বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তাসকিয়া হত্যা: অস্ত্রের ‘জোগানদাতা’ কে এই জুয়েল?

  •    
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০৩:২৩

জুয়েলের সহযোগী মো. আবদুল বলেন, ‘রিমন খারাপ ছেলে। তারা বাঁচার জন্য উল্টাপাল্টা নাম দিয়ে দিতে পারে। এদের (রিমন) গডফাদার কে? কারা এদের শেল্টার দেয়? এদের সঙ্গে যখন কোনো গ্যাঞ্জাম লাগে, তখন চৌমুহনী বাজার থেকে রিকয়েস্ট আসে কেন? আপনারা এ বিষয়গুলো নিয়ে লেখেন।’

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে শিশু তাসকিয়া আক্তার জান্নাত হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন প্রধান আসামি মামুন উদ্দিন রিমন।

গত বৃহস্পতিবার আমলি আদালত-৩-এর বিচারক তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, রিমন স্বীকারোক্তিতে বলেছে, ‘তিনি ২০ হাজার টাকায় একটি শর্টগান ভাড়া নেন দুর্গাপুর ইউনিয়নের মো. জুয়েলের কাছ থেকে। সেই অস্ত্র দিয়ে তাসকিয়া ও তার বাবা আবু জাহেরকে গুলি করেন। পরে তাসকিয়া মারা যায়।‘

তিন দিন আগে মূল আসামির জবানবন্দিতে উঠে আসে অস্ত্র সরবরাহকারী জুয়েলের নাম। এর পর থেকে তাকে খুঁজছে পুলিশ। তবে এখনও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

তাসকিয়া হত্যার পরদিন ১৪ এপ্রিল মামলা করেন নিহতের খালু হুমায়ুন কবির। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে তাদের মধ্যে ছিল না জুয়েলের নাম।

জুয়েলের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিউজবাংলার প্রতিবেদক যান দুর্গাপুর ইউনিয়নের দোকানঘর এলাকায়। সেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুয়েল শিশু তাসকিয়া হত্যার অন্যতম আসামি আবদুর রহিমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

কে এই জুয়েল?

জুয়েলের বাড়ি দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে। স্থানীয় ইউপি মেম্বার নুরুল হুদা মানিক নিউজবাংলাকে জানান, গ্রামের মৃত হাবিব উল্ল্যার সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার ছোট জুয়েল। তার মেজো ভাই মো. সোহেলকে ২০১৫ সালে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সোহেল এলাকায় পিচ্চি সোহেল নামে পরিচিত ছিলেন।

স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক ইব্রাহীম বাহার বলেন, ‘দুর্গাপুর বলি মসজিদের পাশে ফার্নিচার রং করার কাজ করেন জুয়েল। তিনি গোপনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কি না তা আমার জানা নেই।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের এক যুবক জানান, ‘জুয়েল শিশু তাসকিয়া হত্যায় জড়িত রিমন বাহিনীর অন্যতম সদস্য রহিমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দীর্ঘদিন ধরে সে এই গ্যাংয়ের সদস্য। জুয়েলের সঙ্গে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর যোগাযোগ আছে। কিছু রাজনৈতিক বড় ভাই তাদের আধিপত্য বিস্তারে তাদের ব্যবহার করে।’

রিমন বাহিনীর অন্যতম সদস্য রহিমের সঙ্গে জুয়েল। ছবি: নিউজবাংলা

১৩ এপ্রিল শিশু তাসকিয়াকে হত্যা করা হয় হাজিপুর ইউনিয়নের মালেকার বাপের এলাকায়। এই জায়গাটি জুয়েলের বাড়ি থেকে আধাকিলোমিটারের একটু বেশি দূরে। সেখানে যাওয়ার পর নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাসকিয়া হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে।

মামুন বলেন, ‘রিমন, রহিম, মহিন ও জুয়েল এক গ্যাংয়ের লোক। সোহেল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। প্রতিপক্ষের গুলিতে প্রাণ হারানোর আগে সে তার কিছু অস্ত্র জুয়েলকে দিয়ে যায়। এসব অস্ত্র ভাড়া দিয়েই সে (জুয়েল) চলে। সে কোনো কাজ করে না।’

তার সঙ্গে কথা বলার সময় সেখানে মোটরসাইকেলে দুই সহযোগীকে নিয়ে হঠাৎ উপস্থিত হন জুয়েল। কিছুক্ষণ পর তার সঙ্গী মো. আবদুল প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে আসেন।

দুই সহযোগীকে নিয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে আসেন জুয়েল। ছবি: নিউজবাংলা

আবদুল বলেন, ‘রিমন খারাপ ছেলে। তারা বাঁচার জন্য উল্টাপাল্টা নাম দিয়ে দিতে পারে। এদের (রিমন) গডফাদার কে? কারা এদের শেল্টার দেয়? এদের সঙ্গে যখন কোনো গ্যাঞ্জাম লাগে, তখন চৌমুহনী বাজার থেকে রিকয়েস্ট আসে কেন? আপনারা এ বিষয়গুলো নিয়ে লেখেন।’

জুয়েলের নামে থানায় কোনো অভিযোগ আছে কি না তা জানতে একাধিকবার বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়। ওসি তথ্য দেয়ার কথা বলে থানায় অপেক্ষা করতে বলেন। পরে জানান, তিনি ফোনে জানাবেন। তবে শনিবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি কোনো তথ্য দেননি।

তাসকিয়া হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক সবজেল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শনিবার রাতে জুয়েলের বাড়িতে তল্লাশি করেছে পুলিশ। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। আমরা তাকে আটক করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছি।’

যা ঘটেছিল

পুলিশ জানায়, পূর্ব হাজীপুর গ্রামের খোরশেদ আলম দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মো. বাদশার কাছে তার কৃষিজমির মাটি বিক্রি করেন। চুক্তি অনুযায়ী ৬ ফুট মাটি কেটে নেয়ার কথা। তবে বাদশা এর চেয়ে বেশি মাটি কাটতে চাইলে খোরশেদের ভাই ফিরোজ আলম বাধা দেন।

বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সালিশ-বৈঠক করে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। এতে অংশ নেন তাসকিয়ার বাবা আবু জাহের। তবে প্রথম দফার আলোচনা ভেস্তে যায়। ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ফিরোজের বাড়িতে বৈঠক চলাকালে রিমনের নেতৃত্বে সেখানে ককটেল হামলা ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে।

পরদিন ফিরোজ থানায় অভিযোগ দেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে অভিযুক্ত কাউকে না পাওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ চলে আসে।

এই থানায় যাওয়ার কারণে ১০ তারিখ আবার ফিরোজের বাড়িতে হামলা চালানাে হয়। তখন ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানায় ফিরোজের মেয়ে শেফালি। এরপর আবারও ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে ব্যর্থ হয়।

অভিযোগ ওঠে, তাসকিয়ার বাবা আবু জাহেরের কারণে ওই বৈঠকগুলো কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হয়। তখন সন্ত্রাসীরা জাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করে তার ওপর হামলা চালায়।

এ বিভাগের আরো খবর