বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সহজ নয়, আসলে কঠিন

  •    
  • ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ০৮:৩৪

অনলাইনে টিকিট কাটতে না পেরে কমলাপুরে এসে লাইনে দাঁড়ানো রেলমন্ত্রীর নিজের জেলা পঞ্চগড়ের যাত্রী গোবেন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘সহজ শুধু খামোখাই আসছে। এরা নামই শুধু সহজ। অনলাইন তো সহজ করতে পারেনি। অনলাইনে যদি মানুষ নাই ঢুকতে পারে, তাহলে কীসের সহজ নাম। তাদের নাম হওয়া দরকার কঠিন।’

ঈদের আগে যখন অনলাইনে মানুষ ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য সার্ভারে ঢুকতে পারছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছে, ঠিক তখন উল্টো কথা বলছে রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সহজডটকম।

তারা বলছে, মানুষের ভোগান্তিতে তাদের দায় নেই। বিপুল পরিমাণ চাহিদার বিপরীতে অল্প টিকিট হওয়াই মূল কারণ।

তবে টিকিটপ্রত্যাশীরা যে সহজের এত সহজ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয়, সেটি স্পষ্টই। কয়েক হাজার টিকিটের জন্য কয়েক লাখ মানুষ যখন চেষ্টা করছে, তখন বেশির ভাগ মানুষকে নিরাশ হতে হবে, সেটি সহজবোধ্য। তাদের প্রশ্ন হলো, টিকিট কাটতে অনলাইনে ঢুকতে কেন এত ঝামেলা হবে।

আর এত কিছুর পরও সহজডটকম আসার পর ‘ইতিবাচক’ পরিবর্তন দেখছেন রেলমন্ত্রী।

বাসের টিকিট বিক্রি করে আলোচনায় আসা সহজ ডটকম রেল টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হয়েছে গত মার্চে। তবে বিসমিল্লাতেই দেখা যায় গলদ। সহজের আসলে এত বড় দায়িত্ব নেয়ার মতো সক্ষমতাই ছিল না। তাদের নিজস্ব যে ওয়েবসাইট, তা এত যাত্রীর ভার নেয়ার মতো উপযুক্ত নয়। পরে রেলের ওয়েবসাইট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় তারা।

কিন্তু সহজ দায়িত্ব নেয়ার পর তালগোল পাকিয়ে ফেলে। পুরো হ্যাং হয়ে যায় ওয়েবসাইট। এরপর যখন টিকিট বিক্রি শুরু হয়, তখন দেখা যায়, টিকিটের বিনিময়ে কোনো টাকা কাটেনি, এমনও দেখা যায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে ঢাকা থেকে জামালপুর পর্যন্ত ভাড়া কাটা হয়েছে ২০ টাকা।

এসব অভিজ্ঞতার কারণে ঈদযাত্রায় সহজ কী করবে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে রেল ও সহজ দাবি করে, সমস্যা হবে না।

কিন্তু গত শনিবার ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি শুরুর পর দেখা যায়, আশঙ্কাই সত্য হয়েছে। প্রতিদিন ২৬ হাজার ৬৬৩টি টিকিটের মধ্যে অর্ধেক বিক্রি করা হচ্ছে অনলাইনে। কিন্তু সেদিন সকাল থেকেই অনলাইনে টিকিটের জন্য সাভারে ঢোকাই যাচ্ছিল না।

যারা ঢুকতে পেরেছেন, তারা ‘ইউ আর ভেরি ভ্যালুয়েবল টু আস’ এমন লেখা দেখতে পেয়েছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। এরপর যখন সার্ভারে প্রবেশ করা গেছে, তখন দেখা গেছে টিকিট নেই।

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য সার্ভারে ঢুকতে না পেরে কমলাপুরে হাজারো টিকিটপ্রত্যাশীর ভিড়। ছবি: নিউজবাংলা

ক্ষোভ চরমে

সোমবার সহজডটকমে ট্রেনের টিকিট কাটতে না পেরে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। যাদের সবারই প্রশ্ন সহজডটকমে এত আস্থা কেন রেলের।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের নিজের জেলা পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে বাড়ি গোবেন চন্দ্র বর্মণের। রাজধানীর শ্যামপুরের একটি কারখানায় কাজ করেন তিনি। অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে ব্যর্থ হয়ে এসেছেন কমলাপুরে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সহজ শুধু খামোখাই আসছে। এরা নামেই শুধু সহজ। অনলাইন তো সহজ করতে পারেনি। অনলাইনে যদি মানুষ নাই ঢুকতে পারে, তাহলে কীসের সহজ নাম। তাদের নাম হওয়া দরকার কঠিন।’

পঞ্চগড়ের সদরে বাড়ি ফাহিম ইসলামের। তিনিও শ্যামপুরের একটি টেক্সটাইল কারখানায় কাজ করেন। বললেন, ‘সহজ ডটকম একদম বাজে। সার্ভারে টিকিট কেউই পাইনি। রেল মন্ত্রণালয় যে কেন তাদের দায়িত্ব দিয়েছে?’

