গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন চাইছেন তিনি।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লাকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ও ‘শহীদ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাষ্ট্রদ্রোহ হামলায় গ্রেপ্তারের পর কারামুক্ত সাংবাদিক রুহুল আমীন গাজীর সংবর্ধনা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি-জামায়াতপন্থি সাংবাদিকদের এই দুটি সংগঠন।
জনাব গাজী জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম- এর বিশেষ প্রতিনিধি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রুহুল আমীন গাজীকে একেবারে মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়েছিল। সাংবাদিকরা তাদের যেসব সমস্যা আছে সেগুলো যেন তুলে ধরতে না পারে সেজন্য তাকে আটক রাখা হয়েছিল।’
বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন করে সাংবাদিকদের মত প্রকাশে বাধা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। বলেন, ‘সেই আইনগুলোর বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা যাতে রুখে দাঁড়াতে না পারে, সে কারণে রুহুল আমীন গাজীকে আটক রাখা হয়েছিল।’
সরকার হটানোর আন্দোলনে গণমাধ্যমকর্মীদের পাশে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই এই সরকারকে বাধ্য করি পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন একটা সংসদ আমরা গঠন করি, যারা জনগণের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে কাজ করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের (সাংবাদিক) আহ্বান জানাব, আজকে দেশে যে গণতন্ত্র নেই, বাক স্বাধীনতা নেই, আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই এসব বিষয়গুলোকে যদি আমাদের রক্ষা করতে হয়, রাষ্ট্রকে যদি রক্ষা করতে হয়, ১৯৭১ সালে যে লক্ষ্যগুলো নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সেটা যদি রক্ষা করতে হয়, তাহলে আমাদের আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।’
গণমাধ্যমকর্মী আইন-২০২২ প্রত্যাহারের দাবিজাতীয় সংসদে উত্থাপিত গণমাধ্যমকর্মী আইন-২০২২ বিল প্রত্যাহারেরও দাবি জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এই আইন করা হচ্ছে যাতে কোনো মতেই এই সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে না পারে। যারাই জনগণের পক্ষে কথা বলবে তাদেরকে যেন নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেজন্য এই আইন করা হচ্ছে।’
সংসদে যারা আছে তারা সবাই সরকারের লেজুবৃত্তি করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই আইন পাস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এটি যদি পাস হয়ে যায়, তাহলে পুরোপুরিভাবে ফ্যাসিবাদী শাসন পাকাপোক্ত হয়ে যাবে। তাই আজকে এই সমাবেশ থেকে এই আইন প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
‘সেই সঙ্গে সাংবাদিক ভাইদের কাছে আহবান জানাতে চাই, অনুরোধ জানাতে চাই আপনারা আপনাদের যেসব ছোটখাটো বিভেদ আছে সেগুলো ভুলে গিয়ে, নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য, গণমাধ্যমের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য, ফ্রিডম অব প্রেসকে রক্ষার জন্য, বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে কথা বলার জন্যে একতাবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করেন।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি ম মাসুম ও কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম ভূইয়া, বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, কামাল উদ্দিন সবুজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।
বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই সিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ডিইউজের সাবেক সেক্রেটারি মুনসি আব্দুল মান্নানও এতে অংশ নেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, রফিকুল ইসলাম আজাদ, মুরসালিন নোমানী, ডিআরইউর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব, বিএফইউজের সহসভাপতি ওবায়দুল রহমান শাহিন, ডিইউজের সহসভাপতি বাছির জামাল, রাশেদুল হক, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব জাকির হোসেনও ইফতারে উপস্থিত ছিলেন।