নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে শিশু তাসকিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি রিমনকে অস্ত্রের জোগানদাতা সাকায়েত উল্লাহ জুয়েলকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বাহিনীটি বলছে, দুর্গাপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শনিবার রাত সোয়া ২টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের সোলায়মানের বাসা থেকে জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাসকিয়া হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি একই এলাকার বাদশার ঘর থেকে একটি পাইপগান, দুই রাউন্ড কার্তুজ, দুটি কিরিচ ও একটি রামদা উদ্ধার করা হয়।
জুয়েল ও পলাতক আসামি বাদশার বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
তাসকিয়া হত্যার পরদিন ১৪ এপ্রিল মামলা করেন নিহতের খালু হুমায়ুন কবির। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে তাদের জুয়েলের নাম ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জুয়েলের নাম উঠে আসে প্রধান আসামি মামুন উদ্দিন রিমনের জবানবন্দিতে। এসপি জানান, রিমন জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি ২০ হাজার টাকায় একটি শটগান ভাড়া নেন জুয়েলের কাছ থেকে। এর পর থেকেই জুয়েলকে ধরতে অভিযান শুরু করে পুলিশ।
তাসকিয়া হত্যা: অস্ত্রের জোগানদাতা কে এই জুয়েল- এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে নিউজবাংলা। প্রতিবেদনে উঠে আসে জুয়েল শিশু তাসকিয়া হত্যার অন্যতম আসামি আবদুর রহিমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের ইউপি মেম্বার নুরুল হুদা মানিক নিউজবাংলাকে জানান, গ্রামের মৃত হাবিব উল্ল্যার সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার ছোট জুয়েল। তার মেজো ভাই মো. সোহেলকে ২০১৫ সালে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সোহেল এলাকায় পিচ্চি সোহেল নামে পরিচিত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের এক যুবক জানান, ‘জুয়েল শিশু তাসকিয়া হত্যায় জড়িত রিমন বাহিনীর অন্যতম সদস্য রহিমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দীর্ঘদিন ধরে সে এই গ্যাংয়ের সদস্য। জুয়েলের সঙ্গে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর যোগাযোগ আছে। কিছু রাজনৈতিক বড় ভাই তাদের আধিপত্য বিস্তারে তাদের ব্যবহার করে।’
১৩ এপ্রিল শিশু তাসকিয়াকে হত্যা করা হয় হাজিপুর ইউনিয়নের মালেকার বাপের এলাকায়। এই জায়গাটি জুয়েলের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের বাড়ি থেকে আধাকিলোমিটারের একটু বেশি দূরে। শনিবার ঘটনাস্থলে নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাসকিয়া হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে।
মামুন বলেন, ‘রিমন, রহিম, মহিন ও জুয়েল এক গ্যাংয়ের লোক। সোহেল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। প্রতিপক্ষের গুলিতে প্রাণ হারানোর আগে সে তার কিছু অস্ত্র জুয়েলকে দিয়ে যায়। এসব অস্ত্র ভাড়া দিয়েই সে (জুয়েল) চলে। সে কোনো কাজ করে না।’
যা ঘটেছিল
পুলিশ জানায়, পূর্ব হাজীপুর গ্রামের খোরশেদ আলম দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মো. বাদশার কাছে তার কৃষিজমির মাটি বিক্রি করেন। চুক্তি অনুযায়ী ৬ ফুট মাটি কেটে নেয়ার কথা। তবে বাদশা এর চেয়ে বেশি মাটি কাটতে চাইলে খোরশেদের ভাই ফিরোজ আলম বাধা দেন।
বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সালিশ-বৈঠক করে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। এতে অংশ নেন তাসকিয়ার বাবা আবু জাহের। তবে প্রথম দফার আলোচনা ভেস্তে যায়। ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ফিরোজের বাড়িতে বৈঠক চলাকালে রিমনের নেতৃত্বে সেখানে ককটেল হামলা ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
পরদিন ফিরোজ থানায় অভিযোগ দেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে অভিযুক্ত কাউকে না পাওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ চলে আসে।
এই থানায় যাওয়ার কারণে ১০ তারিখ আবার ফিরোজের বাড়িতে হামলা চালানাে হয়। তখন ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানায় ফিরোজের মেয়ে শেফালি। এরপর আবারও ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে ব্যর্থ হয়।
অভিযোগ ওঠে, তাসকিয়ার বাবা আবু জাহেরের কারণে ওই বৈঠকগুলো কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হয়। তখন সন্ত্রাসীরা জাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করে।