন। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যও রং লাইনে আসা সেসব ট্রাক পারাপারের সুযোগ করে দেন।