আমদানি-রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় বেনাপোল বন্দরে জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র পণ্যজট। বন্দরের বাইরে সারি সারি ট্রাক আটকে আছে পণ্য খালাসের অপেক্ষায়।
বন্দরে দীর্ঘদিনের জায়গা সংকটের সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দুর্বল অবকাঠামোর কারণে এই বন্দর ঘিরে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় রাজস্ব আয়ও দিন দিন কমছে বলে জানান কাস্টমস কর্মকর্তারা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন নিউজবাংলাকে জানান, বন্দরে জায়গা সংকটের কারণে আট থেকে দশ দিন ভারতীয় ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। জায়গা সংকটের সমাধান এবং অবকাঠামোর উন্নয়নের একাধিকবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেও সাড়া মেলেনি।
এসব সমস্যার আশু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতি বছর দেশের সিংহভাগ শিল্পকারখানা ও গার্মেন্টস মালামালের পাশাপাশি কেমিক্যাল, মোটর পার্টস, গাড়ির চেসিসসহ বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি হয়ে থাকে দেশের সবচেয়ে বড় এ বন্দর দিয়ে। বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকার মালামাল আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এখানে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়।
যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দেশের স্থল ও রেলপথে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। গত দুই বছর করোনা মহামারির ধকলের পর এ বছর আমদানি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু বন্দরের গুদামে জায়গা সংকটের কারণে চাহিদামতো ট্রাক ঢুকতে পারছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে সার্বিক কার্যক্রম। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট গেট থেকে বন্দরের গোডাউন পর্যন্ত ট্রাকের জট লেগেই থাকছে। এর ফলে ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ করছে দীর্ঘ সময় নিয়ে।বন্দরসংশ্লিষ্টরা জানান, বেনাপোল বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে ভারত অংশে চার-পাঁচ হাজার ট্রাক মালামাল বোঝাই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকছে। ওইসব ট্রাকের মধ্যে দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করার কথা থাকলেও ২৫০ থেকে ৩০০টি বন্দরে প্রবেশ করতে পারে। বাকি ট্রাক ঢুকতে না পারায় আমদানিকারকদের প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রুপি ডেমারেজ দিতে হয়।
বেনাপোল বন্দরের গুদামে জায়গা না থাকায় আমদানি পণ্য আনলোডের অপেক্ষায় ৮-১০ দিন দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ভারতীয় ট্রাকচালকদের। এ কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দরে জায়গা সংকট ও অবকাঠামো নিয়ে অসন্তুষ্ট।
বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, এই বন্দরের ৩৪টি গুদাম ও ৮টি ইয়ার্ড, ২টি ট্রাক টার্মিনাল ও একটি রপ্তানি টার্মিনাল রয়েছে। কোথাও জায়গা খালি নেই। বন্দরে তীব্র পণ্যজট চলছে। বর্তমানে বেনাপোল বন্দরের গুদামের ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পণ্য আমদানি হচ্ছে।
ইন্দো-বাংলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাব কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, বন্দরের শেডগুলোর মালামাল রাখার ধারণ ক্ষমতা ৫৯ হাজার টন। বর্তমানে মাসে দুই লাখ টন মালামাল হ্যান্ডলিং হয়। এ কারণে ভারত থেকে আসা ট্রাক বন্দরে ৮-১০ দিন দাঁড়িয়ে থাকে।
বেনাপোল স্থল বন্দরে ১৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে কমপক্ষে ৩০টি নতুন শেড, হেভি স্টক ইয়ার্ড, কোল্ড স্টোর নির্মাণ জরুরি। এখনই বন্দর সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ায় কনটেইনারের মাধ্যমে মালামাল আসছে, যা হেডলোডে বন্দরে আনলোড হচ্ছে। কমলাপুরের মতো কনটেইনার অপারেশন শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে। এখানে জায়গা অধিগ্রহণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, ‘অন্য সময়ের তুলনায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি কয়েক গুণ বেড়েছে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে আবার গতি ফেরায় আমদানি-রপ্তানিও বেড়েছে। রেলপথেও প্রচুর পণ্য আসছে। এ কারণে পণ্য রাখার স্থান সংকুলান করা যাচ্ছে না।
‘বন্দরে শেড-ইয়ার্ড সংখ্যাও বাড়াতে হবে। এরই মধ্যে জায়গা অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জায়গা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অধিগ্রহণকৃত জায়গায় শিগগিরই ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হলে বন্দরের পণ্যজট অনেকটা কেটে যাবে।’
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে অনুপাতে রাজস্বের উৎস বাড়ছে না। এতে প্রতিবছরই দেখা দিচ্ছে রাজস্ব ঘাটতি। বন্দরের জায়গা বাড়ানোর জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।