বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে এক নারী ও কথিত কবিরাজকে সালিশের নামে মারধরের অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি নারচী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
শনিবার সকালে উপজেলার নারচী ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সেই কবিরাজের নাম আব্দুল খালেক। তিনি সারিয়াকান্দি পৌরসভার ধাপ এলাকার বাসিন্দা। ওই গৃহবধূকে ধর্মের মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইউপি সদস্য থানায় এলে রোববার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও গণপিটুনির অভিযোগে মামলা করেছেন মারধরের অভিযোগ করা সেই গৃহবধূ।
রোববার দুপুরে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান।
সালিশের বিষয়ে কয়েকজন স্থানীয় জানান, কবিরাজ পরিচয়ে খালেক প্রতারণা করে বেড়াতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন নারীদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে আসছেন। এসব কর্মকাণ্ডের জেরে শনিবার তাকে গণকপাড়ার বাসিন্দারা আটক করে সালিশ বৈঠকে বসেছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, খালেক নিজেকে জিনের বাদশা পরিচয় দিতেন। সম্প্রতি গ্রামের টিটু নামে এক ভ্যানচালকের স্ত্রীকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মের মেয়ে বানান। আবার এই দোহাই দিয়ে অসামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
পরে খালেকের অনৈতিক কার্যকলাপ বুঝতে পেরে শনিবার সকালে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে ওই নারীর বাড়িতে যায়। সেখানে ওই নারী ও আব্দুল খালেককে আটক করে নিয়ে আসে।
রোববার থানায় আসা ফারুকুল ইসলাম নামে গণকপাড়ার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আব্দুল খালেক তো ভণ্ড মানুষ। তিনি সরল মানুষদের খুঁজে তাদের প্রতারিত করেন। এ কারণে ওই টিটু ও তার বউকে এবার টার্গেট করেছেন।
‘জিনের বাদশা পরিচয় দেয়া ওই গৃহবধূর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। শুধু তা-ই নয়, বড়লোক করে দেয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের স্কুলপড়ুয়া মেয়ের সঙ্গেও অনৈতিক সম্পর্ক করেছেন খালেক।’
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা রুহুল আলম বলেন, ‘খালেক পুরোপুরি ভণ্ডপ্রকৃতির মানুষ। তিনি সব জায়গায় গিয়ে পুতুল ও পয়সা কেনাবেচার গল্প শোনান। সরলপ্রকৃতির মানুষদের পেলেই কোটিপতি করে দেয়ার লোভ দেখান।
‘পাঁচ মাস ধরে খালেক গণকপাড়ায় আসা-যাওয়া শুরু করেছেন। তিনি প্রথম দিকে গ্রামের ওই গৃহবধূকে হাত খরচের নামে বিভিন্ন সময় টাকা-পয়সা দিতেন। পরে দেখা গেল সারা দিন তার বাড়িতে অবস্থান করতেন। শনিবার সকালে গ্রামবাসীরা তাদের অন্তরঙ্গ অবস্থায় আটক করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামবাসীর আটকের পরিপ্রেক্ষিতে ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে সালিশ করে দেন। সালিশে কথিত কবিরাজ খালেক ও গৃহবধূকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়।’
খালেক ওই নারীকে ধর্মের মেয়ে পরিচয় দেন বলেন স্বীকার করেছেন তার স্বামী। কথিত সেই কবিরাজ তার স্ত্রীর সম্পর্কে খালু হন।
শনিবার কী হয়েছিল প্রশ্ন করলে টিটু বলেন, ‘মেম্বার তরিকুল আমার স্ত্রীকে মারধর করেছেন। আর কিছু আমি জানি না।’
এসব ঘটনা নিশ্চিত করেছেন নারচী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন বান্টু। তিনি বলেন, ‘গণকপাড়ার গ্রামবাসী আব্দুল খালেক ও গৃহবধূকে এক ঘরে শুয়ে থাকা অবস্থায় আটক করে। পরে এটি নিয়ে সালিশে ইউপি সদস্য মারধর করে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় তরিকুল নামে সেই ইউপি সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।’
আব্দুল খালেকের বিষয়ে নারচী চেয়ারম্যান বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ব্যক্তি ভণ্ডপ্রকৃতির। তিনি নিজেকে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে কবিরাজি করে বেড়াতেন। মূলত, সরল মানুষ পেলেই তাদের প্রতারিত করেন আব্দুল খালেক।’
গ্রেপ্তার হওয়ায় আব্দুল খালেকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সারিয়াকান্দি থানার ওসি বলেন, ‘সালিশের নামে মারধরের ঘটনায় রোববার সকালে ইউপি সদস্য তরিকুলকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। পরে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় গ্রেপ্তার হন তিনি। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে।’
আব্দুল খালেকের প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কেউ দেয়নি। তবে মামলার তদন্তের সময় আমরা সবকিছু যাচাই করব। তখন তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠে এলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’