অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের সাবেক মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলা হয়েছে তার স্ত্রী কামরুন্নাহার শিমুলের নামেও।
বগুড়া দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে সোমবার দুপুরে মামলা হয় বলে জানান সহকারী পরিচালক নূর আলম।
তিনি জানান, গত ১৩ এপ্রিল দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন দেয়া হয়।
সাবেক মেয়র মাহফুজ ও তার স্ত্রী শিমুল থাকেন জয়পুরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সরদারপাড়া আলহেরা আবাসিক এলাকায়।
মাহফুজ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর শিমুল কাজ করেন জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী ক্যাশিয়ার পদে।
মাহফুজের মামলার এজাহারের বরাতে দুদক কর্মকর্তা নূর আলম জানান, আসামির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে বলা হয়।
২০১৯ সালের ৩১ জুলাই জমা দেয়া বিবরণীতে স্থাবর সম্পদ দেখানো হয় ৭৬ লাখ ৭৭ হাজার ২৬৭ টাকার। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ৯২ লাখ ২৫ হাজার ৯৩১ টাকার। ৬৯ লাখ ৮৭ হাজার ৫০ টাকা দেনা আছে বলেও বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়।
নূর আলম জানান, অনুসন্ধানে মাহফুজের স্থাবর সম্পদ ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮ টাকা বের হয়। এ হিসাবে তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮২১ টাকা পরিমাণ স্থাবর সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেন। এ ছাড়া তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে ৯৯ লাখ ১০ হাজার ৭৯৪ টাকার অসঙ্গতিও পাওয়া গেছে।
আরেক মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, কামরুন্নাহার শিমুল ২০১৯ সালের একই তারিখে সম্পদ বিবরণী জমা দেন। তাতে ৬৪ লাখ ৪২ হাজার ২৬৭ টাকা স্থাবর, ২৭ লাখ ৪ হাজার ২৫ টাকা অস্থাবর এবং ৩৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৫ টাকা দেনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
অনুসন্ধানে ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৮৮ টাকার স্থাবর সম্পদ খুঁজে পান দুদক কর্মকর্তারা। কামরুন্নাহারের দেয়া হিসাবেও জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে ৩৬ লাখ ৭ হাজার ১৬৪ টাকার অসঙ্গতি রয়েছে।
মামলার বিষয়ে মোবাইল ফোনে গোলাম মাহফুজ বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় আছি। জয়পুরহাট জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমার নামে এ ধরনের কাজ এক ধরনের ষড়যন্ত্র। প্রায় চার বছর আগে বেনামী একটি চিঠি দেয়া হয়েছিল দুদকের কাছে। ওই অভিযোগ দিয়েই এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জয়পুরহাটে ও সাভারে আমার ফ্ল্যাট আছে। সেগুলোর হিসাব দুদককে দিয়েছি। আমি ব্যবসায়ী, সাবেক মেয়র। আমার স্ত্রী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চাকরি করেছেন। এতটুকু থাকা স্বাভাবিক।’
দুদকের সহকারী পরিচালক নূর আলম জানান, গোলাম মাহফুজ ও তার স্ত্রী কামরুন্নাহারের নামে জয়পুরহাটে একটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে। মূলত এই ভবনের আর্থিক মূল্য তারা গোপন করেছেন। জেলা গণপূর্ত দপ্তর থেকে ওই ভবনের মূল্যায়ন করে তার আর্থিক হিসাব বের করা হয়েছে।
সহকারী পরিচালক আরও জানান, প্রাথমিক তদন্তে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও গোপন করার তথ্য উঠে আসায় দুদক আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে দুজনের নামে আলাদা দুটি মামলা করা হয়েছে।