রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা না করার দাবিতে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করেছেন অধিকার কর্মীরা। তারা জানিয়েছেন, তারা মাঠ ছাড়বেন না। সেখানে ঈদের জামাত করবেন। থানার ভবন অন্য জায়গায় করতে হবে।
সোমবার বিকেল ৩টায় স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করেছেন সংগঠনগুলোর নেতারা।
এলাকাবাসীর দাবি আদায়ে আন্দোলনে তাদের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছে ১২টি অধিকার সংগঠন।
মানববন্ধনে কলাবাগানের বাসিন্দা জিনাত রেহানা লুনা বলেন, ‘করোনায় আমার স্বামী মারা গেছেন। এখানে আমার স্বামীর গোসল ও জানাজা হয়েছে। প্রতিদিন ঘর থেকে বের হয়ে আমি একবারের জন্য হলেও এই মাঠে তাকিয়ে প্রিয়জনের স্মৃতি খুঁজি। আমি কোনোভাবেই এই মাঠে থানা হতে দিব না।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, খেলার মাঠ উন্মুক্ত রাখতে হবে। আর সেই দাবি জানাতে গিয়ে দুইজনকে গারদে নিলেন। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।
‘আইজিপি প্রায়ই বলেন, মানবিক পুলিশের কথা। এভাবে একজন মানবাধিকার কর্মী ও তার ছেলেকে গারদে নিয়ে আটকে রাখা কোন ধরনের মানবিকতা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠ ছাড়ব না। আগামী ঈদে সবাই মিলে এই মাঠে ঈদের জামাত করব।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ানা হাসান মানববন্ধনে বলেন, ‘নাগরিকের কণ্ঠ এভাবে রুখে দেয়া যাবে না। আগামীকাল থেকে এই মাঠে পুলিশ দেখতে চাই না।’
তিনি মাঠ রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি জানান। সেগুলো হলো-খেলার মাঠ উন্মুক্ত রাখা, বিকল্প জায়গায় থানা ভবন নির্মাণ, ঈদের জামাত আয়োজন, সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে আটকের নিরপেক্ষ তদন্ত ও এলাকাবাসীদের হয়রানি এবং ভয় দেখানো বন্ধ করা।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘একটি থানার জন্য যে পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন তা এখানে নেই। আপনারা অন্যত্র থানা ভবন নির্মাণ করেন।’
তেঁতুলতলা মাঠে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেয়া সংগঠনগুলো হলো- এএআরডি, বাপা, বেলা, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), ব্লাস্ট, গ্রীন ভয়েজ, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, উদীচী, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি।
মাঠটিতে খেলাধুলা, জানাজা, ঈদ জামাত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে আসলেও গত ৩১ জানুয়ারি থেকে তা বন্ধ। মাঠের জায়গায় কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য রোববার থেকে মাঠের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
মাঠ রক্ষার আন্দোলনে থাকা সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে রোববার সকালে আটক করে পুলিশ। ওই মাঠ থেকে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সরকারি কাজে বাধা দেয়ায় তাদের দুজনকে আটক করা হয় বলে জানায় পুলিশ।
প্রায় ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখার পর রাতে তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
কলাবাগানের বাসিন্দারা জানান, তেঁতুলতলা মাঠের এক বিঘা জমি এক জন বিহারির মালিকানায় ছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি আর দেশে ফেরেননি। সেই জায়গাটিতে স্থানীয় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করত।
সরকারি খাস জমি হিসেবে নথিভুক্ত এই ফাঁকা জায়গাটিতে থানা করতে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। আর এর পর থেকেই সেই জায়গাটি খেলাধুলার জন্য ফাঁকা রাখার দাবি উঠেছে।