বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এখনও মা-ফুপু-দাদির লাশ খুঁজছেন দুই পা হারানো রেবেকা

  •    
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ১১:২৭

রেবেকা বলেন, ‘টাকার কথা চিন্তা করে কাজ শুরু করি। সকালে একসঙ্গে খাওয়ার জন্য মা নাস্তা নিয়ে আমার কাছে আসে। আমি একটু পরে খাওয়ার কথা জানাই। এর কিছুক্ষণ পরই বিল্ডিং ধসে পড়ে। মায়ের আনা নাস্তা খাওয়া তো দূরের কথা, তিন দিন কোনো খাবার জোটেনি।’

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে আহত শ্রমিকদের একজন রেবেকা খাতুন। দুর্ঘটনায় তিনি হারিয়েছেন দুই পা। নয় বছরেও খোঁজ পাননি মা, ফুপু ও দাদির।

এখনও দুর্ঘটনার দিনের স্মৃতি তাকে তাড়া করে ফেরে। নিউজবাংলাকে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন রেবেকা।

জানান, ২৩ এপ্রিল বিল্ডিংয়ে ফাটল দেখা দেয়ায় বিকেল ৪টায় সবাইকে ছুটি দেয়া হয়। তবে পরদিনই আবার কাজে যোগ দিতে বলা হয়। শ্রমিকদের অনেকে এই অবস্থায় কাজ করতে অনীহা জানালে কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন-ভাতা বন্ধসহ চাকরি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়।

রেবেকা বলেন, ‘টাকার কথা চিন্তা করে কাজ শুরু করি। সকালে একসঙ্গে খাওয়ার জন্য মা নাস্তা নিয়ে আমার কাছে আসে। আমি একটু পরে খাওয়ার কথা জানাই। এর কিছুক্ষণ পরই বিল্ডিং ধসে পড়ে।

‘মায়ের আনা নাস্তা খাওয়া তো দূরের কথা, তিন দিন কোনো খাবার জোটেনি। টানা তিন দিন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ছিলাম। এরপর উদ্ধারকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্ঞান ফেরার পর রেবেকা জানতে পারেন তার দুই পা কেটে ফেলা হয়েছে।

বলেন, ‘জ্ঞান আসলে জানতে পারি, আমার দুই পা উরুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। দুই পায়ে আটবার অপারেশন করা হয়েছে। এক বছর ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফিরি। শুরু হয় নতুন জীবন।’

রানা প্লাজার কথা হয়তো এখন অনেকেই ভুলে যেতে বসেছে। তবে সেদিনের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা আজও আমি ভুলতে পারিনি, কখনও পারবও না।

রেবেকা তার স্বামী মোস্তাফিজার রহমানের সঙ্গে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামে থাকেন। তাদের দুই সন্তান সাত বছর বয়সী ছিদরাতুন মুনতাহা ও তিন বছর বয়সী মাদানী আন নুর।

তিনি বলেন, ‘সন্তানরা অন্য বাচ্চাদের মতো আমার কোলে উঠতে চায় কিন্তু আমি এক অভাগা মা। না পারি সন্তানদের আদর করে কোলে নিতে, না পারি স্বামীর কোনো কাজে আসতে। রানা প্লাজার কথা হয়তো এখন অনেকেই ভুলে যেতে বসেছে। তবে সেদিনের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা আজও আমি ভুলতে পারিনি, কখনও পারবও না।

‘এই দুর্ঘটনা আমার দুই পা কেড়ে নিয়েছে। আমার মা, ফুপু আর দাদির জীবন নিয়ে নিয়েছে। তারাও ওখানে কাজ করত। ভবন ধসের পর থেকে তারা নিখোঁজ।’

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই মূলত রেবেকার সংসার চলে। তার স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। তবে স্ত্রীকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করার জন্য বাইরে তেমন কাজ করতে পারেন না।

রেবেকার দুইটি অঙ্গহানি হয়েছে। তাই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। তবে বিজিএমইএ সরকারের কাছে তথ্য পাঠানোর সময় এক অঙ্গহানির কথা লেখে। তাই ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পেয়েছি।

একটি বেসরকারি সংস্থা রেবেকার দুটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা ও একটি বাড়ি করে দিয়েছে। তবে স্বামীর সাহায্য ছাড়া এই পা নিয়ে রেবেকা তেমন চলাফেরা করতে পারেন না।

স্বামী মোস্তাফিজুর বলেন, ‘রেবেকার দুইটি অঙ্গহানি হয়েছে। তাই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। তবে বিজিএমইএ সরকারের কাছে তথ্য পাঠানোর সময় এক অঙ্গহানির কথা লেখে। তাই ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পেয়েছি।

‘আমরা বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তবে এখনও কোনো সমাধান হয়নি।’

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হয়ে ও পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক মানুষ। দেশের ইতিহাসে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি সবচেয়ে ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনা।

এ ঘটনায় নিখোঁজ হন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কাজিহাল ডাঙ্গা গ্রামের গুলশান আক্তার সাবানা।

সাবানার স্বামী আতাউর রহমান জানান, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে তারা ঢাকায় গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মরদেহ পাননি। তবে নিখোঁজের তালিকায় সাবানায় নাম থাকায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ১৩ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে বাবার কাছেই থাকেন।

এ বিভাগের আরো খবর