রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের ঘোষণা অনুযায়ী, রাজধানীর কমলাপুরসহ পাঁচটি রেলওয়ে স্টেশনে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। সে তথ্য জেনে আগের রাত থেকে কমলাপুরে এসে লাইনে দাঁড়ান মাহমুদুল হাসান নামের এক টিকিটপ্রত্যাশী, কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত টিকিটের দেখা পাননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
মাহমুদুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘(শুক্রবার) রাত ৯টায় এসেছি। ভোরে একজনকে দাঁড় করিয়ে রেখে সেহেরি খেয়ে এসেছি।
‘এখন (সকাল সাড়ে ১০টা) পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রয়েছি। সামনে আরও ১০-১৫ জন আছেন। এর পরে হয়তো টিকিট পাব।’
সবচেয়ে বড় ভোগান্তি কী মনে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই যে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এটাই সবচাইতে বড় ভোগান্তি।’
অনলাইনে টিকিট কাটার বিড়ম্বনা নিয়ে মাহমুদুল বলেন, ‘সকাল থেকে অনলাইনে চেষ্টা করেও টিকিট পাইনি। সার্ভারে সমস্যা, ঢোকাই যায় না।
‘একটু পরপর লগআউট হয়ে যাচ্ছে। পরিচিত দুই-একজন অনলাইনে টিকিট পেয়েছেন বলে জেনেছি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘অনেকেই লাইনে না দাঁড়িয়ে কীভাবে যেন টিকেট পেয়ে যাচ্ছেন বুঝে উঠতে পারছি না। মনে হচ্ছে, তারা রেল সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি টিকিট পেয়ে যাচ্ছেন।’
ঈদযাত্রার টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে কমলাপুরে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন মাহমুদুলের মতো অনেকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ট্রেনের টিকিট হাতে পাননি তারা।
তাদের একজন সরকারি বাঙলা কলেজের ছাত্র সুমন আলী। রাজশাহীগামী ট্রেনের ২৭ এপ্রিলের টিকিট কিনতে সকাল ৭টার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে লাইনে দাঁড়ান তিনি। ১০টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে তার মনে হয়েছে, লাইন এগোচ্ছে না টিকিটপ্রত্যাশীদের।
সুমন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজশাহীগামী টিকিট পেতে সকাল ৭টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। মনে হচ্ছে লাইন যেন সরছে না।’
রেলওয়ে স্টেশনে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন অনেক টিকিটপ্রত্যাশী। তাদের একজন ঢাকা পলিটেকনিকের ছাত্র মোহাম্মদ আশরাফুল।
তিনি জানান, ভোর পাঁচটার দিকে এসেছেন কমলাপুরে। রংপুরগামী লালমনি এক্সপ্রেসের অগ্রিম ঈদ টিকেট কাটতে চান।
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হাঁপিয়ে ওঠেন আশরাফুল। তাকে মাটিতে বসে পড়তে দেখা যায়।
টিকিটপ্রত্যাশী কেউ কেউ রাত থেকে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও রেলমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা সকাল ৮টা থেকে।
অনলাইনে টিকিট না পেয়ে কমলাপুরে আসা তেমন একজন হামিদুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গাইবান্ধার টিকিট কাটব বলে অনলাইনে অনেক চেষ্টা করেও পারিনি। শেষ পর্যন্ত ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। লম্বা লাইন শেষ হয়ে কখন কাউন্টারে পৌঁছাতে পারব জানি না।’
জয়পুরহাটের টিকিট কাটতে আসা বিপ্লব বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে আমাদের টিকিট পেতে দেরি হচ্ছে। একের পর এক তাদের লাইনে লোকজন আসছেন।
‘তাদেরকে টিকিট দেয়া হচ্ছে, অথচ আমরা দাঁড়িয়ে আছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা।’
টিকিটপ্রত্যাশীদের এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে স্টেশন মাস্টার আফসার উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রেলের লোকজনকেও যদি টিকিট পেতে হয়, তবুও লাইন ধরতে হবে। লাইনের বাইরে টিকিট পাওয়ার সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের হাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে টিকিট পৌঁছে দিতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। আমরা কালোবাজারি রুখতে তৎপর আছি। বিশৃঙ্খলা ও কালোবাজারি প্রতিহত করতে প্রত্যেকটি লাইনে আমাদের নিরাপত্তাকর্মীরা টহল দিচ্ছেন।’
ঈদের সম্ভাব্য দিন আগামী ৩ মে ধরে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে শনিবার। সে হিসাবে আজ (২৩ এপ্রিল) দেয়া হচ্ছে ২৭ এপ্রিলের টিকিট।
এভাবে ২৪ এপ্রিল দেয়া হবে ২৮ এপ্রিলের টিকিট। ২৫ এপ্রিল কেনা যাবে ২৯ এপ্রিলের টিকিট। ২৬ এপ্রিল দেয়া হবে ৩০ এপ্রিলের টিকিট। ২৭ এপ্রিল বিক্রি হবে ১ মের টিকিট।
৩ মে ঈদ হলে ২৮ এপ্রিল বিক্রি হবে ২ মের ট্রেনের টিকিট।
এবার ঈদযাত্রার সুবিধার্থে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঈদের পর ফিরতি যাত্রা শুরু হবে ৫ মে থেকে। ওই দিনের টিকিট বিক্রি হবে পয়লা মে।