‘কী বলব? মনে হচ্ছে আমরা কোনো মানুষই না। এভাবে কি একটা মানুষ থাকতে পারে? আমরা যারা ট্রাকচালক তাদের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। মনে হয় এবার বাড়ি গিয়া ঈদ করতে পারব না।’
বলছিলেন ট্রাকচালক গাফফার মিয়া। বেনাপোল থেকে ট্রাকে করে কাগজ নিয়ে সোমবার সকালে পৌঁছেছেন রাজবাড়ী। এক দিন পেরিয়ে গেলেও দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে ফেরি পারের সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।
বেনাপোল থেকে পণ্য নিয়ে এসেছেন ট্রাকচালক মো. শাহিনও।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ এক দিন পার হয়ে গেলেও এখনও ফেরিঘাট থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরেই বসে আছি। ফাঁকা রাস্তায় প্রচণ্ড গরম। রেস্ট নেয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। এই রোদে ট্রাকের নিচে রাস্তায় শুয়ে রেস্ট নেই।
‘আমরা কবে ঢাকায় পৌঁছাব আবার কবে ঢাকা থেকে ফিরে বাড়িতে গিয়ে ঈদ করব? দৌলতদিয়া ঘাটের যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে আজকেও পার হতে পারব না।’
গত কয়েক দিন ধরেই দৌলতদিয়া ঘাটে এ অবস্থা। ফেরি পারের জন্য ঘাটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকের প্রায় চার কিলোমিটার এবং রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকের তিন কিলোমিটার লম্বা সিরিয়াল তৈরি হয়েছে। দুই সিরিয়াল মিলিয়ে আটকা পড়ে আছে ছয় শতাধিক ট্রাক ও তিন শতাধিক বাস।
গরমে এই দীর্ঘ অপেক্ষায় হাঁসফাঁস করছেন যাত্রী ও চালকরা।
ট্রাকচালক আশরাফুল বলেন, ‘এই ফাঁকা রাস্তায় রাত কাটাতে আমাদের ভয় হয়। রাতে ডাকাতি হওয়ার ভয় থাকে। তা ছাড়া এই এলাকায় হোটেল, টয়লেট কিছুই নেই। কীভাবে এখানে এভাবে অপেক্ষা করা যায়?’প্রতিদিনের মতো ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও ফেরি স্বল্পতার কারণে যানবাহনের এই লম্বা সিরিয়াল তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ‘এই নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৯টি ফেরি চলাচল করে। একটি ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি হওয়ায় পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় মেরামত করা হচ্ছে। বাকিগুলো চলছে। আমরা যাত্রীবাহী বাস ও পচনশীল মালবাহী ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করছি।’
চাপ বেড়েছে শিমুলিয়া ঘাটেও
মঙ্গলবার ভোর থেকে যানবাহনের চাপ বেড়েছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে। পাঁচ শতাধিক যানবাহন অপেক্ষা করছে ফেরির জন্য।
সুচিত্রা রানি নামের এক যাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামীর কর্মস্থল পরিবর্তন হয়েছে। ঈদে ভিড় হবে বলে আগেই পিকআপ ভ্যানে সব জিনিসপত্র নিয়ে ভোরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে রওনা দিয়েছি। ফরিদপুরের ভাঙ্গার একটু সামনে যাব। এখন বেলা ১১টা, কিন্তু ফেরিতে উঠতে পারিনি। শুনলাম ফেরি কম।’
সরকারি এক প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. আলামিন জানান, পরিবার নিয়ে ঢাকার উত্তরায় থাকেন। ঈদে চাপ পড়বে ভেবে আগেই পরিবার নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। ভোরে ঘাটে পৌঁছেছেন। বেলা বাড়লেও ফেরির সিরিয়াল পাননি।
আগে ১৭ থেকে ১৯টি ফেরি চললেও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে এখন চালু আছে সাতটি ফেরি।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে সাতটি ফেরির সঙ্গে আরও একটি রো রো ফেরি যানবাহন পারাপারের জন্য মঙ্গলবার ভোর থেকে যুক্ত হয়েছে।
‘সকাল থেকেই যানবাহনের চাপ বেড়েছে। মনে হচ্ছে ঈদকে সামনে রেখে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। ভোর থেকে তিন শতাধিক গাড়ি এই ঘাট থেকে পার করা হয়েছে।’
ঘাটে ফেরির সংখ্যা কম থাকায় অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে ও স্পিডবোটে নদী পার হচ্ছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শিমুলিয়া ঘাটের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শাহাদাত হোসেন জানান, সকাল থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে, লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা বেড়েছে। ভোর থেকে ৮৩টি লঞ্চ ও ১৫৩টি স্পিডবোট চলাচল করছে।
তিনি বলেন, ‘স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই আগেভাগে পরিবারকে বাড়ি রেখে আসছেন। তাই ঘাটে যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে।’