কী মনে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ওনাদের ব্যাপার। উনারা তো আমাদের কাছে মানে জনগণের কাছে কোনো দিন জানতে চান না, কোনটা করলে ভালো হয়। নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে।’

গাইবান্ধা যাবেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক নারী জানালেন, তিনিও অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে ব্যর্থ হয়ে কমলাপুরে এসেছেন।

দিনাজপুরে বাড়ি আব্দুল আউয়ালের। ঢাকায় থাকেন মালিবাগে। সোমবার কমলাপুর আসার আগে অনলাইনে দীর্ঘ সময় টিকিট কাটার চেষ্টা করেছেন।

সহজডটকমের অনলাইন টিকিটিং প্রসঙ্গে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরা শুধু নামেই সহজ। কিন্তু বাস্তবতায় অনেক কঠিন। যে একবার ওদের সারবারে ঢুকে, সেই বোঝে। শুধু ভোগান্তির জন্যই এটা খুলে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সহজ সব সময় বড় বড় কথাই বলে। কিন্তু বাস্তবতা একদম উল্টো।

তিনি বলেন, ‘রেল কেন এদের কাজ দিল জানি না। তবে সেখানে তো সবাই বড় বড় পদের লোক। টাকার খেলা।’

জয়পুরহাটে বাড়ি আলমের। তিনিও কমলাপুরে এসেছেন। থাকেন নারায়ণগঞ্জে, করেন শিক্ষকতা। তিনি বললেন, ‘সহজডটকম মনে হয় সিন্ডিকেট ব্যবসা করছে। ওরা তো টিকিট পাসিং করে দিচ্ছে।

যা বলছেন রেলমন্ত্রী

অনেকেই অনলাইনের টিকিট কোথায় গেল এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সহজ আসার পর রেলের পরিবর্তন দেখছেন কি না জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সোমবার বলেন, ‘অবশ্যই পরিবর্তন হয়েছে।’

কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অনলাইনে টিকিট পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছে, ক্ষোভ প্রকাশ করছে- এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই তো পাবে না।’

তিনি বলেন, সহজের যে সক্ষমতা সে অনুসারে তারা টিকিট দিচ্ছে।

যা বলছে সহজডটকম

সহজডটকমের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফরহাত আহমেদ এসব নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে সোমবার তার প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য তুলে ধরেন।

অনেকে লগ ইন করতে পারছেন না- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লগইন করতে পারছে না, এটা দেখতে হবে যে বহিরাগত কোনো সমস্যা আছে কি না। এ ক্ষেত্রে তার ইন্টারনেট সংযোগ কেমন সেটাও যেমন দেখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সার্ভার গত শনিবার থেকে এক মিনিটের জন্য ডাউন হয়নি। সার্ভার ক্র্যাশও করেনি। আমরা যে সফটওয়্যার ব্যবহার করছি, এতে আমরা কিউ ম্যানেজমেন্ট করতে পারছি।

‘সোমবার সকাল ৮টায় প্রথম মিনিটে ওয়েবসাইটে ১৮ লাখ হিট এসেছে। এর পরও ওয়েবসাইট ডাউন হয়নি। এই ১৮ লাখের মধ্যে আমার টিকিট বরাদ্দ ১৩ হাজারের কিছু বেশি। এ জন্য যেই ১৩ হাজার প্রথমে হিট করেছে, তারা প্রথমে টিকিট পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘১৮ লাখের মধ্যে ৩০ সেকেন্ডে যদি সবাই টিকিট কেটে নিয়ে যায় তাহলে তো ১ মিনিটেই টিকিট শেষ হবে। যে পরিমাণ টিকিট বরাদ্দ আছে সেটা যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে তো আমরা টিকিট দিতে পারব না ‘

অনেকে বলেছেন টাকা কেটে নিয়েছে, কিন্তু টিকিট দেয়নি- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো শুরুতে ছিল। এখন এমন সমস্যা হয় না বললেই চলে। যদি এমন সমস্যা হয়েও থাকে সেটা প্রযুক্তিগত ব্যাপার। এমন হলে আমরা টাকা ফেরত দিয়ে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘সহজডটকমের মানুষের ভোগান্তির জন্য কোনো দায় নেই। ঈদের সময় বাড়তি চাপ থাকে। আমরা সে জন্য সে ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই শুরু করেছি।’

এ বিভাগের আরো খবর