বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শসার কেজি শহরে ৪০ টাকা, গ্রামে ৪

  •    
  • ২১ এপ্রিল, ২০২২ ১১:০৬

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. মতিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলায় চলতি মৌসুমে এক হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। রমজানের শুরুতে কৃষকরা ভালো দাম পেলেও সবমিলিয়ে লোকসান হলে শসা চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারাবে।’

ময়মনসিংহের তারাকান্দা ও ফুলপুর উপজেলায় শসার বাম্পার ফলনে খুশি কৃষকরা। প্রথম দিকে দাম পেলেও হঠাৎ দরপতনে মাত্র ৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে শসা। এরপরও নেই ক্রেতা। উৎপাদিত শসার দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা।

কৃষকদের অভিযোগ, পাইকাররা তাদের কাছ থেকে ৪ টাকা কেজিতে কিনলেও তারা বিক্রি করছেন ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। খুচরাতেও শসার দাম বেশি। তাই কারসাজির মাধ্যমে তাদের ঠকিয়ে লাভবান হচ্ছেন পাইকাররা।

সরেজমিনে তারাকান্দা উপজেলার কাকনি ইউনিয়নের গোয়াতলা শসার বাজার ও ফুলপুর উপজেলার বালিয়া মোড়ে শসা বাজার ঘুরে দেখা যায়, শসার স্তূপ নিয়ে বসে আছেন কৃষকরা। দাম কমে গেলেও ক্রেতা নেই বাজারে। বাধ্য হয়ে ৪ টাকা কেজি দরেই পাইকারদের কাছে শসা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

এ সময় কয়েকজন কৃষক জানান, রমজান মাসের শুরু থেকে প্রতি কেজি শসা তারা ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকাররা ১৬০ টাকা মণ হিসেবে দাম দিচ্ছেন। এতে এক কেজি শসার দাম পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪ টাকা। অথচ শসার দাম সিন্ডিকেটের কবজায় রাখায় বেশি দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন খুচরা ক্রেতারা।

তারাকান্দা উপজেলার পশ্চিম তালদিঘি এলাকার কৃষক আব্দুল বলেন, ‘এবার ৫০ শতক জমিতে শসা চাষ করেছি। পাইকারদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। কিছুদিন ভালো দাম দিয়ে হঠাৎ করে তলানিতে নিয়ে আসে। কৃষকদের কিছু করার থাকে না। এখন বিক্রি না করলে জমিতেই নষ্ট হবে শসা।’

শসার দাম কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে পাইকার মোস্তফা বলেন, ‘ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারসহ শসাগুলো টঙ্গী, গাজীপুর, ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাইকারি বিক্রি করি। যেসব পাইকারের কাছে বিক্রি করি, বর্তমানে তারা জানিয়েছেন শসার বাজার মন্দা। এ জন্য আমরা কৃষকদের কাছ থেকেও ৪ টাকায় কিনে নিচ্ছি।

‘এই শসা ঢাকায় পাঠাতে পরিবহন ও সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টোল দেয়া বাবদ খরচ হয় আরও ৪ টাকা। ঢাকায় পাঠাতে প্রতি কেজিতে মোট খরচ ১০ টাকা। আমরা প্রতি কেজি দেড় থেকে দুই টাকা লাভ করে ঢাকার আড়তে পাঠিয়ে দিই।’

পয়ারী ইউনিয়নের কালিবাড়ী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম এবার ৪০ শতক জমিতে শসা চাষ করেছেন। তিনি জানান, জমি তৈরি, বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক মিলিয়ে উৎপাদন খরচ হয়েছে ৪৮ হাজার টাকা। গত ২০ দিনে ভালো দামে ৪১ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন৷ এখন প্রতি কেজি ৪ টাকায় বিক্রি করছেন৷

তিনি বলেন, শসার দাম ভালো পেলে এবার অনেক লাভ করতে পারতাম। আশা করছি, ঈদের আগে দাম আবার বাড়বে। না বাড়লে বুঝতে হবে, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে কৃষকদের ঠকাচ্ছে। একই কথা বলেন, রামভদ্রপুর গ্রামের চাষি আব্দুর রশিদ।

প্রতি কেজি শসা ৪ টাকা হলেও ক্রেতা নেই বাজারে। ছবি: নিউজবাংলা

ময়মনসিংহ শহরের গাঙ্গিনাড়পাড় এলাকার সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে শসা বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, আড়ত থেকে তারা প্রতি কেজি শসা ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে কেনেন। বাজারে ইজারাদারের খরচ আছে। এ জন্যই এ দামে বিক্রি করছেন। তবে শিল্পাঞ্চল ভালুকা উপজেলায় শসা হাত বদল হয়ে কখনও ৩০ টাকা আবার কখনও ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে বিক্রেতাদের অযুহাত মানতে নারাজ ক্রেতারা। গাঙ্গিনাড়পাড় সবজি বাজারে আসা ক্রেতা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সবকিছুতে আমরা ক্রেতারাই ঠকছি। শক্তিশালী পাইকারি সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে না। সব সময় ঠকবে ক্রেতারা।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. মতিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলায় চলতি মৌসুমে এক হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। রমজানের শুরুতে কৃষকরা বেশ ভালো দাম পেয়েছে।’

তিনি জানান, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে তারাকান্দা, ফুলপুর ও গৌরীপুরে শসার আবাদ বেশি হয়। এ বছর ফুলপুরে শসার আবাদ হয়েছে ৯০ হেক্টর জমিতে।

সবচেয়ে বেশি শসার আবাদ হয়েছে তারাকান্দায়। এ উপজেলায় এবার ২৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তবে সবমিলিয়ে কৃষকদের লোকসান হলে শসা চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারাবে।

এ বিভাগের আরো খবর