চলমান কভিড-১৯ মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন উদ্যোগ ‘বিল্ড ব্যাক বেটারের’ জন্য একটি উন্নত পানি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আন্তসীমান্ত নদীর পানি ব্যবস্থাপনায় অববাহিকাভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘টেকসই উন্নয়নের জন্য পানি-সর্বোত্তম ব্যবহার এবং পরবর্তী প্রজন্ম’ প্রতিপাদ্য নিয়ে জাপানের কুমামোটো শহরে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী পানি সম্মেলনে এক ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী এই গুরুত্বারোপ করেন।
বার্তা সংস্থা বাসস শনিবার এসব তথ্য জানিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতার জন্য আমাদের অবশ্যই ভালো অনুশীলন, জ্ঞান এবং প্রযুক্তির সমন্বিত শক্তির বিনিময় ঘটাতে হবে এবং আন্তসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনায় অববাহিকাভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহসহ আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
পানি জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন এবং শান্তির সংস্কৃতি প্রচারের জন্য এটি মৌলিক। কভিড-১৯ মহামারি থেকে ভালোভাবে পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
‘আমাদের যুবকদের অবশ্যই ক্ষমতায়িত করতে হবে, যাতে তারা দক্ষ ও টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক পানি ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব দিতে পারে।’
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি পানিসংক্রান্ত জাতিসংঘ উচ্চপর্যায়ের প্যানেলের সদস্য ছিলাম। তখন ‘কল টু অ্যাকশন’ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
আগামী বছরে ওয়াটার অ্যাকশন দশকের মধ্যমেয়াদি পর্যালোচনা আমাদের অ্যাকশন এজেন্ডা বাস্তবায়নে একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করবে। কুমামোটো ঘোষণা সেই প্রক্রিয়ায় একটি কার্যকর অবদান রাখবে আশা করি।’
এই লক্ষ্যে বাংলাদেশে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার পানি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমগ্র সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। দেশের ৮৫ শতাংশের বেশি মানুষের নিরাপদ পানীয় জল ও উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের অবসান ঘটিয়েছি। পানিবাহিত রোগের বিরুদ্ধে আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা চলছে। আগামী মাস থেকে আমরা রাজধানীতে ২৩ লাখ কলেরা ভ্যাকসিন দেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানিসংক্রান্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, উপকূলীয় পোল্ডার, সবুজ বেষ্টনী, ভাসমান কৃষি, নদী খনন এবং শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্লাবন ভূমি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। আমরা একটি স্থিতিস্থাপক এবং সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি ক্রস-সেক্টরাল বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ তৈরি করেছি। সরকার এই পরিকল্পনার অধীনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংস্থান সংগ্রহের জন্য আগামী মাসে একটি আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনের আয়োজন করছে।’
‘আমরা আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে ভূমি পুনরুদ্ধার ও উঁচু করার জন্য বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত পলির স্তূপ ব্যবহার করার জন্য উন্মুখ।
‘বাংলাদেশও ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রস্তুত রয়েছে।’
পানির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব সম্পর্কে সরকার সচেতন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা ও দেশের কিছু অংশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যেতে দেখা যাচ্ছে। সরকার বৃষ্টির পানি সংগ্রহসহ প্রাকৃতিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছে।’
‘আমরা আমাদের জলাভূমি রক্ষায় প্রতিবেশভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করছি। আমরা আমাদের নদীগুলোকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিই।’