বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চন্দ্রিমা ও নিউ সুপার মার্কেট কি ঢাকা কলেজের সম্পত্তি?

  •    
  • ২১ এপ্রিল, ২০২২ ২০:১২

প্রায় চার দশক ধরে ওই জায়গার মালিকানা সিটি করপোরেশনের। তারাই মার্কেট নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা সব নিয়ম মেনে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন।

রাজধানীর নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রায় দুই দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১০ দফা দাবি তুলেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের ‘যৌক্তিক’ দাবিগুলো মেনে নেয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

১০ নম্বরে নিউ মার্কেটসংলগ্ন চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নিউ সুপার মার্কেটের জায়গাকে নিজেদের সম্পত্তি দাবি করে তা ঢাকা কলেজের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিও রয়েছে।

তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধান বলছে, প্রায় চার দশক ধরে ওই জায়গার মালিকানা সিটি করপোরেশনের। তারাই মার্কেট নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা সব নিয়ম মেনে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। ওই জায়গা ঢাকা কলেজের কাছে হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই।

ঢাকা কলেজের প্রধান ফটক

তবে ঢাকা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও দক্ষিণ ছাত্রাবাসের প্রভোস্ট মোহাম্মাদ আনোয়ার মাহমুদের দাবি, চন্দ্রিমা ও নিউ সুপার মার্কেটের জায়গার প্রকৃত মালিকানা ঢাকা কলেজের।

ঢাকা কলেজের ইতিহাসের উল্লেখ রয়েছে কলেজটির ওয়েবসাইটে। এতে দেখা যায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কলেজের ক্যাম্পাস স্থানান্তর হয়েছে।

১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ’ তথা ঢাকা কলেজ। কলকাতার বিশপ রেভারেন্ড ড্যানিয়েল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৮৪৬ সালে ভবনের নির্মাণকাজ শেষে ওই বছরের ২৫ মে ছাত্ররা শিক্ষাজীবন শুরু করেন।

বঙ্গভঙ্গের পর রমনা এলাকা কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নতুন ঢাকায় ১৯০৮ সালে ঢাকা কলেজ স্থানান্তরিত হয়। কার্জন হল ও সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ভবনে পরিচালিত হতো শিক্ষা কার্যক্রম। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা কলেজের নতুন ক্যাম্পাস পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে সরিয়ে নেয়া হয়। তবে ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিকদের পুনর্বাসনের জন্য হাইকোর্টের কলেজ ভবনটি ছেড়ে দিতে হয়। ফলে ঢাকা কলেজ সরিয়ে নেয়া হয় লক্ষ্মীবাজারের ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (বর্তমান সরকারি কবি নজরুল কলেজ)।

১৯৫৫ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে নতুন অবকাঠামোয় শুরু হয় ঢাকা কলেজের কার্যক্রম।

প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকা কলেজের জমির পরিমাণ ১৮.৫৭ একর। এর সামনের দিকে রয়েছে বাগান, লন টেনিস ও বাস্কেটবল খেলার মাঠ। পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে আটটি ছাত্রাবাস ও মসজিদ। কলেজের মূল ভবনের পেছনে এবং ছাত্রাবাসের সামনে রয়েছে দুটি বিশাল খেলার মাঠ ও একটি পুকুর। পূর্ব-দক্ষিণ প্রান্তে শহীদ মিনার, আইসিটি ভবন, উদ্ভিদবিদ্যা ভবন, অধ্যক্ষের বাসভবন ও শিক্ষকদের জন্য একটি আবাসিক ভবনের অবস্থান। এ ছাড়া শহীদ মিনারের পাশেই নির্মিত হয়েছে একটি ১০ তলা অ্যাকাডেমিক ভবন।

ওয়েবসাইটের বিবরণে চন্দ্রিমা মার্কেট ও নিউ সুপার মার্কেটের জায়গাকে নিজেদের সম্পত্তি দাবি করেনি ঢাকা কলেজ। তবে কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মাদ আনোয়ার মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা কলেজ সৃষ্টি থেকেই এই জায়গা (চন্দ্রিমা ও নিউ সুপার মার্কেট) কলেজেরই ছিল। সবই ছিল কলেজ ক্যাম্পাসের জায়গা।

‘এরশাদের আমলে সিটি করপোরেশনের মেয়র মাহমুদুল হাসান এই জায়গা (চন্দ্রিমা ও নিউ সুপার মার্কেট) ঢাকা কলেজের কাছ থেকে ১০০ বছরের লিজ নিয়ে মার্কেট বানিয়ে ফেলেন। পরে সেই মার্কেটের দোকান ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দেয়া হয়।’

