বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বাধীন মতপ্রকাশ নিশ্চিত না হলে দেশ পেছনের দিকে হাঁটবে: আদালত

  •    
  • ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৬:৫৫

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, ‘ফয়জুলের এহেন কাজ নিঃসন্দেহে একটি সন্ত্রাসী কাজ, আরও স্পষ্ট করে বললে ধর্মীয় সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নয়। স্বাধীন মতপ্রকাশ, পরমতসহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র, প্রগতিশীলতা তথা সভ্যতার অগ্রগতির নির্ণায়ক। এগুলোর চর্চা নিশ্চিত করা না গেলে দেশ নিশ্চিতভাবেই পেছনের দিকে হাঁটবে।’

‘স্বাধীন মতপ্রকাশ, পরমতসহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র ও প্রগতিশীলতা সভ্যতার অগ্রগতির নির্ণায়ক। এগুলোর চর্চা নিশ্চিত করা না গেলে দেশ নিশ্চিতভাবেই পেছনের দিকে হাঁটবে।’

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে এমনটি বলেছেন সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব।

মঙ্গলবার দুপুরে চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় দেয়া হয়। রায়ে প্রধান আসামি ফয়জুল হাসানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। এ ছাড়া তার বন্ধু মো. সোহাগকে ৪ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান আসামি ফয়জুল সম্পর্কে বিচারক বলেন, ‘আসামি ফয়জুল হাসান দেশ বা কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে প্রমাণ হয়নি। সে মুফতি জসিমউদ্দিন রহমানীর (হাফিজাল্লা) বই পড়ে ও বক্তব্য শুনে বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতি সংক্ষুব্ধ হয়। অধ্যাপক জাফর ইকবাল বিভিন্ন সময়ে ব্লগার ও নাস্তিকদের পক্ষে কথা বলায় বিশেষত শিশুতোষ গ্রন্থ ‘ভুতের বাচ্চা সুলেমান’ লিখে তিনি নবী সুলায়মান (আ.) কে কটূক্তি করেছেন বলে কাল্পনিক অভিযোগ তুলে তাকে নিজ হাতে হত্যার পরিকল্পা করে ফয়জুল।

‘জাফর ইকবালকে ইসলামের শত্রু ও নাস্তিক আখ্যায়িত করে সে হত্যার চেষ্টা চালায়। ইসলাম ধর্মের প্রকৃত মর্মবাণী না বুঝে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা পুণ্যের কাজ মনে করে আসামি এই বর্বর হামলা চালিয়েছে। ইন্টারনেট সাইটে জিহাদি আর্টিকেল, জিহাদি বই পড়ে এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী বক্তার কথা শুনে সে সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অপর আসামি সোহাগ মিয়া কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ফয়জুলকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন জিহাদি বই, অডিও ও ভিডিও ক্লিপ সরবরাহ করে দেশের মুক্তমনা লেখকদের হত্যার ব্যাপারে সলাপরামর্শ করত।’

পর্যবেক্ষণে অধ্যাপক জাফর ইকবাল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জাফর ইকবাল শিক্ষকতার বাইরে দেশের একজন জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক ও বিজ্ঞান লেখক। বিজ্ঞান বিষয়ে ও শিশুতোষ গ্রন্থ লিখে তিনি জাতীর মননশীলতা গঠনে ভূমিকা পালন করে চলছেন। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীলতার পক্ষে তার অবস্থান সর্বজনবিদিত।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, ‘ফয়জুলের এহেন কাজ নিঃসন্দেহে একটি সন্ত্রাসী কাজ, আরও স্পষ্ট করে বললে ধর্মীয় সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নয়। শুধু ভিন্নমত প্রকাশের জন্য এ দেশে হত্যকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর কারণে ভিকটিমের ওপর এহেন কার্য কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

‘স্বাধীন মতপ্রকাশ, পরমতসহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র, প্রগতিশীলতা তথা সভ্যতার অগ্রগতির নির্ণায়ক। এগুলোর চর্চা নিশ্চিত করা না গেলে দেশ নিশ্চিতভাবেই পেছনের দিকে হাঁটবে। স্বাধীন ও গঠনমূলক ভিন্নমত চর্চার মাধ্যমেই সঠিক পথ পাওয়া সম্ভব।’

অনলাইনে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য গুরুত্বারোপ করে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘কিছু স্বার্থান্বেষী গ্রুপ কৌশলে ভার্চুয়াল জগতে তাদের উগ্রবাদী সন্ত্রাসী মতবাদ ছড়িয়ে, সহজে বেহেশতে যাওয়ার শর্টকাট রাস্তা দেখিয়ে তরুণ প্রাণে সন্ত্রাসবাদের বীজ বপন করছে। সাইবার জগতে এসব উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উৎসাহ প্রদানকারী বিভিন্ন সাইট বা গ্রুপ চিহ্নিত করে তাদের প্রচারিত তথ্যের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও জোরালো ও কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ জরুরি বলে ট্রাইব্যুনাল মনে করে।’

হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিচারক বলেন, ‘হামলার নৃশংসতা এবং বীভৎসতা দ্বারা যেসব লেখক মুক্তবুদ্ধি, প্রগতিশীলতা, বিজ্ঞান ও সমাজে প্রচলিত ধর্মীয় কুসংস্কারের বিষয়ে লেখেন বা বক্তব্য রাখেন তাদের মধ্যে ভীতি, শঙ্কা ছড়িয়ে দেয়াই ছিল আসামির মূল উদ্দেশ্য। ...এই আসামিকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা না দিলে অন্য সন্ত্রাসী-জঙ্গি-উগ্রবাদী মতাদর্শের লোকজন এই ধরনের কাজে উৎসাহিত হবেন।’

মামলার রায়ে বিচারক খালাস দিয়েছেন ফয়জুলের বাবা মাওলানা আতিকুর রহমান, মা মিনারা বেগম, মামা ফজলুল হক ও ভাই এনামুল হাসানকে।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবী মোতাহির আলী বলেন, ‘রায়ে ৪ জন খালাস পেয়েছেন। এতে আমরা সন্তুষ্ট। দুজনকে দণ্ডিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আসামিদের সঙ্গে আলাপ করে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’

মামলার বাদী শাহজলাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন বলেন, ‘ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পওয়ার পর আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

আদালতের বিশেষ সহকারী কৌঁসলি মমিনুর রহমান টিটু বলেন, ‘ রায়ে প্রাথমিকভাবে আমরা সন্তুষ্ট। দ্রুততম সময়ে রায় হয়েছে। তারপরও পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১০ মার্চ চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। মামলায় ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৩৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। এরপর ২১ ও ২২ মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়।

২০১৮ সালের ৩ মার্চ বিকেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়। মাদ্রাসাছাত্র ফয়জুল হাসান ছুরি দিয়ে জাফর ইকবালের মাথা ও ঘাড়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র-শিক্ষকরা হামলাকারী ফয়জুলকে হাতেনাতে ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন।

পরে জাফর ইকবালকে আহত অবস্থায় প্রথমে এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।

এই ঘটনায় শাবি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন।

২০১৮ সালের ১৬ জুলাই ফয়জুলসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার তৎকালীন ওসি শফিকুল ইসলাম।

ওই বছরের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়।

এ বিভাগের আরো খবর