জামালপুরের কৃষকরা একটি মৌসুমে ধান চাষ করে সারা বছরের খাবারের জোগান নিশ্চিত করেন। এবারের মেলান্দহ ও সদর উপজেলার ফসলি জমিতে দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ। এতে মরে যাচ্ছে ব্রি-২৮ জাতের বোরো ধানের পাতা ও শিষ।
কৃষকরা বলছেন, মার্চের শেষ দিকে ক্ষেতগুলোয় হঠাৎ দেখা দেয় ব্লাস্ট রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে সোনালি ধান পরিণত হচ্ছে চিটায়। এতে এক-চতুর্থাংশ ফলন আসছে না ক্ষেতগুলো থেকে।
ব্রি-২৮ জাতের বোরো ধান আবাদ করতে একজন কৃষকের বিঘাপ্রতি খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
কী বলছেন কৃষক
এই এলাকার কৃষক হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এক বিঘা জমিতে ধান লাগাইছিলাম, তা চারের এক ভাগও হবো না। যা খরচ হইছে তার চেয়ে আরও অনেক টেকা লছ (ক্ষতি) জাবো।
‘এইডে মনে করেন যে এহন এই যে কাঁচা ধান, কামলা নিলেও পুষে না। কামলা নিয়ে যা খরচ হবো তা মনে করেন ধান দিয়ে আরও ভরন লাগবো আরও অর্ধেক। এতে মনে করেন আমগোরে লছ।’
একই এলাকার আরেক কৃষক মইনুদ্দি বলেন, ‘এহন আমরা কৃষক মানুষ। আমরা কৃষি কাম কইরেই খাই। এল্লা বোরো ঠোরো নাগাই। এই যে আঠাশ ধান নাগাইছি পুইরে সাফ। খালি চিটে আর চিটে। এখন যে কাম কইরে কামাই কইরে কিনে খামু এই শক্তি আমগোরে নাই। এহন কিবেই (কীভাবে) চলমু কী করমু আল্লাই বঝবো।’
আরেক কৃষানী জবেদা বেগম বলেন, ‘আমার জমিতে ৩৫ মণ ধান হইছিল। ইখেবি কেবল চার মণ পাইছি। কত কামলা গেল। কত সার গেল, বিছন গেল। হিদিকেও ৬০০ টেকার বিষ দিলাম।’
কৃষক মান্না আলী বলেন, ‘আমাদের দেশে বিলের ধান গুইলে আঠাশ ধান। ইবার যে এডা মৃত্যু হইছে, একবারে মইরে গেছেগা। আর এতদিন দেখছি ১০, ১৫ বছর, ৩০ বছরের মধ্যে দেহিনেই যে এত ধান মরছে। মরলেও দেখছি দুইডে-চারডে ক্ষেতের মধ্যে দেখছি মরছে। কিন্তু এই বছর একবারে মৃত্যু।’
ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
আদ্রা ইউনিয়নের কৃষক লাল চান বলেন, ‘আমি তিন-চার বিঘে জমি ধান নাগাইছি, আঠাশ ধান। এইডে বহু প্রকার বিষ দিতাছি। কোনো বিষে কাজ হয় না। এহন আমার ধান সব মইরে-ধইরে সাফ হইতাছে।
‘এই যে বিষ দিতাছি কিছুই কুইলেই না। এহন সরকার যদি আমাদের দিকে না চায় তাইলে আমরা আর বাঁচমু না।’
কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য
জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘দিনে গরম, রাতে শীত আর ভোরে কুয়াশা থাকায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ধান। এটি ছত্রাকজনিত রোগ।
এ রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শের পাশাপাশি ব্লাস্টপ্রবণ হওয়ায় ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে কৃষকদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মৌসুমে পুরো জেলায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাষ হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে।’