বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যাত্রী বাড়লেও রংপুরে বন্ধ ১৪ ট্রেন

  •    
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ২১:১৬

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রংপুর থেকে রেলে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬১ জন। এতে টিকিট বিক্রি বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ৩৯১ টাকা।

বছর দুয়েক আগেও রংপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কিংবা এই স্টেশন হয়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ২৪টি ট্রেন বিপুল পরিমাণ যাত্রী আনা-নেয়া করেছে। কিন্তু দিনে দিনে যাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও, বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে ১৪টি ট্রেন। বাকি ১০টি চললেও সংখ্যা কমে যাওয়ায় কোনো ট্রেনই এখন সময়সূচি মেনে চলছে না। এসব কারণে রংপুর বিভাগে ট্রেনযাত্রীদের ভোগান্তি এখন চরমে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর বিষয়ে রংপুর স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মোস্তাক আহমেদ জানান, জনবল সংকট এবং লোকসানের কারণে করোনার দুই বছরে বন্ধ হয়েছে ৮টি ট্রেন। এর মধ্যে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ বন্ধ হয়েছে সেভেন-আপ, এইট-ডাউন, ডেমু-আপ ও ডাউন এবং রমনা লোকাল আপ ও ডাউন। এ ছাড়া চলতি বছর ২ মার্চ বন্ধ হয়েছে কমিউটার ৬৩ ও কমিউটার ৬৪। বাকিগুলো বন্ধ হয়েছে করোনারও আগেই।

জানা গেছে, বন্ধ হওয়া ট্রেনের মধ্যে ‘রংপুর কমিউটার’ চলতো লালমনিরহাট-দিনাজপুর লাইনে, ‘উত্তরবঙ্গ মেইল’ বগুড়া-পঞ্চগড়, ‘লোকাল’ ট্রেনটি কুড়িগ্রাম-দিনাজপুর, ‘পার্বতীপুর কমিউটার’ লালমনিরহাট-দিনাজপুর এবং ‘মিশ্র ট্রেনটি চলতো লালমনিরহাট-দিনাজুর লাইনে। প্রতিটি ট্রেনই যাওয়া-আসার পথে রংপুর স্টেশনে বিরতি দিতো এবং যাত্রী পরিবহন করতো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এসব ট্রেন বন্ধ থাকায় চাকরি হারিয়েছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অন্তত ৫৪ কর্মচারী। আর লোকবলের অভাবে বন্ধ হয়েছে রংপুরের মীরবাগ, অন্নদা নগর, চৌধুরানী, সুন্দরগঞ্জের নলডাঙ্গা, দিনাজপুরের খোলাহাটি সাব রেলওয়ে স্টেশন।

রংপুর স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে লোকবল সংকট

রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে দায়িত্বরত একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে রংপুর স্টেশনেই জনবল সংকট রয়েছে। এর মধ্যে দুইজন সহকারী স্টেশন মাস্টার নেই বহু বছর ধরে। এ ছাড়া স্টেশন সুপার, বুকিং ক্লার্ক, টিকেট কালেক্টর, সিগন্যাল মেইনটেইনার এবং খালাসি পদেও লোকবলের অভাব রয়েছে। তারপরও জোড়াতালি দিয়ে চলছে উত্তরবঙ্গের পুরনো এই স্টেশনটি।

রংপুর রেলস্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন রুটে ট্রেনের যাত্রীদের ভিড় থাকলেও সবচেয়ে বেশি যাত্রী হচ্ছে ঢাকা রুটে। এই রুটে রংপুর এক্সপ্রেস ও কুড়িগ্রাম এক্সেপ্রেস নামে দুটি ট্রেন রংপুর থেকে সরাসরি ঢাকায় যায়।’

রংপুর রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রংপুর রেলস্টেশন থেকে পূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রেন যায়। অনলাইন কিংবা স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। অনেক যাত্রী টিকিট না পেয়ে ফিরে যান।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রংপুর থেকে রেলে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬১ জন। এতে টিকিট বিক্রি বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ৩৯১ টাকা।

