বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ওঠার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছেন, তার পদ এখনও আছে।
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়রের সব দায়িত্বও আছে। আমাকে তদন্তের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। তদন্ত করতে হয় ৩০ দিনে। সেটা আজকে ছয় মাস হইছে। ছয় মাসের মধ্যে কিন্তু আমার কাছে একটা লাউ-বেগুনও পায় নাই। আমি আমার ঘরে ঘুমাই।’
শনিবার বিকেলে নগরীর ৩০ নং ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম কানাইয়ার ৭টি ঈদের জামাতকে একত্রিত করে একটি জামাতে পরিণত করার জন্য মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এই সভায় ধারণ করা একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এতে জাহাঙ্গীরকে বলতে দেখা যায়, ‘সত্য-মিথ্যা এটা একসময় প্রকাশ হয়। কাউরে যদি কেউ ফাঁসায় দেয়, তাহলে এটা পরবর্তীতে জানা যায়।
‘আমারে আপনারা ভোট দিছেন। আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করছি। যেটা তিন বছরের মেয়াদ ছিল। আমারে মেয়র বানাইছেন, পাঁচ বছরের দায়িত্ব তিন বছরের জায়গায় আমাকে অস্থায়ীভাবে শোকজ করছে।
‘আপনাদের দোয়ায় আপনাদের সন্তান এই শহরের মধ্যে প্রথম আট শ কিলোমিটার রাস্তা করে দিয়ে গেছে। ব্যক্তি মালিকানা থেকে সাড়ে ৭ হাজার বিঘা জায়গা নিয়ে ৩২ হাজার বাড়িঘর সরিয়ে এই শহরের ৪০ লাখ মানুষের জন্য এগুলো (রাস্তা) করে দিয়েছি।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ উঠে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। এতে ফুঁসে উঠে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আর টলে যায় জাহাঙ্গীরের ‘গাজীপুর সাম্রাজ্য’।
নভেম্বরের শেষ দিকে মেয়র পদ হারান জাহাঙ্গীর। এর আগে আওয়ামী লীগ তার সব দলীয় পদ কেড়ে নেয়। এরপর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তও শুরু হয়। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই।
গত কয়েক মাস ধরে জাহাঙ্গীর ছিলেন অনেকটাই একা। প্রকাশ্যে সেভাবে দেখা যায়নি। সম্প্রতি তাকে গ্রেপ্তারের গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে।
নিজ গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আপনারা গর্ব করে বলতে পারবেন, আমাদের গ্রামের সন্তানের মাধ্যমে তোমরা এই উছিলায় চলতেছ। আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হক সাহেবের বাড়ির রাস্তার টাকা আমি বরাদ্দ এনে দিয়েছি। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের বাড়ির রাস্তা, তার সন্তানের বাড়ির রাস্তা আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বরাদ্দ এনে দিয়েছি।
‘সাবেক মন্ত্রী ও এমপি এম এ মান্নান সাহেবের বাড়ির রাস্তা আমি অর্থ বরাদ্দ এনে দিয়েছি। সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার, আমার সঙ্গে যিনি বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছিলেন, তার বাড়ির রাস্তা আমি বরাদ্দ এনে দিয়েছি।
‘আজমত উল্লাহ খানের বাসার সামনে রাস্তার বরাদ্দ আমি এনে দিয়েছি। আমাদের এখানে যত জনপ্রতিনিধি ছিল তাদের সবার বাড়ির রাস্তা আমার সিগনেচারে। সরকারের কাছ থেকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অর্থ এনে আমি তাদের বাড়িঘরের রাস্তা করে দিয়েছি।’
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সময় থাকলে আমি একটা একটা করে সব ব্যাখ্যা দিতে পারতাম। এজন্য আপনারা গর্ব করে বলতে পারবেন এই শহরের আড়াই শ গ্রামের মধ্যে আপনারা কানাইয়া গ্রামের মানুষ। আপনারা বলতে পারবেন, তোমরা যারা এখানে জাতীয়ভাবে রাজনীতি করো, তোমাদের রাস্তার উছিলা আমাদের সন্তান।
‘তোমরা ঘর থেকে বেরিয়ে যে পাকা রাস্তা দিয়ে যাও, সেই পাকা রাস্তাটা আমাদের সন্তান করে দিয়েছে। যদি তা না হয় তবে খাতা মেলো, ডেট দেখো। এখন আর মিথ্যা বলার কিছু নাই। কবে টেন্ডার হইছে, টাকা দিছে কে, বরাদ্দ দিছে কে, আনছে কোথা থেকে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমি আনছি।’
পদ হারানো মেয়র বলেন, ‘আপানাদের মাথা নত করে চলার এখানে কিছু নাই। মাথা উঁচু করে চলতে পারবেন। কারণ এই ৫০ বছরে যারা শাসন ব্যবস্থায় ছিল, তাদের উছিলা আমি হইছি। আমি হইছি মানে আপনারা হইছেন।
‘এই শহরের সব জায়গায় আমি একাই ঘুরি। কারণ, যদি আদর্শ ঠিক থাকে তাহলে সব ঠিক থাকে। আমি আমার আমলনামাটা ওইভাবেই তৈরি করছি। আমারে যদি মাইরাও ফেলে, বুলেটও দেয়, আমি অনেক সিডি রাইখা গেছি আপনারা দেখতে পারবেন। আমার ওপর কারা কারা অন্যায় করছে, অবিচার করছে, কারা মিথ্যা নাটক সাজাইছে এগুলা সব একদিন বের হবে।’
মতবিনিময় সভা শেষে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর প্রেস ক্লাবের আয়োজনে ইফতার মাহফিলে অংশ নেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার এম সফিউল্লাহ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার জাকির হাসান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়ন, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম মাসুম, সাধারণ সম্পাদক শাহ সামছুল হক রিপন।