কিশোরগঞ্জের হাওরে পানি কমতে শুরু করায় স্বস্তি ফিরেছে কৃষকদের মধ্যে। জেলাজুড়ে বোরো ধান ঘরে তুলতে কাটা, মাড়াই কাজে পুরোদমে ব্যস্ত তারা। শ্রমিক সংকটও দূর হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিনের মাধ্যমে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় এখন পর্যন্ত ৪৪ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। পুরো ধান কাটতে আর ১৪ দিনের মতো সময় লাগবে।
তবে কৃষকরা বলছেন, আপাতত আর বৃষ্টি না হলে এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে হাওরের ফসল কাটা। এরপর ধীরে ধীরে কাজ করলেও সমস্যা হবে না তাদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলার ১৩ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর অঞ্চলেই ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।
গত ৩ এপ্রিল থেকে উজানের ঢলে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে নদীর তীরবর্তী চরের জমি। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ছোট মূল হাওরের জমির ফসলও তলিয়ে গেছে।
সূত্রটি আরও জানায়, জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৭০৫ হেক্টর। এর মধ্যে বেশি ক্ষতি হয়েছে ইটনায়। উজানের ঢলে এ উপজেলার ৩৭০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে হাওরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ধান কাটছেন, এরপর ট্রলি বা ট্রাক্টরে করে সে ধান নেয়া হচ্ছে খোলায়। সেখানে নিয়ে মাড়াই মেশিনে ভাঙানো হচ্ছে ধান। এরপর ধান শুকাতে দিয়েই করছেন খড়ের যত্ন।
একদিকে খলায় শুকাচ্ছে ধান, পাশেই শুকিয়ে নিচ্ছেন খড়কুটো। একই সঙ্গে চলছে ধান সিদ্ধের কাজ, কেউ আবার রাইস মিল দিয়ে ধান ভাঙিয়ে করে নিচ্ছেন চাল। এ কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও করছেন সহযোগিতা। বসে নেই ছোট ছোট শিশুরাও। তারাও বাবা-মায়ের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
ঈদকে সামনে রেখেই যেন তড়িঘড়ি কাজ করছেন কৃষকরা। পানি কমায় ও বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ যেন পরিষ্কার। কৃষকদের ভাষ্য, যা তলিয়ে গেছে সেটা নিয়ে চিন্তিত নন তারা। যেটুকু আছে সেটুকু ঘরে তুলতে পারলেই তারা খুশি।
ইটনা উপজেলার ছিলনী গ্রামের কৃষক আব্দুল আওয়াল টাকার বিনিময়ে অন্যের ৪ একর জমিতে চাষাবাদ করেছেন। এর মধ্যে দেড় একর করেছিলেন ব্রি-২৮। ধানে চিটা হওয়ায় জমিতে কাঁচি চলেনি। কিন্তু এখন আকাশের অবস্থা ভালো থাকায় পুরোদমে খোলায় কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ‘নষ্ট হওয়ার পর বাকি যেটুকু ভালো আছে তা ভালো করে ঘরে তুলতে পারলেই হলো।’
একই গ্রামের কৃষক মিয়া হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পানি কমতে থাকায় আর আবহাওয়া ভালো থাকায় মনে স্বস্তি ফিরেছে। এখন প্রচণ্ড গরমেও কাজ করতে ভালো লাগছে।’
ইটনা সদর ইউনিয়নের কৃষক শাহজাহান মিয়া জানান, পানি বাড়তির সময় ধান কাটবেন নাকি বাঁধ রক্ষা করবেন, সেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন তারা। পানি কমতে শুরু করায় বাঁধের চিন্তা বাদ দিয়ে পুরোদমে ধান তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন।
ইটনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উজ্জল সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত তিন দিনে হাওরের পানি ক্রমে কমতে থাকায় কৃষকরা স্বস্তিতে আছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে দ্রুত হাওরের ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলায় এখন পর্যন্ত ৪৪ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ। ধান কাটার জন্য কৃষকদের এ পর্যন্ত ২২৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ২২টি রিপার মেশিন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরাও ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন।
‘শুরুর দিকে খানিকটা শ্রমিকসংকট থাকলেও বর্তমানে নেই। পুরো জেলার ধান কাটা শেষ হতে আরও ১৪ দিন সময় লাগতে পারে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ‘উজানের ঢলে নেমে আসা পানিতে যে সব কৃষকের ফসল তলিয়ে গেছে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।’