করোনা সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের চাপ কম ছিল মহাসড়কগুলোতে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় এ বছর ঢাকা থেকে পূর্বমুখী দুই মহাসড়ক দিয়ে কোটি মানুষ যাতায়াত করবে বলে ধারণা পুলিশের।
ব্যাপকসংখ্যক মানুষ ঈদযাত্রায় ঢাকা ছেড়ে যাওয়ায় এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকবে। এতে করে যানজটে দুর্ভোগ বাড়তে পারে ঘরমুখো মানুষের। এমন শঙ্কার পেছনে ১০টি কারণ চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
সড়কের মূল অংশ দখল করে গড়ে ওঠা স্ট্যান্ড, তিন চাকার যান, সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক থামিয়ে রাখা ও দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা সম্ভাব্য যানজটের মূল কারণ হিসেবে দেখছে পুলিশ।
অন্য যেসব কারণে যানজট তীব্র হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে- পণ্যবাহী ধীরগতির যানবাহন, বাস থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করানো, সড়কের পাশে জমে থাকা ময়লার স্তূপ, ধূলার আধিক্য, রাস্তার কারপেট ফুলে ওঠা এবং মহাসড়কের স্থানে স্থানে স্থানে ছোট-বড় গর্ত।
ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ভোগান্তি লাগব করতে এসব সমস্যা সমাধানের কাজ শুরু করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ সার্কেল হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার অর্মিত সূত্রধর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ, তিন চাকার যান চলাচল বন্ধসহ মহাসড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি স্তরে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
‘ঈদযাত্রার আগে থেকেই দুটি মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ১২ থেকে ১৫টি পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করবে। পাশাপাশি মোটর সাইকেল টহল বাড়ানো হবে। তাছাড়া মহাসড়কের কোনো পয়েন্টে যানজট সৃষ্টি হলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তৎপর থাকবে।’
হাইওয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রামে মহাসড়কে মেঘনা টোল প্লাজায় দ্রুত গাড়ি ছাড়ার ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। টোল প্লাজা কর্তৃপক্ষ সব ক’টি কাউন্টার খোলা রাখার কথা জানিয়েছে।
‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কাঁচপুর থেকে পুরিন্দা বাজার পর্যন্ত দুই লেন হওয়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করবে। যারা যানবাহন আইন মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ঈদযাত্রার সময় দুর্ভোগ কমাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
শনিবার ও রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ অংশে সড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অবৈধ স্থাপনা। নারায়ণণগঞ্জ অংশে ৩০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে শিমরাইল, মদনপুর, কেওডালা, মোগরাপাড়াসহ মেঘনায় মূল সড়ক দখল করে বাস, মাইক্রোবাস, ট্যাক্সি, লেগুনা ও অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এ সড়কে পণ্যবাহী ধীরগতির ট্রাকের কারণে আটকা পড়ে থাকে অন্যান্য যানবাহন। সড়কের দু’পাশে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা তো আছেই। ফলে ঈদযাত্রায় যানজট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে এসব এলাকায়।
ঈদযাত্রায় ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ বাড়াতে পারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও। কাঁচপুর থেকে আড়াইহাজারের পুরিন্দাবাজার পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে স্ট্যান্ড। এ সড়কে তিন চাকার যান চলাচল করে সবচেয়ে বেশি।
পণ্যবাহী ট্রাক থামিয়ে রাখাসহ সড়কের পাশে জমে থাকা ময়লার স্তূপ, ধূলা ও রাস্তার কারপেট ফুলে উঠে ছোট-বড় গর্তও দেখা গেছে কাঁচপুর থেকে ভুলতা এলাকা পর্যন্ত। এ সড়কে যাত্রামুড়া, বরাব, রূপসী, তারাব কর্ণগোপ এলাকায় যানজটের শঙ্কা সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া দুটি মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা মদনপুর-গাঈপুর এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের যানবাহনের চাপেও যানজট সৃষ্টি হয়।
জেলা পুলিশের ট্রাফিক শাখার পরির্দশক আব্দুল করিম শেখ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতে মোবাইল টিম থাকবে। পাশাপাশি সাইনবোর্ডসহ আরও কিছু এলাকায় আমরা তাদের সহযোগিতা করব। সবার ঈদযাত্রা যাতে যানজটমুক্ত হয় সেটাই আমরা চাই।’
যানজট এড়াতে অনেকে আগেই ঢাকা ছাড়ছেন
রাজধানীর বাসিন্দা অনেকেই ঈদযাত্রায় যানজটের ভয়ে অনেকে আগেভাগেই ঢাকা ছাড়ছেন। কেউ কেউ আবার পেশাগত ব্যস্ততায় নিজে যেতে না পারলেও পরিবারের সদস্যদের আগেভাগেই গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
সাইকেলের পার্টস বিক্রেতা আব্দুর রহমান তাদের একজন। করোনার কারনে গত দু’বছর ঈদ করতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে যেতে পারেনি। এ বছর ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ার চিন্তায় তিনি আগেভাগেই পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠাতে সাইনবোর্ড থেকে টিকিট সংগ্রহ করেন শনিবার বিকেলে।
টিকিট কাউন্টারের সামনে এদিন আলাপচারিতায় নিউজবাংলাকে আব্দুর রহমান বলেন, ‘কারণ ঈদের দুই-একদিন আগে মহাসড় যানজট লাগতে পারে। সেজন্য স্ত্রী ও সন্তানদের আগেই গ্রামে পাঠামু। সেখানে মা ও বড় ভাইয়ের পরিবার আছে। ঈদের ৬ দিন আগের টিকিট কিনছি।’
কাচঁপুর থেকে কিশোরগঞ্জ যেতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন কেরানীগঞ্জে গম মিলের শ্রমিক আসাদুল হক। মিলে কাজ কম থাকায় তিনি আগেই বাড়ি যাওয়ার সিদান্ত নেন। ঈদের সময় সড়কে যানজট ও বাড়তি ভাড়া এড়াতে চান তিনি। বলেন, ‘ঈদের টাইমে গাড়ি রাস্তায় নড়ে না। একটার সাথে আরেকটা লেগে থাকে। তার মইধ্যে ভাড়াও ডাবল। আমাগো কামাই কম। এতো ভাড়া দিয়া জামে গাড়িতে বইসা থাকার চেয়ে আগে চইলা যাইতাছি।’