আইনি জটিলতা নিরসনের পর পাবনায় আবারও শুরু হয়েছে ইছামতী নদী পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান।
মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শহরের শালগাড়ীয়া গোলাপবাগ এলাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ সময় নদী দখল করে গড়ে তোলা কয়েকটি বাড়ি ভেঙে দেয়া হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পাবনার কর্মকর্তারা জানান, ইছামতী নদীর তীরে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসন নোটিশ দিলে ৪৩ ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট তাদের দাবির বিষয়ে নদী কমিশনকে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
আদেশের পর নদী কমিশনের চেয়ারম্যান সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ৪৩ ব্যক্তির দখলে থাকা জায়গাকে ইছামতী নদীর জায়গা হিসাবে মতামত দেয়া হয়।
নদী কমিশনের প্রতিবেদন চ্যালেঞ্জ করে ৪৩ ব্যক্তি হাইকোর্টে আবারও রিট করলে উচ্ছেদ কার্যক্রমে স্থগিত করেন হাইকোর্ট। গত রোববার শুনানি শেষে তাদের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় নদী পুনরুদ্ধারে আবারও অভিযান শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, ‘শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদীকে বলা হতো পাবনার প্রাণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহ থেকে বহুবার পানসি ভাসিয়ে ইছামতীতে ঘুরেছেন। ইছামতীকে কেন্দ্র করেই প্রসারিত হয়েছে জেলার ব্যবসা–বাণিজ্য।
‘স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত নদীটির প্রাণ ছিল। এরপর দিনে দিনে নদীর দুই পাড় দখল হতে শুরু করে। উৎসমুখ আটকে বন্ধ হয়ে যায় পানিপ্রবাহ। এখন নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। জমেছে ময়লা–আবর্জনার স্তূপ। বাড়ছে মশার উপদ্রব, দূষিত হচ্ছে শহরের বাতাস। চিহ্নিত কয়েকজন অবৈধ দখলদার অহেতুক আইনি জটিলতা তৈরি করে নদী উদ্ধার কাজে বাধা দিচ্ছিলেন। তাদের স্থাপনাও উচ্ছেদ হওয়ায় নদী উদ্ধারে গতি আসবে।’
পাউবোর এক কর্মকর্তা জানান, শহরের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে নদীটির দখলদার উচ্ছেদ ও খননের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে নদীর দখলদার উচ্ছেদের জন্য ২ কোটি ৭৯ লাখ ও খননের জন্য ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে।
২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর নদীর উৎসমুখ থেকে লাইব্রেরি বাজার সেতু পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে খননকাজ শুরু করা হয়। এ সময় পুরো নদীর ৫ শতাংশ এলাকায় উচ্ছেদ ও ১৮ শতাংশের খননকাজ করা হয়। পরে আইনি জটিলতায় আবারও উচ্ছেদ ও খননকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহীন রেজা বলেন, ‘পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দখল দূষণে মৃতপ্রায় ঐতিহ্যবাহী ইছমতি নদী অবৈধ দখল মুক্ত ও পুনঃখনন করে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। আইনি বাধার কারণে তা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
‘হাইকোর্ট নদীতে স্থাপনা গড়া ৪৩ ব্যক্তির রিট আবেদন খারিজ করে দেয়ায় আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। নিম্ন আদালতে আরও পাঁচটি মামলা রয়েছে। এসব মামলা নিষ্পত্তির পথে। আমরা দ্রুতই ইছমতী নদীকে অবৈধ দখলমুক্ত করার কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হাসান বলেন, ‘হাইকোর্টের রিট খারিজের পর জেলা পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে নদী উদ্ধারে পুনরায় অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সি এস ম্যাপ অনুযায়ী নদী পুনরুদ্ধার করা হবে।’
এদিকে, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কয়েকজন দখলদার। অবৈধ দখল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার আগে দীর্ঘদিন করে তাদের জমির জন্য ভূমিকর ও খাজনা নেয়া হয়েছে জানিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তারা।