ঠাকুরগাঁওয়ে ধর্মীয় বিভাজনে উসকানি দেয়ার অভিযোগের মামলায় সাবেক কাউন্সিলর বাবুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক রমেশ কুমার দাগা শনিবার দুপুরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বাবুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বাড়ি পৌরসভার গোবিন্দ নগর এলাকায়।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বরাতে ওসি জানান, গত ১৭ এপ্রিল কয়েকজন সাওতাঁল ও ওড়াও যুবক মদ খেয়ে তরিকুল ইসলাম বিপু নামের একজনকে মারধর করেন। এ ঘটনার পর বাবুলের নেতৃত্বে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ৮০ থেকে ৯০ জন মুসল্লি মন্দিরপাড়া আড়তের পাশের বায়তুন নাজাত জামে মসজিদের সামনে মানববন্ধন করেন৷
একপর্যায়ে তারা মসজিদের সামনে ঠাকুরগাঁও-রাণীশংকৈল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। সেই সঙ্গে বাবুলকে হেফাজতে নেয়া হয়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুনুর রশীদ দণ্ডবিধির ১৫১ ধারায় বাবুলকে আসামি করে মামলা করেন।
১৫১ ধারায় প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পাঁচ বা এর চেয়ে বেশি ব্যক্তির কোনো সমাবেশে অংশ নেয়ার অপরাধ ও শাস্তির প্রসঙ্গ রয়েছে। এতে বলা হয়, গণশান্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের কোনো সমাবেশে অংশ নিলে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডই হতে পারে।
বাবুলের শাস্তির দাবিতে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও ওড়াও সংগঠন।
সমাবেশে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ঠাকুরগাঁওয়ের সভাপতি যাকোব খালকো বলেন, ‘সাবেক কাউন্সিলর বাবুল স্থানীয় মুসলিমদের উসকানি দিয়ে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছেন। তিনি আদিবাসীদের সঙ্গে দাঙ্গা বাধিয়ে আমাদের জমি আত্মসাৎ করতে চান।
‘বাবুল ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করছেন, জোর করে ফাঁকা চেক ও জমি লিখে নিচ্ছেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা সুবাস বলেন, ‘১৭ এপ্রিল বাবুল আমাদের জমি দখল করতে না পেরে মুসলমানদের খেপিয়ে দেন। তিনি বলেন, ১৭ তারিখ নাকি আদিবাসীরা মসজিদ থেকে এক মুসল্লিকে বের করে মারধর করেছে। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
‘মিথ্যা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২২ এপ্রিল জুমার নামাজের পর বহিরাগতদের নিয়ে মানববন্ধন করেন কাউন্সিলর। এতে জাতিগত দ্বন্দ্ব বেধে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আমরা ধর্মীয় উসকানিদাতা ও ভূমিদস্যু কাউন্সিলরের বিচারের দাবি জানাই।’
মানববন্ধন শেষে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।
জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে, যাতে কোনো ভূমিদস্যু অন্যায়ভাবে আদিবাসীদের জমি আত্মসাৎ করতে না পারে।’