বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কলেজছাত্রকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৫ এপ্রিল, ২০২২ ১৬:০৫

তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জেহাদ আলম ফকরুল খান নিউজবাংলাকে জানান, এ ঘটনায় নির্যাতিত শিক্ষার্থীর বাবা পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে এসআই চন্দন কুমারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

মুক্তিপণ চেয়ে সাতক্ষীরার তালায় এক কলেজছাত্রকে মারপিট ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ সুপার বলছেন, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করার পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময় তালা সদরের জাতপুর গ্রামের শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। চলতি বছর তিনি জাতপুর টেকনিক্যাল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।

যাদের বিরুদ্ধে তাকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তারা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ আকিব, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের সৌমিত্র চক্রবর্তী, তালা গার্লস স্কুল এলাকার বাসিন্দা ছাত্রলীগকর্মী জে আর সুমন, তালার মহান্দি গ্রামের ছাত্রলীগকর্মী মো. জয় ও তালা সদরের ছাত্রলীগকর্মী নাহিদ হাসান উৎস।

কলেজছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগকর্মী নাহিদ হাসান উৎস আমার পূর্বপরিচিত। তালা বাজারে যাতায়াত সুবাদে তার সঙ্গে পরিচয়। রোববার দুপুরে আমাকে ফোন করে তালা কলেজ এলাকায় ডেকে নেয় উৎস। এরপর কলেজের পশ্চিম পাশের একটি রুমে নিয়ে যায়।

‘সেখানে টানা ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন চালায় আকিব, সৌমিত্র, সুমনসহ অন্যরা। হাত-পায়ে নির্মমভাবে মারপিট করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। এরপর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। তারপর বাড়িতে ফোন করে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা।’

তন্ময় আরও বলেন, ‘যে রুমের মধ্যে আমাকে আটকে রেখেছিল সেটি সম্ভবত কলেজের ছাত্রাবাস কক্ষ। সেটি কলেজের মধ্যেই অবস্থিত। ওই রুমের মধ্যে মারপিট করার জন্য বেল্ট, লাঠিসোঁটা এখনও রয়েছে। ওখানে নিয়ে টর্চার করে বলে মনে হয়েছে।’

তন্ময়ের বাবা আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করে দিল। তন্ময়ের সঙ্গে ওদের কোনো বিরোধ নেই। একসঙ্গে পড়েও না। হঠাৎ ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।

‘আমার স্ত্রীর কাছে রোববার বিকেলে ফোন করে ছেলেকে ফিরে পেতে ২ লাখ টাকা নিয়ে কলেজের সামনে যাওয়ার কথা বলেছে তারা।’

আজিজুর রহমান আরও বলেন, ‘টাকা চেয়ে যখন ফোন করা হয়, তখন আমার ছেলে কৌশলে নিজের ফোন থেকে তার চাচাতো ভাই জুবায়ের আহমেদকে বার্তা পাঠায়। সেই বার্তায় তন্ময়ের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ছুটে যায় জুবায়েরসহ অন্যরা। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

তবে জুবায়ের আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোববার দুপুরে আমি, আমার ছোট ভাই মেরহাব আহমেদ ফাহিম ও তন্ময় জাতপুর বাজারে একসঙ্গে ছিলাম। তখন তন্ময়ের ফোনে উৎসের কল আসে। ফোনে কথা শেষে ফাহিমকে নিয়ে তালার দিকে চলে যায় তন্ময়।

‘বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ফাহিম আমাকে ফোন করে জানায়, তন্ময় ঝামেলায় পড়ছে। এরপর আমি দ্রুত তালায় যাই। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছে ফোন করে ফাহিমকে ডেকে নিই। ফাহিম এসে আমাকে জানায়, তাকে ও উৎসকে বের করে দিয়ে তন্ময়কে কলেজের মধ্যে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে গেলে আমাকেও মারধর করা হবে।’

এরপর জুবায়ের উৎসকে ফোন করে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসতে অনুরোধ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয় উৎস। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তারা তিনজন তালা কলেজের দিকে এগোতে থাকে। কিছুদূর যাওয়ার পরই তারা দেখতে পায় তন্ময়কে নিয়ে কলেজ থেকে বের হচ্ছে আকিব, সৈমিত্র, জয়সহ অন্যরা।

জুবায়ের বলেন, ‘তাদের কাছে যাওয়ার পর তন্ময়কে আমার হাতে দেয়া হয়। আমি তাকে সেখান থেকে দ্রুত বাসায় নিয়ে আসি। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

কেন তন্ময়কে মারধর করা হলো- এ প্রশ্নের উত্তরে জুবায়ের বলেন, ‘মারধর করার আগে আকিব তাকে (তন্ময়কে) বারবার জিজ্ঞাসা করেছে, কেন সে তার চাচাতো বোনকে হুমকি দিয়েছে। তবে তন্ময় তাকে (আকিব) বলেছে, যদি সে কারও সঙ্গে এ রকম করে থাকে তবে তাকে হাজির করতে। এই কথা শোনার পরও তারা থামেনি। লাঠি, রড দিয়ে মারধর করেছে।’

তন্ময়কে মারধরের কথা স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগকর্মী জয়। তিনি বলেন, তন্ময়কে ডেকে এনে মারপিটের কিছু ঘটনা ঘটেছে। পরে এ ঘটনা মিটমাটও হয়েছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, ছাত্রলীগের নেতা আকিবের সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। নতুন করে মেয়েটির সম্পর্ক গড়ে ওঠে তন্ময়ের সঙ্গে। তন্ময়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে আকিব তাকে ডেকে এনে মারপিট করে ও মাথা টাক করে দেয়।

তালা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ হুমায়ূন কবীর জানান, পাঁচ দিন আগে কলেজে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। ছাত্রাবাস ছেড়ে চলে গেছেন বেশির ভাগ ছাত্র। সেখানে কোনো রুমে নিয়ে কাউকে নির্যাতনের কথা তিনি শোনেননি।

সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ন্যক্কারজনক এই ঘটনার আমি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে কোনো নিরপরাধ নেতাকর্মী যেন হয়রানির শিকার না হন।’

তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জেহাদ আলম ফকরুল খান নিউজবাংলাকে জানান, এ ঘটনায় নির্যাতিত শিক্ষার্থীর বাবা পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে এসআই চন্দন কুমারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

এ বিভাগের আরো খবর