‘চাকরির কারণে আমাকে প্রতিদিন বীরগঞ্জে যেতে হয়। সকাল ৮ থেকে দুপুর পর্যন্ত এখানে বসে আছি। একটা বাসও পেলাম না। উল্টো দেখলাম সড়কে বাস রেখে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে বিকল্প যানবাহনেও যেতে পারছি না। যেভাবেই হোক না কেন, অফিসে যেতে হবে। অফিসে যেতে না পারলে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে দিনাজপুর শহরের সরকারি কলেজ মোড়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে বাস না পেয়ে নিউজবাংলাকে কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ওয়াহিদুল ইসলাম।
পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতাকে ‘মারধরের’ বিচার এবং দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর থেকে গ্রেপ্তার ৮ অ্যাম্বুলেন্স চালকের মুক্তির দাবিতে বুধবার মধ্যরাত থেকে জেলার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। দিনাজপুর-রংপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে বাস রেখে ব্যারিকেড দিয়ে রাখেন শ্রমিকরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরের ফুলবাড়ী বাস স্ট্যান্ড, বালুয়াডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড, সুইহারী মোড়, কলেজ মোড়সহ বিভিন্ন সড়কে বাস দিয়ে ব্যারিকেড দেয় শ্রমিকরা।
এছাড়া জেলার বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট ও হাকিমপুরে বাস স্ট্যান্ড ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে একইভাবে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শ্রমিকরা।
এভাবে হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ করে করে দেয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন ওয়াহিদুল ইসলামের মতো আরও অনেক যাত্রী। বাস স্ট্যান্ডে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন, বাস না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
নিউজবাংলাকে যাত্রী আসমা বেগম বলেন, ‘বাচ্চা নিয়ে বাবার বাড়ি যাব। কিন্তু গাড়ি নাই। এই ছোট বাচ্চা নিয়ে কীভাবে যাব সেই চিন্তায় মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে।’
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘১০/১৫ দিন আগে ঢাকা থেকে দিনাজপুর বেড়াতে আসছি। কিন্তু আজ ঢাকায় যাওয়ার জন্য কোচ কাউন্টারে গেলে সেখানে জানানো হয়েছে বাস ও কোচ বন্ধ। এখন বিকল্প যেকোনো ব্যবস্থায় হলেও ঢাকা যেতে হবে।’
আরেক যাত্রী শরিফুল আলম বলেন, ‘জরুরি কাজে বিরামপুর যেতে হবে। কিন্তু বাস বন্ধ। বিকল্প যানবাহনে যেতে চাইলেও যেতে পারছি না। কেননা যে পাশ দিয়ে বিকল্প যানবাহন যাবে, সেই রাস্তায় বাস দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।’
শ্রমিকদের অভিযোগ, বুধবার বিকেলে দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে সিএনজি চালিত অটোরিকশার এক যাত্রীকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে বাসে তুলে নেয় এক বাস হেলপার। এর জেরে অটোরিকশা চালকরা সেই হেলপারকে মারধর করে। বাস স্ট্যান্ড শাখা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাব্লু এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তার মাথায় আঘাত করে চালকরা।
এছাড়া তারা আরও জানান, একই দিন বিকেলে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর থেকে রোগী ও নিহতদের মরদেহ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে কোতয়ালী থানা পুলিশ ৫ অ্যাম্বুলেন্স চালককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
তাদের মুক্তির দাবিতে রাত ১২টায় হাসপাতালের সামনে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে অ্যাম্বুলেন্স রেখে অবরোধ করেন অন্যান্য চালকরা। পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আরও ৩ অ্যাম্বুলেন্স চালককে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
দিনাজপুর জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শ্রমিক নেতাকে মারধরের প্রতিবাদে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। পরে কোতয়ালী থানার ওসি মোজাফ্ফর হোসেন এসে শ্রমিকদের অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ করেন। পরে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়।
‘সন্ধ্যায় থানায় মামলা দিতে গেলে সেখানে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বসায় রেখে ওসি সাহেব আমাদের বলেন, এসপি সাহেবের সঙ্গে কথা না বলে মামলা নিতে পারব না। তখন আমি ওসি সাহেবকে আটক অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ছেড়ে দিতে বলি। তারা অপরাধ করে থাকলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা শ্রমিক ইউনিয়নকে জানাতে পারতেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম। কিন্তু আমাদের না জানিয়ে ৮ জন চালককে ধরে নিয়ে যাবে। মারধর করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সড়কে বৈধভাবে চলাচল করি। অথচ পুলিশ প্রশাসন আমাদের লোকজনকে ধরে নিয়ে যায়। পাগলু ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে এই অবরোধ ও যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছি।’
শ্রমিক নেতার ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং অ্যাম্বুলেন্স চালকদের মুক্তি না দিলে তাদের আন্দোলন কর্মসূচি চলতে থাকবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। তা আমরা গ্রহণ করেছি। তারা কি কারণে আন্দোলন করছে, তা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’