বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে প্রতিটি ভবনে: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:৩৮

উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নকারী, প্রকৌশলী ও স্থপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই কোনো প্ল্যান করবেন, প্রজেক্ট প্রস্তুত করবেন, যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রজেক্ট তৈরি করেন, তাদের প্রতিও আমার এই অনুরোধ থাকবে- এই সময়ে ফায়ার সার্ভিসের জন্য বিশেষ সুবিধা যাতে থাকে, সে বিষয়টি দেখতে হবে। অর্থাৎ তাদের গাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা, পানি পাওয়ার ব্যবস্থা। পানির প্রাপ্যতা যেন নিশ্চিত হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে অগ্নি নির্বাপণকারী কর্মীদের কাজের সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি ভবনের নকশা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একই সঙ্গে অগ্নি নির্বাপণকারী যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যারা এসব যন্ত্রপাতি পুড়িয়ে দেয় বা নষ্ট করে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

ঢাকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে রোববার সকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নকারী, প্রকৌশলী এবং স্থপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই কোনো প্ল্যান করবেন, প্রজেক্ট প্রস্তুত করবেন, যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রজেক্ট তৈরি করেন তাদের প্রতিও আমার এই অনুরোধ থাকবে এই সময়ে ফায়ার সার্ভিসের জন্য বিশেষ সুবিধা যাতে থাকে সে বিষয়টা দেখতে হবে। অর্থাৎ তাদের গাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা, পানি পাওয়ার ব্যবস্থা। পানির প্রাপ্যতা যেন নিশ্চিত হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

ফায়ার সার্ভিসের জন্য কেনা আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারে সবাইকে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, স্থানীয় জনগণেরও এই সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে। সরকারি সম্পদ মানে তা জনগণের সম্পদ।

তিনি বলেন, ‘আগুন লাগল। সেখানে গেল ফায়ার ফাইটাররা গাড়ি নিয়ে। অমনি গাড়ির ওপর আক্রমণ, গাড়িতেই আগুন ধরিয়ে দিল- এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে। যারা এরকম করবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা উদ্ধার কাজে যাবে, তাদের আক্রমণ যারা করতে আসে, তারা তো আসলে মানুষের শত্রু হয়ে যায়। কাজেই সেদিকটাও বিশেষভাবে দেখতে হবে, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বসুন্ধরা সিটিতে অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গ

২০১৬ সালে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ওঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। পুরো বক্তব্য জুড়ে ঘুরে ফিরে আসে সেই অগ্নিকাণ্ডের কথা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখন আগুন নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা তেমন ছিলই না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বসুন্ধরা এই সিটিটা, যেখানে আমাদের পান্থপথ, সেখানে হয়েছে। আসলে ওখানে ছিল খাল। নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। ওখানে নৌকাও আসত। আর ওই এলাকাটা ছিল বিশাল বিল এলাকা।

‘সেই বিল এলাকাটা ভরাট করে আর খালে বক্স কালভার্ট করার ফলে বসুন্ধরায় যখন আগুন লাগল, যে বিল্ডিং গড়ে ওঠেছে একটি বিলের ভেতরে সেই বিল্ডিংয়ে আগুন নেভাবার, পানি দেবার ব্যবস্থা নেই। পানি আনতে হয়েছিল হোটেল সোনারগাঁও থেকে, সোনাগাঁওয়ের সুইমিংপুল থেকে। এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়।’

ওই সময় ফায়ার সার্ভিসের চার তলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর সক্ষমতা ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরপর আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই। (ফায়ার সার্ভিস) এই প্রতিষ্ঠান যাতে আরও সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে, আধুনিক হয়।’

বসুন্ধরা সিটির আগুন লাগার অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, উন্নয়নের বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে, আমাদের আর্কিটেক্ট যারা, ইঞ্জিনিয়ার যারা, যারা ডিজাইন করেন বা সবকিছু করেন, প্রত্যেককে একটা কথা মনে রাখতে হবে।

