দিনাজপুরের বিরামপুরগামী ট্রেনের টিকিটপ্রত্যাশী রিয়াজুল ইসলাম। ভোররাতে সেহরি খেয়েই টিকেট কাটতে চলে যান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে।
সকাল আটটা থেকে শুরু হয় টিকিট বিতরণ। লাইনে দাঁড়িয়ে রিয়াজুল জানতে পারেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছাড়া টিকিট দেয়া হচ্ছে না।
এ কথা শুনে আকাশ ভেঙে পড়ে দীর্ঘ চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এ ব্যক্তির। উপায় না দেখে লাইনের পেছনে একজনকে বুঝিয়ে নিজের জায়গাটি ঠিক করে দ্রুত বাসায় চলে যান।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বাসা থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এসে আবার লাইনে দাঁড়ান রিয়াজুল। সবশেষ সকাল সোয়া ১০টার দিকে তিনি টিকেট হাতে পান।
ঈদকে সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিন এনআইডি না নিয়ে স্টেশনে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন রিয়াজুলের মতো অনেকে।
কমলাপুর, ফুলবাড়িয়া ও বিমানন্দর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র না আনায় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে অনেককে। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনকে ফোন করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে টিকিট নিয়েছেন।
বিমানবন্দর স্টেশন থেকে টিকেট সংগ্রহকারী সৌরভ বলেন, ‘ভোররাত থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। দীর্ঘক্ষণ লাইনে থেকে টিকিট হাতে পেলাম।’
টিকিট সংগ্রহ করতে কী কী প্রয়োজন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বলতে হয়। একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে চারটি পর্যন্ত টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। বেশি টিকিট নিতে হলে অধিক জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হচ্ছে।’
এবার ঈদে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী। গত বুধবার রেলমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক যাত্রীর জন্য নিজ নিজ পরিচয়পত্র প্রয়োজন। আগের মতো একজনের পরিচয়পত্র দেখিয়ে চারটি টিকিট কিনতে পারবেন না।
‘কেউ যদি তার পরিবারের চার সদস্যের জন্য টিকিট কিনতে যান, তবে তাকে চারজনের পরিচয়পত্রই দেখাতে হবে।’
জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া টিকিট না দেয়ার বিষয়ে কথা হয় ফুলবাড়িয়া স্টেশনের সুপারভাইজার ও রেলওয়ের পরিবহন পরিদর্শক (বাণিজ্যিক) তৌফিকুল আজিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া টিকিট দেয়ার সিস্টেম নাই। টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে টিকিট দিচ্ছি না। পর্যায়ক্রমে এখন থেকে এনআইডি সিস্টেম হবে। এনআইডি দিয়েই টিকিট নিতে হবে।’
রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিনে দেয়া হচ্ছে ২৭ এপ্রিলের টিকিট। ২৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৪ এপ্রিল। ২৯ এপ্রিলের টিকিট কেনা যাবে ২৫ এপ্রিল।
৩০ এপ্রিলের টিকিটের জন্য যেতে হবে ২৬ এপ্রিল। আর ১ মে যারা ভ্রমণ করতে চান, তারা ট্রেনের টিকিট পাবেন ২৭ এপ্রিল।
দেশের পশ্চিমাঞ্চল ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট যারা নিতে চান, তাদের যেতে হচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে গেলে পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট।
ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট যারা নিতে চান, তাদের যেতে হচ্ছে তেজগাঁও স্টেশন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মিলছে মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট।
সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন)।