বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্যাতনের আসামি প্রকাশ্যে, পুলিশ জানে পলাতক

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:১৮

মামলার বাদী আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা মামলা করতে গেলেও পুলিশ সময়মতো আমাদের মামলা নেয়নি। আবার আসামির স্বজনদের সঙ্গে বৈঠক করছে। তাহলে আমরা কি ন্যায়বিচার পাব না?

সাতক্ষীরার তালায় কলেজছাত্রকে মারপিট ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নামে হওয়া মামলায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হননি। পুলিশ বলছে আসামিরা পলাতক। তবে স্থানীয়রা বলছেন, অভিযুক্তদের কেউ কেউ এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রধান আসামির ভাইয়ের সঙ্গে তালার মাঝিয়াড়া বাজারে সোমবার রাতে ‘দীর্ঘক্ষণ বৈঠক’ করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, পথে দেখা হওয়া আসামিপক্ষের এক স্বজনের সঙ্গে তার কথা হয়েছে মাত্র। তবে এ ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাদীপক্ষ।

জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী বলছেন, তদন্তসংশ্লিষ্ট বিষয়ের বাইরে আসামিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা আইনবহির্ভূত।

নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময় তালা সদরের জাতপুর গ্রামের নার্সারি ব্যবসায়ী শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। তন্ময়ের অভিযোগ, রোববার তালা সরকারি কলেজের একটি কক্ষে তাকে দুপুর ১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মাথা ন্যাড়া করে বিবস্ত্র অবস্থায় মারপিট ও ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর বাড়িতে ফোন দিয়ে তার মায়ের কাছে দুই লাখ টাকা চাওয়া হয়।

কেন মারধর করা হয়েছে এই প্রশ্নের জবাবে তন্ময়ের চাচাতো ভাই জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘মারধর করার আগে আকিব (ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত) তাকে (তন্ময়কে) বারবার জিজ্ঞাসা করেছে, কেন সে তার চাচাতো বোনকে হুমকি দিয়েছে। তবে তন্ময় তাকে (আকিব) বলেছে, যদি সে কারও সঙ্গে এ রকম করে থাকে তবে তাকে হাজির করতে। এই কথা শোনার পরও তারা থামেনি। লাঠি, রড দিয়ে মারধর করেছে।’

এ ঘটনায় রোববার রাতেই মামলা করতে যান কলেজছাত্রের বাবা আজিজুর রহমান। মামলা গ্রহণ না করায় রাত ৩টার দিকে তিনি চলে আসেন। পরদিন দুপুরে মামলা নথিভুক্ত হয়। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন, তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের সদ্য বহিষ্কৃত উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব, হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী, তালা গার্লস স্কুলের পাশের বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী জে. আর সুমন, তালার মহান্দি গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মী মো. জয় ও তালা সদরের ছাত্রলীগ কর্মী নাহিদ হাসান উৎস।

তালা কলেজ ছাত্রাবাসের এই কক্ষে নির্যাতনের শিকার হন কলেজছাত্র তন্ময়। ছবি: নিউজবাংলা

মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তালা থানার ওসি-তদন্ত আবুল কালাম আজাদ বলছেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। আসামিরা এখন পলাতক।

তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী হাসান আলী বাচ্চু বলেন, ‘ছাত্রলীগ কর্মী নাহিদ হাসান উৎসকে সোমবার সন্ধ্যায় তালা বাজারে ঘোরাফেরা করতে দেখেছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঝিয়াড়া বাজারের একজন জানান, মাঝিয়াড়া বাজারের নুর ইসলামের দোকান থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সোমবার রাতে তদন্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার ও মামলার প্রধান আসামির মেজ ভাই খালিদ হাসান বৈঠক করেন। দূরে দাঁড়িয়ে আমি তাদের মধ্যে কী আলোচনা হচ্ছে সেটি শুনতে পাইনি। রাত অনেক হওয়ায় তখন বাজারে মানুষের উপস্থিতি কম ছিল।

‘অনেকক্ষণ দেখার পর আমি তাদের দিকে এগিয়ে যাই। তখন এসআই চন্দন বলতে থাকেন, দ্রুত জামিনের ব্যবস্থা করেন ভাই। না হলে কিন্তু আমি আটক করব।’

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই চন্দন কুমার বলেন, ‘আমি রাতে ওইদিকে গিয়েছিলাম। তখন খালিদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল এবং একটু কথা হয়।’

কী কথা হয়েছিল এই প্রশ্নের জবাব দেননি এসআই চন্দন।

আসামির ভাইয়ের সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তার বৈঠকের বিষয়ে তালা থানার ওসি-তদন্ত বলেন, এমন হতে পারে আসামির বাড়ি চিনে নিতে তিনি কথা বলেছেন।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী সাহেদুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ তদন্তের স্বার্থে সবার সঙ্গে কথা বলতে পারে। তবে তদন্তের বাইরে কোনো বিষয়ে আলোচনা করে থাকলে সেটি আইনবহির্ভূত।’

মামলার বাদী আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা মামলা করতে গেলেও পুলিশ সময়মতো আমাদের মামলা নেয়নি। আবার আসামির স্বজনদের সঙ্গে বৈঠক করছে। তাহলে আমরা কি ন্যায়বিচার পাব না?

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। বাকি বিষয়গুলো আমরা দেখব।’

এ বিভাগের আরো খবর