কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় চতুর্থ দিনের মতো ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। দেয়া হচ্ছে ৩০ এপ্রিলের টিকিট। কেউ এক দিন আবার কেউ দুই দিন লাইনে থাকার পর পেয়েছেন টিকিট। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত টিকিটটি হাতে পেয়ে কষ্টমাখা মুখে ফুটে উঠেছে প্রাপ্তির হাসি।
টিকিটের জন্য রোববার রাত থেকে অপেক্ষায় ছিলেন জয়নাল আবেদিন। গতকাল সোমবার একটুর জন্য মেলেনি টিকিট নামের ‘সোনার হরিণ’। খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল তাকে। না পাওয়ার আক্ষেপ ঘুচল আজ সকালে। ৩০ এপ্রিলের টিকিট পেলেন তিনি।
জয়নাল জানান, রাজশাহী যাবেন তিনি। একটি টিকিটের জন্য দুদিন অপেক্ষা করেছেন। আজ সেটি হাতে পেয়ে যারপর নাই খুশি তিনি।
নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক দিন বাড়ি যাইনি৷ বাবা-মা পথ চেয়ে বসে আছেন। তাদের সঙ্গে ঈদ করতে যাব বলে একটি টিকিটের জন্য রোজ ধরনা দিচ্ছিলাম।’
‘প্রচণ্ড গরম আর মানুষের ভিড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তারপরও হাল ছাড়িনি। যত কষ্টই হোক, শেষ পর্যন্ত পেলাম এটাই বড় বিষয়। মনে হচ্ছে, সব ভোগান্তি ভুলে গেছি।’
কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা। ছবি: নিউজবাংলাজয়নালের মতোই ক্লান্তির বদলে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে মোহাম্মদ সুলায়মানের।
তিনি বলেন, ‘গতকাল রাত ৩টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। সেহরি খেয়েছি এখানেই। খুলনার স্পেশাল ট্রেনের টিকিট পেলাম। শেষ পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারব। কষ্ট আর কষ্ট মনে হচ্ছে না।’
ঠোঁটের হাসিটা দীর্ঘ করে টাঙ্গাইলের বাপ্পি বলেন, ‘গতকাল বিকেলে আসরের নামাজ পড়ে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। ইফতার, সেহরি, নামাজ সব এখানেই করেছি। প্রথম দিকেই টিকিট পেলাম। কষ্ট করাটা বৃথা যায়নি, আলহামদুলিল্লাহ্।’
আগের দিনগুলোর মতোই স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি যাবেন, তাই শত কষ্ট উপেক্ষা করে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
অনেকে সেহরি-ইফতার করেছেন সেখানেই। প্রচণ্ড গরম, নিদ্রাহীন রাত ও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার ভোগান্তি নিয়েই হাজার হাজার মানুষ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে।
কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ছবি: নিউজবাংলাপ্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে দুপুরের আগেই।
স্টেশনের পূর্ব পাশে দুটি কাউন্টারে টিকিট দেয়া হচ্ছে নারীদের। উত্তর-পূর্ব কোণের কাউন্টার দুটির সামনে নারীদের দাঁড়ানোর জন্য নির্ধারিত স্থান। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সেখানেই জটলা বেঁধে দাঁড়িয়েছেন তারা।
পুরুষের তুলনায় নারীদের লাইনে টিকিটপ্রত্যাশীদের সংখ্যা কম, তাই সেহরি খেয়ে এসেছেন বলে জানান দিনাজপুরের লায়লা বানু।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে টিকিট কাটতে চেয়েছিল। কিন্তু পুরুষদের লাইন অনেক লম্বা, সে হয়তো এসে লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টারে যেতে যেতেই টিকিট শেষ হয়ে যাবে। আবার তার অফিসও রয়েছে, তাই ওকে আসতে বারণ করেছি৷’
‘কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকিট পাব, এই আশায় একটু একটু করে সময় পার করছি।’
প্রতিদিনের মতো সকাল ৮টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই কাউন্টার খোলা হয়েছে। তার আগে থেকে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে লাইন স্টেশনের বাইরে পর্যন্ত চলে গেছে।
কাউন্টার ছাড়াও অনলাইনে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তবে বরাবরের মতোই যাত্রীদের অভিযোগ টিকিট মিলছে না সেখানে।
তবে সোমবার অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ট্রেনের ৩৫০ সিট অনলাইনে বরাদ্দ রয়েছে। সহজ থেকে জানানো হয়েছে, এই আসনের বিপরীতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার বা কখনও কখনও এক লাখ টিকিটপ্রত্যাশী সার্ভারে হিট করছেন।
‘সাড়ে তিন শ টিকিটের জন্য যখন ৭০ হাজার থেকে এক লাখ মানুষ ওয়েবসাইটে হিট করছেন, তখন টিকিট পাচ্ছেন না। যার কারণে যারা পাচ্ছেন না, তারা বলছেন যে, অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।’
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির কথা গত ১৩ এপ্রিল জানিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করলেও ৩ মে ঈদ ধরে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয় শনিবার থেকে। ওই দিন দেয়া হয় ২৭ এপ্রিলের টিকিট। রোববার ২৮ এপ্রিল ও সোমবার ২৯ এপ্রিলের টিকিট দেয়া হয়েছে।
যাত্রীর চাপ কমানোর লক্ষ্যে ঢাকা শহরের পাঁচটি কেন্দ্রে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। স্থানগুলো হলো কমলাপুর, ঢাকা বিমানবন্দর, তেজগাঁও, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন)।
ঈদের পর ৫ মে যারা ঢাকায় ফিরবেন তাদের জন্য ১ মে, ৬ মের জন্য ২ মে, ৭ মের জন্য ৩ মে এবং ৮ মের জন্য ৪ মে টিকিট বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।