রাজধানীর নিউ মার্কেট সংলগ্ন চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট

মোহাম্মাদ আনোয়ার মাহমুদ বলেন, ‘আমরা শিক্ষকরা আরও আগেই এই জমি পেতে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বিশেষ করে নেহাল আহম্মেদ স্যার যখন ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন, তখন আমরা স্যারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকবার এই জমি ফিরে পেতে উদ্যোগ নিই। তবে এটা আসলে একটা জটিল প্রক্রিয়া।

‘এটা পেতে হলে আমাদের আইনগতভাবে যেতে হবে। তাছাড়া এটা সম্ভব না। কারণ এটা সিটি করপোরেশন আমাদের কাছ থেকে নিয়ে মার্কেট বানিয়ে দোকান বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছে। এখন এটা নিতে গেলে দোকানমালিকেরা কোর্টে যাবেন। ওখানে ৪০০ দোকান থাকলে ৪০০ জনই কোর্টে যাবে। এটা একটা দীর্ঘ আইনগত প্রক্রিয়া।’

চন্দ্রিমা মার্কেট ও নিউ সুপার মার্কেটের জমি অতীতে ঢাকা কলেজের আওতাধীন থাকার কোনো নথি অবশ্য দেখাতে পারেননি মোহাম্মাদ আনোয়ার মাহমুদ। তবে তিনি বলেন, ‘এসব নথি রয়েছে ভূমি অফিসে। সেখানে গেলেই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।’

ঢাকা কলেজের এই প্রবীণ শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনা মীমাংসার জন্য গতকালও (বুধবার) যখন আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসি, তখনও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের তখন বলা হয়েছে, এটা পেতে হলে আমাদের আইনগতভাবেই এগোতে হবে। দোকান মালিকেরাও এটি অস্বীকার করেননি। তারা বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে বলেছেন।’

নিউজবাংলা ঢাকা জেলা ভূমি অফিসের নথি যাচাই করতে পারেনি। তবে চন্দ্রিমা ও নিউ সুপার মার্কেটের জায়গা ঢাকা কলেজের কাছে স্থানান্তরের দাবির কোনো যুক্তি দেখছে না ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা নিউ মার্কেটের যতগুলো ব্লক আছে সবই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। একই সঙ্গে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নিউ সুপার মার্কেটের জমির মালিকানাও সিটি করপোরেশনের।’

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা দাবি কীভাবে করলেন সে বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। শুধু বলতে পারি ওসব সম্পত্তি সিটি করপোরেশনের । এটা নিয়ে সন্দেহ থাকলে যে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।’

রাজধানীর নিউ মার্কেট সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেট

দুটি মার্কেটের জায়গা ঢাকা কলেজকে ছেড়ে দেয়ার দাবির আইনি কোনো ভিত্তি নেই বলে দোকানমালিকেরাও মনে করছেন।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভাড়া বা খাজনা দিই সিটি করপোরেশনকে। এরশাদ সাহেব যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তখন সিটি মেয়র ছিলেন মাহমুদুল হাসান। সে সময় মাহমুদুল হাসান সরকারের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে মার্কেট করে আমাদের কাছে দোকান বিক্রি করেছেন।

‘নিউ মার্কেটের যাবতীয় সব বিষয় বা আর্থিক ব্যাপারগুলো মালিকানা সূত্রে এখন দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আমাদের কাছ থেকে বুঝে নেয়।’

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ওরা বললে তো লাভ নেই, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করুক। আরও যদি চায় কলেজ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে যাক। তখন আইনের মাধ্যমে যা হওয়ার তাই হবে।’

দুটি মার্কেটের জমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবির বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কোনো আলোচনা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘না না। কথা বলার সময় পাইনি। তাছাড়া এ বিষয়ে কথা বলারও কিছু নেই। সম্পত্তি তো আমরা লিগ্যালভাবে সিটি করপোরেশন থেকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি।’

অন্যদিকে নিউ সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শহীদ উল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৮৩-৮৪ সালে এরশাদ সরকারের নির্দেশে ভূমি মন্ত্রণালয় ওই জমিটা অধিগ্রহণ করে সিটি করপোরেশনকে হ্যান্ডওভার করে। তারপর সিটি করপোরেশন মার্কেট করে ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দেয়। ১৯৮৪ সালে জমি অধিগ্রহণের পর নিউ সুপার মার্কেটটা তৈরি করা হয়। আর চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট তৈরি হয়েছে আরও পরে।’

এ দুটি মার্কেটের জায়গা ঢাকা কলেজের কাছে হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই বলে তিনিও দাবি করেন।

এ বিভাগের আরো খবর