‘যে কোনো একটা প্রজেক্ট যদি আপনারা তৈরি করেন, তাহলে সেই জায়গায় সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নি নির্বাপণের আধুনিক ব্যবস্থা আছে কিনা তা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি যদি কখনও আগুন লাগে সেটা নেভাবার জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় কিনা সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। জলাধারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। বক্স কালভার্ট বা জলাধার ভরাট করে কিছু করা ঠিক না।’

জলাধার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার বক্তব্যে আবারও ফিরে আসে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গটি।

তিনি বলেন, ‘যেখানে শুধু জল ছিল, যেখানে শুধু বিল ছিল সেখানে একটা বিল্ডিংয়ে অগ্নি নির্বাপণে পানি পাওয়া যায় না, একটা হোটেলের সুইমিং পুল থেকে পানি আনতে হয়। ঢাকা শহরের যেখানে অজস্র খাল, বিল, পুকুরের জায়গা, বাংলাদেশটাই তো এরকম।

‘ভরাট করার আগে তো এই কথাটা মাথায় রাখা উচিত ছিল। অনেক সময় আগুন লাগলে কাছাকাছি পানি পাওয়া যায় না। সময় মতো পানি দিতে পারে না বলে তো আগুন বসে থাকে না। আগুনের গতি তো তীব্র।’

প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন

দেশে ৪৫৬টি ফায়ার স্টেশন আছে জানিয়ে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে ফায়ার স্টেশনগুলো উদ্বোধন করতে যাচ্ছি, সেখানে ৫টি বিভাগে ২৫টি জেলায় ৩৯টি উপজেলায় ৪০টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কার্যক্রম আমরা চালু করতে যাচ্ছি। আগামী জুনের মধ্যে আরও ৫৫টি তৈরি হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অবশ্যই হতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষকেও এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে।’

অগ্নি নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাপণে দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ফায়ার ফাইটাররা যাতে আধুনিক, প্রশিক্ষিত হয় এবং আন্তর্জাতিক মানের হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি।

‘ইতিমধ্যে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। কিছু ফায়ার ফাইটারদের বিদেশেও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’

দেশের প্রতিটি ভবনে অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা থাকতে হবে বলেও জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিরাপত্তা দেখাটাও আমাদের দায়িত্ব।’

টাকার মোহ জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে

দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে প্রতিটি ভবনের প্রতিটি তলায় টানা বারান্দা, বেলকনি রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থের মোহে ভবনগুলোতে টানা বারান্দা বা বেলকনি রাখা হয় না বলে মনে করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই কোনো প্রজেক্ট আসে আমি এই কথা বলি। কিন্তু সবসময় সেটা যে রক্ষা করা হয়, তা নয়। এক ইঞ্চি জায়গাও কেউ ছাড়তে চায় না। ওইটুকু স্কয়ার ফিট ভাড়া দিলেই তো টাকা।

‘টাকার জন্য এই মোহ, অন্ধত্বটাও মানুষের জীবনকে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলে। কাজেই সেই বিষয়টা সবার মাথায় রাখতে হবে। অন্তত ফায়ার ফাইটাররা যাতে দাঁড়াতে পারে সেই জায়গাটা রাখতে হবে।’

দেশে ২০ তলা উচ্চতার ভবন পর্যন্ত ফায়ার ফাইটিংয়ের সক্ষমতা আছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘সেখানে আমি দেখতে পাই কেউ ১৭ তলা, কেউ ৩০ তলা, ৪০ তলা এরকম প্ল্যান করে বসে আছেন। তার আগে চিন্তা করতে হবে, এখানে কোনো দুর্ঘটনা দেখা দিলে সেখান থেকে উদ্ধার কাজ করবার মতো সক্ষমতা আমাদের কতদূর আছে। আমাদের সেই চিন্তাটা করে পরিকল্পনা নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

জলযানে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টিও ওঠে আসে সরকারপ্রধানের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘এত বড় বড় বিশাল জলযান। সেখানেও তাদের অগ্নি নির্বাপণের তেমন কোনো সুযোগ থাকে না। এ বিষয়টা দেখা উচিত।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিল্প-কলকারখানায় আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ দেয়া ও নিয়মিত বিরতিতে বিশেষ মহড়ার আয়োজন করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এ বিভাগের আরো খবর