এদিকে, ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেস ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের বরাদ্দ টিকিট কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রংপুরের যাত্রীরা। বিভাগীয় নগরী হিসেবে রংপুরের জন্য যে টিকিট বরাদ্দ তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের। দ্রুত ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনসহ বিদ্যমান ট্রেনের কোচ বাড়ানো এবং বন্ধ ট্রেন চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।

নগরীর সাতমাথা এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক আহমেদ কবীর রাজু বলেন, ‘রংপুরবাসী দীর্ঘদিন ধরে রংপুরে দিবাকালীন ট্রেনের দাবি জানিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। আসন্ন ঈদে বাড়ি ও কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে বাড়তি চাপে পড়তে যাচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষেরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে দুইদিন ধরে কমলাপুর স্টেশনে গিয়েও টিকেট পায়নি। ঢাকাগামী দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেসের বরাদ্দ টিকিট অল্প থাকায় রংপুরের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। এটা দূর হওয়া দরকার।’

স্টেশন এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা সরওয়ার বলেন, ‘রংপুরে ট্রেনের যাত্রীদের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে ট্রেনের সংখ্যা। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে রেলের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে সরকারকে রেলের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। রংপুর বিভাগীয় শহর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গমনেচ্ছুদের সংখ্যা বেড়েছে। এর পরিসংখ্যান তৈরি করে রংপুরে ট্রেন বরাদ্দ করতে হবে।’

ঢাকাগামী আন্ত:নগর ট্রেনে বরাদ্দ টিকিট কম থাকার অভিযোগ রংপুরের বাসিন্দাদের

রংপুর মেডিক্যাল পর্বগেট এলাকার বাসিন্দা গোলাম রহমান বলেন, ‘আমি নিয়মিত ঢাকা যাতায়াত করি। টিকিট কখনো পাই কখনো পাই না। ট্রেনের টিকিট পেতে ব্যর্থ হলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাসে যাই। আমি মনে করি, ট্রেন বাড়ানো দরকার।’

নগরীর কামালকাচনা (গুঞ্জনমোড়) এলাকার বাসিন্দা সাবিয়া হাসান বলেন, ‘আমি মাসে কমপক্ষে তিনবার ঢাকায় যাই। প্রতিবারই ট্রেনে যাই। ট্রেনে যাওয়াটাই নিরাপদ মনে করি। কিন্তু কখনো সময় মতো যেতে পারিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সকাল ৮টার ট্রেন, বেলা ১১টা পার হয়ে গেছে তবু আসেনি। এটা হয়রানি। ট্রেন সময় মতো চললে আমাদের এত হয়রানি হয় না।’

রংপুর বিভাগ উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক ওয়াদুদ আলী বলেন, ‘বহু আন্দোলন করে রংপুর থেকে ঢাকাগামী রংপুর-এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালুর ব্যবস্থা করেছি আমরা। যাত্রীরও অনেক চাপ বেড়েছে। কিন্তু ট্রেন বাড়েনি বরং কমেছে। এ ছাড়াও আমরা রংপুর-ঢাকা দিবাকালীন, রংপুর-চট্রগ্রাম, রংপুর-সিলেট, রংপুর-রাজশাহী দিবা ও রাত্রীকালীন আন্তনগর ট্রেন চালুর দাবি করে আসছি।’

রংপুর রেলের ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেন্ডেন্ট শংকর গাঙ্গুলী বলেন, ‘করোনাকালে বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো ইঞ্জিন সংকট এবং লোকামাস্টারের (চালক) অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। নতুন ট্রেন সংযোজন করা অথবা বিদ্যমান ট্রেনের কোচ সংখ্যা বাড়ানো দরকার। আমি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত আছেন এবং দ্রুত এ সমস্যা নিরসনের চেষ্টা চলছে।’

এসব বিষয়ে জানতে ফোন করা হয় বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (লালমনিরহাট) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদকে। তিনি বিরক্ত হয়ে দায়সারা ভাবে নিউজবাংলাকে বলেন, ঈদের পরে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারবো। হয়তো ঈদের পরে এসব ট্রেন চালু হবে।’

এ নিয়ে রংপুর সদর আসনের সাংসদ সা’দ এরশাদকে কয়েক দফায় ফোন করা হলেও তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিভাগের আরো খবর