২০ রোজা পাড়ি দিতে না দিতেই ঈদের আমেজ শুরু হয়ে গেছে চারদিকে। সরগরম হয়ে উঠেছে মার্কেটগুলো। কেনা-কাটার ধুম লেগেছে। বাচ্চারা নতুন পোশাক কিনে দেয়ার বায়না ধরছে বাবা-মায়ের কাছে। কিন্তু সেই সাধ্য কি সবার আছে?
ছেলেকে পোশাক কিনে দেয়ার সাধ্য নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিলুফা বেগমেরও। তিন বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন।
তবে, শেষ পর্যন্ত নিলুফার দুঃখ ঘুচে গেছে মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে। তার ১১ বছরের ছেলে রিয়াজ ওই ৫ টাকায় নতুন পোশাক ছাড়াও কিনেছে ঈদের দিনের জন্য দুধ, চিনি, সেমাইসহ আরও নানা উপকরণ।
শুধু রিয়াজই নয়, শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের অন্তত ৭০০ অসহায় ও বঞ্চিত শিশু-কিশোর এমন আনন্দে মেতেছে। ‘হারাবোনা ৯০’ নামে এক সামাজিক সংগঠন ছিল এর নেপথ্যে। শহরের আনন্দময়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে তারা এক অভিনব বাজারের আয়োজন করেন। সেখানে শিশু-কিশোরদের মাঝে মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, স্কার্ট, ফ্রক, দুধ, সেমাই, চিনিসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে।
অভিনব এই বাজারে কথা হয় ৮ বছরের হুমায়ূনের সঙ্গে। তার ভাষায়, ‘এতদিন আব্বার সাথে বাজারে গেছি। আজ নিজেই বাজার করতে আইছি। আব্বা টাকা দিছে। পরে দোকানদাররে ৫ টাকা দিলে হেরা আমারে কাপড় দিছে। আবার খাইবার লাইগা সেমাইও দিছে। আমি আজ অনেক খুশি।’
হুমায়ূনের বাবা রিকশা চালক আলী মিয়া বলেন, ‘তাগো আয়োজন খুব সুন্দর। বাজার লইয়া খুব পেরেসানিতে আছিলাম। পোলারে কাপড় কেমনে কিন্না দিমু এইডাও চিন্তাত আছিল। কিন্তু ৫ টাহা দিয়া বাচ্চার ঈদের কাপড় আর খাওনের জিনিস দেওনে আমার চিন্তা দূর হইছে। পোলাডা খুশি। আর দুধ, সেমাই চিনি নেওনে বউও খুশি হবে।’
পৌর শহরের সুবিধাবঞ্চিত ৭০০ শিশু-কিশোরের জন্য এই বাজারের আয়োজন করা হয়
বাজারের আয়োজক ‘হারবোনা ৯০’ এর সদস্য ডা. ছাইফুদ্দিন আরিফ শুভ্র জানান, ঈদ আনন্দ হোক সবার- এমন ভাবনা থেকেই বন্ধুমহল একজোট হয়ে সমাজের বিত্তবানদের অনুপ্রাণিত করতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
এ ছাড়া গত বছর করোনার মধ্যে নিম্নবিত্ত মানুষগুলো এ ধরনের কিছু সহযোগিতা পেলেও এবার কোথাও কোনো উদ্যোগ দেখা যায় নি। তাই তাদের পাশে দাঁড়াতেই এই আয়োজন করা হয়।
ছাইফুদ্দিন আরিফ শুভ্র বলেন, ‘আমরা একটি পরিবারে থাকা প্রত্যেকটি শিশুকে এই ঈদ সামগ্রী দিয়েছি। ১ থেকে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য আমাদের আয়োজনে ছিল ঈদের পোশাক।’
পাঁচ টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই টাকা রাখা হচ্ছে কারণ, তারা যেন মনে না করে যে, এটা দান করা হয়েছে। নিজের মনকে তারা বোঝাতে পারবে যে, এগুলো তারা ক্রয় করে পেয়েছে।’
এদিকে পাঁচ টাকার অভিনব ঈদ বাজারটি আয়োজক বন্ধুদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত চিকিৎসক, আইন শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তা, শিক্ষক, সরকারি চাকরিজীবী, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশায় থাকা বন্ধুরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বন্ধু মহলের কর্মসূচীতে ৫ টাকা করে যে অর্থ নেয়া হয়েছে তা পরে কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করা হবে বলেও জানিয়েছেন আয়োজকরা।