বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমায় বিপত্তি

  •    
  • ২৫ এপ্রিল, ২০২২ ১০:৫৬

সব ব্যাংকেই পাসপোর্টের ফি জমা দেয়ার সুযোগ থাকলেও নানা বাহানায় এই সেবা দিতে অনীহা দেখানো হচ্ছে। ফলে পাসপোর্ট করতে গিয়ে সেবাগ্রহীতাদের নানা ভোগান্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন সংকট। এতে করে গ্রাহকদের পাসপোর্ট পাওয়ার প্রতীক্ষা দীর্ঘতর হচ্ছে।

হন্তদন্ত হয়ে এদিক-ওদিক ছুটছিলেন আরিফুল ইসলাম। সমস্যা কী জিজ্ঞাসা করলে জানালেন, আশপাশের কোনো ব্যাংকে পার্সপোটের ফি জমা দেয়া যাচ্ছে না। এক ব্যাংক বলছে সার্ভারে সমস্যা, আরেক ব্যাংক বলছে- ফরম রেখে যান, সময় লাগবে। রোজার মধ্যে দুর্ভোগের শেষ নেই।

আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে রোববার বেলা ১১টার দিকে পাসপোর্ট করতে আসা আরিফুল এমন ভোগান্তির কথা বলেন।

আরেক পাসপোর্ট গ্রাহক ফাহমিদা আক্তারের অভিযোগ, ব্যাংকে পাসপোর্টের ফি জমা দিতে গেলে সিডিউল পেজের ওপর ওআইডি নম্বর ধরে টাকা জমা নেয়া হয়। পরে কোনো কারণে ওই ফরম বাতিল হলে এই টাকা আর ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই। অথচ বাইরে থেকে দালালের মাধ্যমে আবেদন করলে, এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে টাকা জমা নেয়ার কথা বলা হচ্ছে; পরে ফরম বাতিল হলেও নাকি টাকা পুনরায় জমা দিতে হয় না।

পাসপোর্টের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিতে এমন ভোগান্তির কথা জানালেন আরও কয়েকজন। সব ব্যাংকেই পাসপোর্টের ফি জমা দেয়ার সুযোগ থাকলেও নানা বাহানায় এই সেবা দিতে অনীহা দেখানো হচ্ছে। ফলে পাসপোর্ট করতে গিয়ে সেবাগ্রহীতাদের নানা ভোগান্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন সংকট। এতে করে গ্রাহকদের পাসপোর্ট পাওয়ার প্রতীক্ষা দীর্ঘতর হচ্ছে।

পাসপোর্ট করতে আসা সুমন সরকার বলেন, ‘মিরপুর শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের প্রিমিয়ার ব্যাংকে ফি জমার জন্য গেলে জানানো হয়, সার্ভারে সমস্যার কারণে এই সেবা দেয়া যাচ্ছে না। বাস্তবে সার্ভারে কোনো সমস্যা নয়, একটু সময় লাগে বলেই এ সেবা দেয়া হচ্ছে না।’

আল আরাফাহ ব্যাংকের অভিজ্ঞতা জানালেন ফরিদ হোসেন। তিনি বলেন, “গেল সপ্তাহে ওই ব্যাংকে পাসপোর্ট রিনিউ ফি জমা দিতে গেলে নেয়া হয়নি। তখন ব্যাংকে ভিড় থাকায় নানা অজুহাতে ‘না’ করে দেয়া হয়।”

পাসপোর্টের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিতে ভোগান্তির কথা জানান গ্রাহকরা। ফাইল ছবি

সুমি নামে আরেক সেবাগ্রহীতা জানালেন, ঝামেলা মনে করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো টাকা জমা নেয় না। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া গেছে। এই ব্যাংকে সময় লাগলেও অপারগতা প্রকাশ করে না কেউ।

একই অভিযোগ রাশেদুল কবিরের। তিনি বলেন, ‘ফি জমা দেয়ার জন্য সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে গেলে তারা জানায় জমা নেয়া যাবে না। অগত্যা পাসপোর্ট অফিসে দালাল ধরে টাকা জমা দিয়েছি।’

