আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হচ্ছে আজ। সকাল ৮টা থেকে পঞ্চম দিনের মতো টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ দেয়া হচ্ছে ১ মের টিকিট।
গত শনিবার টিকিট বিক্রির শুরুর দিন থেকেই প্রতিদিন উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে যারা টিকিট পেয়েছেন তারা হাসিমুখে ফিরেছেন। আর যারা পাননি তারা পরের দিন আবার লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এমন ঘটনা প্রতিদিনই নজরে এসেছে।
কিন্তু আজকের পর আর টিকিট পাওয়া যাবে না। নীড়ে ফেরা ও ঈদের আনন্দ আপনজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই একটি টিকিট পেতে অধীর অপেক্ষায় টিকিটপ্রত্যাশীরা। বেশ লম্বা লাইন কাউন্টারগুলোর সামনে।
নাওয়া-খাওয়া ভুলে কেউ এক দিন, আবার কেউ দুই দিন স্টেশনে অবস্থান করছেন, এমন মানুষের সংখ্যা শত শত। যাদের একটা বড় অংশ স্টেশন এলাকাতেই সেরেছেন ইফতার ও সেহরি। অনেক নারীও এসেছেন সেহরির আগেই। তাদেরও লক্ষ্য একটি টিকিট প্রাপ্তি।
শেষ দিনে কমলাপুরে টিকিট না পেলে বাড়ি যাওয়া অনিশ্চিত। ছবি: নিউজবাংলা
কথা হয় একটি বেসরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছোঁয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাবেন, তাই দুই দিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একটি টিকিটের জন্য। আজ টিকিট না পেলে তার যাত্রা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পাইনি। আজকে সেহরির আগেই এসেছি। যদি টিকিট না পাই তাহলে বাড়ি যাওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। বিকল্প ব্যবস্থার চিন্তা করতে হবে। যদি তা না হয়, তাহলে ঈদ হয়তো এখানেই করতে হবে।’
মুদ্রার উল্টোপিঠে প্রাপ্তির গল্প। বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেল গতকাল দুপুর ২টায় এসেছিলেন। সেহরি-ইফতার এখানেই হয়েছে জানিয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ১৯ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে যশোরের একটি টিকিট পেলাম৷ ইফতার, সেহরি এখানেই করতে হয়েছে। অনেক ধকল সইতে হয়েছে। তারপরও আমি অনেক খুশি।’
দুই দিন অপেক্ষার পর টিকিট পেয়েছেন বাবর আলী। রাজশাহীর এই তরুণ বলেন, ‘সোমবার সেহরি খেয়ে এসেছিলাম। টিকিট পাইনি। আজকে রাত ১টার সময় এসেছিলাম। না ঘুমিয়ে, শুয়ে-বসে, মশার কামড় খেয়ে একটা টিকিট পেলাম।’
‘এ আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। অনেক নির্ভার, যাকে বলে ফুরফুরে লাগছে। আমি আনন্দিত এই ভেবে যে, পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারব।’
বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নিজেরাই লাইন ব্যবস্থাপনার দেখভাল করছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। লাইনের বাইরে কেউ যেতে চাইলেই লাইনের পেছন থেকে অন্যরা জোরে চিৎকার দিয়ে উঠছেন। এতে কেউ লাইনের আগে যেতে সাহস করছেন না।
স্টেশন এলাকায় টিকিটপ্রত্যাশীদের লাইনে রাখতে একটু পর পরই বাঁশি বাজিয়ে সতর্ক করছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী-আরএনবি। কালো বাজারে যাতে কোনো টিকিট বিক্রি না হয়, সে জন্য স্টেশন এলাকায় রয়েছে র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। প্রতিটি বাহিনীর আলাদা বুথও রয়েছে স্টেশন এলাকায়।
প্রতিদিনের মতো আজও সকাল ৮টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই কাউন্টার খোলা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে কাউন্টার থেকে লাইন লম্বা হয়েছে অনেক দূর পর্যন্ত।
কাউন্টার ছাড়াও অনলাইনে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েও চেষ্টা চালাচ্ছেন অনলাইনে টিকিট পেতে। অনলাইনে টিকিট মিলছে না- এমন অভিযোগ শুরু থেকেই জানিয়ে আসছিলেন যাত্রীরা।
তবে এর জবাবে ঢাকা রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার জানিয়েছিলেন, অনলাইনে সাড়ে ৩০০ টিকিটের বিপরীতে আবেদন হাজার হাজার। ফলে যারা টিকিট পান না, তারাই বলেন যে, অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ১৩ এপ্রিল ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করলেও ৩ মে ঈদ ধরে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয় শনিবার (২৩ এপ্রিল) থেকে। ওই দিন দেয়া হয় ২৭ এপ্রিলের টিকিট। রোববার ২৮ এপ্রিল, সোমবার ২৯ এপ্রিল ও মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিলের টিকিট দেয়া হয়েছে।
যাত্রীর চাপ কমানোর লক্ষ্যে ঢাকা শহরের কমলাপুর, ঢাকা বিমানবন্দর, তেজগাঁও, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও ফুলবাড়িয়ায় (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়।
ঈদের পর ৫ মে যারা ঢাকায় ফিরবেন, তাদের জন্য ১ মে, ৬ মের জন্য ২ মে, ৭ মের জন্য ৩ মে এবং ৮ মের জন্য ৪ মে টিকিট বিক্রি করা হবে।