ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমাতে মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি। তারা মনে করে, এটা করতে পারলে ঈদযাত্রায় সড়কে মৃত্যু কমে আসবে।
বাইক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ঈদের সময় রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইকের মতো ধীরগতির যান চলাচল বন্ধেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব দাবি জানান।
সড়ক দুর্ঘটনায় যত মৃত্যু হয়, তার মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি বাইক আরোহী। ঈদে বাড়ি ফিরতে ভোগান্তির কারণে বাইকে করে দূরপাল্লায় যাত্রার প্রবণতা বাড়ছে।
তবে এই বাহনগুলো সাধারণত দূরের যাত্রায় ব্যবহার করা খুবই বিপজ্জনক এ কারণে যে এর নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল। দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তিতে চালক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মহাসড়কে বাইক দুর্ঘটনা হয় প্রাণঘাতী।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত ঈদে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ও ৬২২ জন আহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৯ জন মারা যান বাইক আরোহী। আহত হন আরও ১৯৯ জন।
ওই বছর সড়কে মৃত্যুর ৪৩ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং আহতের ৩১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ছিল বাইক আরোহী।
গত দুই বছর করোনা পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধের কারণে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা ছিল তুলনামূলক কম। তবে এবার কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় বাইকে করে যাত্রা তিন গুণ বেশি থাকবে বলেও ধারণা করছে যাত্রীকল্যাণ সমিতি। মোজাম্মেল বলেন, ‘এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তিন গুণ বেড়ে যেতে পারে।’
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এবারের ঈদে ৫০ শতাংশ দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
যাত্রীকল্যাণ সমিতি বলছে, ‘করোনা সংকটে গত দুই বছরে দেশের পরিবহনের বহরে ১০ লাখ মোটরসাইকেল নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে। একই সময়ে প্রায় ২০ লাখ ইজিবাইক রাস্তায় নেমেছে। বর্তমানে ৩৫ লাখের বেশি মোটরসাইকেল ও ৪০ লাখের কাছাকাছি ইজিবাইক রাস্তায় চলাচল করে। যা দেশের যানজট ও জনজট প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। এবারের ঈদে জাতীয় মহাসড়কে এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভয়াবহ যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে।’
মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরও বলেন, ‘এবারের ঈদে গণপরিবহন সংকটকে কাজে লাগিয়ে ১২ লাখ ট্রিপ যাত্রী রাজধানী ঢাকা থেকে আশপাশের জেলাসহ বিভিন্ন দূরদূরান্তে মোটরসাইকেলে যাত্রা হতে পারে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন আন্তজেলায় রাইড শেয়ারিংয়ে আরও প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ ট্রিপ যাত্রী মোটরসাইকেলে বাড়ি যাবে।
‘ঈদ যাত্রীবহরে দেশের জাতীয় মহাসড়কে ২০ থেকে ২৫ লাখ মোটরসাইকেল রাস্তায় থাকবে। এসব মোটরসাইকেলে স্ত্রী-সন্তান, লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে ভারসাম্যহীন অবস্থায় বেপরোয়াভাবে বাস-কারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।’
যাত্রীকল্যাণ সমিতি বলছে, বিভিন্ন মহাসড়কে সার্ভিস লেইন না থাকায় ঈদ যাত্রীবহনের জন্য ১৫ লাখের বেশি ইজিবাইক, রিকসা, অটোরিকসা বিভিন্ন জাতীয় মহাসড়কে নেমে আসতে পারে।
‘এসব ছোট যানবাহন দূরপাল্লার বাস ও প্রাইভেট কারের গতি কমিয়ে দেয়া, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে যানজট তৈরি করা, রাস্তার মোড় ও বাসস্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করার পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।’