জানা গেছে, প্রথম দিকে পাসপোর্টের ফি শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে জমা দেয়া যেত। এর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকে জমা নেয়া শুরু হয় ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাসে। টাকা জমা দেয়ার ব্যাপারে বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। সেগুলো হলো- প্রিমিয়ার, ঢাকা, ব্যাংক এশিয়া, ওয়ান ও ট্রাস্ট ব্যাংক। অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইলের মাধ্যমেও পাসপোর্টের ফি এসব ব্যাংকে পরিশোধ করা যায়।

সেরকারি পাঁচটি ব্যাংককে সংযুক্ত করলেও পাসপোর্ট গ্রাহকের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় গত বছর সরকার দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে ট্রেজারি কার্যক্রম চালু করে। এতে যে কোনো ব্যাংকের যে কোনো শাখায় ট্রেজারি চালান, সরকারি চালান, ব্যাংক ড্রাফট ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দেয়া যাচ্ছে।

ব্যাংকাররা যা বলছেন

ব্যাংক এশিয়ার সব শাখায় এবং এজেন্ট ব্যাংকিং বুথেও পাসপোর্টের ফি জমা নেয়া হয় বলে জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরফান আলী।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম পাসপোর্টের ফি জমা নেয়া শুরু করি। বেসরকারি খাতে পাসপোর্টের ফি জমা দিতে পাসপোর্ট বিভাগের মহাপরিচালকের সঙ্গে আলাপ করে আমরা চার-পাঁচটি ব্যাংক এ সংক্রান্ত চুক্তি করি। বর্তমানে শুধু ব্যাংকের শাখা নয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়েও এই ফি চালু করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এই সেবা দিতে কোনো শাখা সমস্যা করছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কিছু শাখার কর্মকর্তাদের অনীহার কারণে হচ্ছে। রমজানের কারণে কিছু জায়গায় পাসপোর্টের ফি জমা নিতে গড়িমসি করছে। রমজানে বাড়তি খাটুনি মনে করে হয়তো তারা এমনটা করছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সব ব্যাংকে পাসপোর্টের ফি জমা দেয়ার সুযোগ আছে। প্রথমে সোনালী ব্যাংকে দেয়া গেলেও এখন সব ব্যাংকের জন্য সার্ভার খোলা। যে কোনো শাখা থেকে এই টাকা জমা দেয়া যায়। সরকারের নির্দেশেই এই ফি সরাসরি সরকারের খাতে যায়। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এ সেবা দিতে বাধ্য।

পাসপোর্ট ফি কত?

ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। ৪৮ ও ৬৪ পাতার এই ই-পাসপোর্ট মূলত তিন ধরনের। যেমন- ‘অতি জরুরি’, ‘জরুরি’ ও ‘সাধারণ’। পাঁচ বছর ও ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হারে ফি জমা দিতে হবে।

পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ৪৮ পাতার ‘অতি জরুরি পাসপোর্ট’ দুদিনে পেতে ফি দিতে হবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। ‘জরুরি পাসপোর্ট’ সাত দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। আর ‘সাধারণ পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।

পাঁচ বছর মেয়াদি ৬৪ পাতার ‘সাধারণ পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। ‘জরুরি পাসপোর্ট’ সাত দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। আর ‘অতি জরুরি পাসপোর্ট’ দুদিনে পেতে ফি দিতে হবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা।

১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ৪৮ পাতার ‘সাধারণ পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৫ হাজার টাকা। ‘জরুরি পাসপোর্ট’ সাত দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৭ হাজার টাকা। ‘অতি জরুরি পাসপোর্ট দুদিনে পেতে ফি দিতে হবে ৯ হাজার টাকা।

একই মেয়াদের ৬৪ পাতার ‘সাধারণ পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৭ হাজার টাকা। ‘জরুরি পাসপোর্ট’ সাত দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৯ হাজার টাকা। আর ‘অতি জরুরি পাসপোর্ট’ দুদিনে পেতে ফি দিতে হবে ১২ হাজার টাকা।

তবে এই ফি’র সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট জমা বাধ্যতামূলক।

এ বিভাগের আরো খবর